কাকরাইলে জবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অবস্থান
লংমার্চে পুলিশের লাঠিপেটা কাঁদানে গ্যাস, আহত ৫০
দাবি আদায় করেই ঘরে ফেরার ঘোষণা * যমুনায় সচিব-উপদেষ্টাদের সঙ্গে শিক্ষক প্রতিনিধিদলের বৈঠক
যুগান্তর প্রতিবেদন ও জবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিতসহ তিন দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের লংমার্চে বাধা দিয়েছে পুলিশ। এ সময় লাঠিপেটা, সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও জলকামান নিক্ষেপে শিক্ষকসহ অন্তত অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার পর যমুনার পার্শ্ববর্তী কাকরাইল মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
এদিকে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত যমুনার পাশে কাকরাইলে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। হামলায় জড়িত পুলিশের বিচার দাবি করেন তারা। বেলা ৩টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিমের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল মন্ত্রণালয়ের সচিব ও উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য যমুনার ভেতরে যান। রাত ৮টার দিকে বৈঠক চলছিল।
আন্দোলনকারী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বুধবার বেলা ১১টার দিকে তিন দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে লংমার্চ শুরু করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। প্রথমে তারা গুলিস্তানে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে এগিয়ে যান। পরে মৎস্য ভবন পার হয়ে কাকরাইল মসজিদের মোড়ে এলেই পুলিশ দ্বিতীয় দফায় বাধা দেয়। এ সময় ব্যারিকেড উপেক্ষা করে আন্দোলনকারীরা সামনে এগোতে গেলে পুলিশ টিয়ার শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও গরম পানি নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পুলিশের হামলায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দিন, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক নাসিরউদ্দিন, ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক বেলাল, সহকারী প্রক্টর নঈম সিদ্দিকি, সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন লিমনসহ অন্তত অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হন। এছাড়া ঢাকা ট্রিবিউনের জবি প্রতিনিধি সোহানুর রহমান, দৈনিক সংবাদের জবি প্রতিনিধি মেহেদী হাসান আহত হন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘জেগেছেরে জেগেছে জবিয়ান জেগেছে, আমার ভাই অনাহারে যমুনা কী করে, এসেছি যমুনায় যাব না খালি হাতে, আমার ভাই আহত কেন, ইন্টেরিম জবাব চাই’-এমন স্লোগান দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল হক বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ লংমার্চে পুলিশ নির্মমভাবে হামলা চালিয়েছে। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে এ ধরনের অমানবিক আচরণের বিচার না হওয়া পর্যন্ত এখান থেকে যাব না। তিনি পুলিশের বিচারের দাবি জানান।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষক-শিক্ষার্থী প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধিদল ৩ দফা দাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) যান। কিন্তু ইউজিসি থেকে আশানুরূপ কোনো ঘোষণা না আসায় ‘লংমার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। ওইদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘জুলাই ঐক্য’ সংগঠনের পক্ষ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দীন বলেন, সরকারের এই কর্মকাণ্ডে আমরা মর্মাহত। আমার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। শতাধিক শিক্ষার্থী আহত। পুলিশের বিচার করতে হবে। ঢাকা মেডিকেল সূত্র জানায়, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ৩৮ জন শিক্ষার্থী আহত হয়ে হাসপাতলে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে মাহাতাব লিমন (২৫) ও সুবর্ণ আস সাইফ (২৬) নামে দুজনকে ভর্তি করা হয়েছে। আহত অন্যরা হলেন-রেদোওয়ান (২৪), আসিফ (২০), রহমান (২২), আকিব (২১), আরিফ (২২), রফিক (২৫), শফিক (২৫), ওমর ফারুক, মেহেদী (২৪), অর্থিব (২১), আপেল (২১), মুজাহিদ (২৩), রায়হান (২৩), ফারুক (২৩), আবু বক্কর (২২), নিউটন (২০), হানিফ (২২), জীবন (২২), শহীদ (২০), রাসেল (২২), জিসান (২২), মাহাতাব (২৩), শহীদ (২৪), রাসেল (২৩), গৌরব (২৫), আব্দুল মান্নান (২২), নাহিদ (২৩), জুয়েল (২৩), মোহন (২৪), মাহবুবুর রহমান (২৮), মাসুমা (২০), সংগ্রাম (২০), বাইতুল (২২), রাজু (২২), ইমন (২২), রাজিব (২২), আকাশ (২২) ও সুবর্ণ (২৩)। অনেকে চিকিৎসা নিয়ে ফের আন্দোলনে অংশ নেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, বেলা ৩টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমিন, ব্যবসায় অনুষদের ডিন মঞ্জুর মোর্শেদ যমুনার সামনে আসেন। এ সময় উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষসহ একটি প্রতিনিধিদল মন্ত্রণালয়ের সচিব ও উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য যমুনায় যান। রাত ৮টার দিকেও তাদের বৈঠক চলছিল।
শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির মধ্যে-আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০% শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর করতে হবে; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করেই অনুমোদন করতে হবে; জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ পরবর্তী একনেক সভায় অনুমোদন করে অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করতে হবে।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম সন্ধ্যার দিকে আন্দোলনে হাজির হয়ে বলেন, জবি শিক্ষার্থীরা বারবার হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এবার শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারীরা আন্দোলনের ফসল নিয়েই ঘরে যাবে। একজন সাবেক জবিয়ান হিসাবে বিভিন্ন আন্দোলনে আমি নিজেও অংশগ্রহণ করেছি। কিন্তু এভাবে ফ্যাসিস্টরাও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করার সাহস পায়নি। এই ধরনের আচরণে ফ্যাসিস্টের ইন্ধন থাকতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম যুগান্তরকে বলেন, তারা লংমার্চ নিয়ে এলে অন্তত ৬ জায়গায় বাধা দেওয়া হয়। কিন্তু সবকিছু উপেক্ষা করে যমুনার সামনে এসে ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢুকতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় নিরাপত্তার স্বার্থেই তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধিদল উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের সঙ্গে আলোচনার জন্য যমুনার ভেতরে অপেক্ষা করছেন।
