Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তে আমরা আনন্দিত: মির্জা ফখরুল

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১২ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্তকে সঠিক বলে মনে করছে বিএনপি। দলটি মনে করে, আরও আগে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে চাপের মুখে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো বিব্রতকর ও অনভিপ্রেত অবস্থায় সরকারকে পড়তে হতো না। রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, আমরা আনন্দিত যে, বিলম্বে হলেও শনিবার রাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ফ্যাসিবাদী সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার দ্রুত করার এবং বিচারকার্য নির্বিঘ্ন করার স্বার্থে ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগ ও তার সঙ্গে যুক্ত সব সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রাসঙ্গিক আইন সংশোধন করে বিচারিক প্রক্রিয়ায় গুম, খুন, নিপীড়ন ও জনগণের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন অপশাসন চালনাকারী, ফ্যাসিবাদী দলের বিচার করার সিদ্ধান্তকে আমরা সঠিক বলে মনে করি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের দাবি মেনে আগেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে চাপের মুখে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো বিব্রতকর ও অনভিপ্রেত অবস্থায় সরকারকে পড়তে হতো না। ভবিষ্যৎ কার্যক্রম পরিচালনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে মনে রাখবেন বলে আমরা আশা করি।

মির্জা ফখরুল বলেন, ১০ ফেব্রুয়ারি আমরা প্রধান উপদেষ্টা সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তার হাতে দেওয়া পত্রে ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসাবে বিচারিক প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসার’ দাবি জানিয়েছিলাম। ১৬ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সর্বশেষ সাক্ষাৎকালেও তার হাতে দেওয়া পত্রে আমরা ‘পতিত ফ্যাসিবাদী দল ও সেই দলীয় সরকারের সঙ্গে যারাই যুক্ত ছিল তাদের বিচার দ্রুত করে দেশের রাজনীতির ময়দানকে জঞ্জালমুক্ত করার’ দাবি জানিয়েছি।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, আলোচনায় আমরা স্পষ্ট করে বলেছিলাম যে, আইনি প্রক্রিয়াতেই ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সম্ভব ও উচিত। বিভিন্ন সভা, সমাবেশে ও আলোচনায় আমরা আমাদের এসব দাবি বারবার উত্থাপন করেছি। উল্লেখযোগ্য যে, আমরা প্রশাসনিক আদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে বলেই বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার পতনের আগ মুহূর্তে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছিল বিএনপি।

মির্জা ফখরুল বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে ভোটাধিকার বঞ্চিত জনগণ তাদের ভোটাধিকার তথা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই ফ্যাসিবাদের পতনের জন্য গুম, খুন, জেল, জুলুম সহ্য করেও অব্যাহত লড়াই করেছে। তাদের সেই দাবি এখনো অর্জিত হয়নি। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিও ক্রমাগত উপেক্ষিত হওয়ায় জনমনে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে সে ব্যাপারে সচেতন হওয়ার জন্য আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

এদিকে হোটেল সোনারগাঁওয়ে চীনা দূতাবাসের একটি অনুষ্ঠানের পর আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান বলেন, আওয়ামী লীগ প্রশ্নে মীমাংসা হয়েছে। জনগণ যা চেয়েছে তাই হয়েছে। আমরা জনগণের মতের ওপর শ্রদ্ধাশীল। এটা আর ইস্যু নয়, এখন বাংলাদেশের ইস্যু ভোট দিতে পারব কী পারব না। রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান প্রয়াত আব্দুল্লাহ আল নোমানের স্মরণসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আগে থেকেই দেশের রাজনীতির জঞ্জাল মুক্ত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আওয়ামী লীগের বিচারের দাবি করে আসছিল বিএনপি। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে যেভাবে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে সরকার, একইভাবে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণায় দেরি হলে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে। স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, বাংলাদেশে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠা করাই প্রধান কাজ অন্তর্বর্তী সরকারের, কিন্তু সেখানে আগ্রহের ঘাটতি রয়েছে।

আ.লীগের বিচারের দাবি বিএনপিই তুলেছিল-সালাহউদ্দিন আহমেদ : আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে রোববার সংবিধান সংস্কার বিষয়ে নাগরিক জোটের অনুষ্ঠানে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, বিএনপি কয়েক মাস আগেই লিখিতভাবে প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছিল, আওয়ামী লীগকে মানবতাবিরোধী ও গণহত্যার দায়ে বিচারের আওতায় আনতে হবে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিএনপি শাহবাগে না যাওয়ার কারণ সম্পর্কে সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা কেন শাহবাগে যাব। আমাদের দাবি তো বহু আগেই লিখিতভাবে প্রধান উপদেষ্টাকে দিয়েছি। তিনি বলেন, আমরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ও গণমানুষের কথাগুলো বলেছিলাম। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নজির আছে যেসব ফ্যাসিবাদী দল গণহত্যার জন্য দায়ী তাদের বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে এসে নিষিদ্ধ করা হয়। এর উদাহরণ সারা পৃথিবীতে আছে। তাই দেরিতে হলেও অন্তর্বর্তী সরকার আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করবে এই ঘোষণা দেওয়ার জন্য স্বাগতম জানাই।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে বলব, বিএনপি এই রকম যেসব পরামর্শ দিয়েছে দেশ ও জনগণের পক্ষে তা যেন যথাসময়ে আমলে নেয়। সরকার ও দেশ পরিচালনায় আমরা সরকারকে সহযোগিতা করব।

সারা দেশের মানুষ ভোট দেওয়ার জন্য উদগ্রীব বলে জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, এজন্য প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানিয়েছি, নির্বাচনের একটা রোডম্যাপ ঘোষণা করতে।

আওয়ামী লীগ ও তাদের অন্যান্য সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে সরকার আরও একটি পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমার মনে হয় এজন্য সরকারকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে কিছুটা সংশোধনী আনতে হবে। কারণ এই আইনে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের কথা বলা আছে। এখানে রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়টি উল্লেখ নেই বলেও জানান সালাহউদ্দিন। আওয়ামী লীগের ডিএনএতে গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক চর্চা নেই বলেও দাবি করেন তিনি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম