Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ক্যাম্পাসে ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যা

প্রতিবাদে উত্তাল ঢাবি

ভিসি-প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি, একদিনের শোক, তদন্ত কমিটি গঠন * থানায় মামলা, গ্রেফতার ৩ জন কারাগারে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন ও ঢাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

প্রতিবাদে উত্তাল ঢাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার প্রতিবাদে বুধবার রাজু ভাস্কর্যের সামনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ -যুগান্তর

গভীর রাতে ছুরিকাঘাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যায় শোক, ক্ষোভ আর প্রতিবাদে বুধবার দিনভর উত্তাল ছিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সহ জেলা-উপজেলায় বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। সাম্য হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে মঙ্গলবার রাতেই শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। তারা বিভিন্ন ছাত্রাবাস থেকে মিছিল নিয়ে রাজপথে নেমে আসেন। সাধারণ শিক্ষার্থী, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীরা হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে মঙ্গলবার রাত এবং বুধবার দিনভর বিক্ষোভ করেন। তারা সকালে ঘেরাও করেন ভিসির বাসভবন। ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খান ও প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবি করেন। এ হত্যার ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একই সঙ্গে একদিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে। আজ বিশ্ববিদ্যালয় শোক দিবস পালন করবে।

এদিকে বুধবার রাত ১০টার দিকে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার ধুকুরিয়াবেড়া ইউনিয়নের সড়াতৈল গ্রামে মা ও দাদির কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন সাম্য। এরআগে তার জানাজায় অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-সহপাঠী, দলীয় নেতাকর্মী ও আত্মীয়স্বজনসহ হাজারো মানুষ। এ সময় অনেকে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। মঙ্গলবার রাত পৌনে ১২টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের কাছে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী এসএম শাহরিয়ার আলম সাম্য (২৫)। এ ঘটনায় একই ইনস্টিটিউটের বায়েজিদ ও রাফি ছুরিকাহত হয়েছেন। স্যার এএফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন সাম্য। জুলাই আন্দোলনে সাম্য সম্মুখসারির যোদ্ধা ছিলেন বলে মন্তব্য করেন এনসিপির নেতারা। সাম্যের গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে। তার বাবার নাম মো. ফখরুল আলম। এদিকে নিহতের বড় ভাই শরীফুল ইসলাম বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতেই শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়। পুলিশ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে গ্রেফতার করে। পরে আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নিহতের বাবার দাবি, তার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এদিকে সাম্য হত্যার প্রতিবাদে আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি চত্বরের সামনে কালো ব্যাজ ধারণ করে অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। 

এছাড়া জুলাই ঐক্য এ হত্যার বিচারসহ তিন দফা দাবিতে আইজিপি বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে। এর আগে বুধবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে সাম্যের লাশের ময়নাতদন্ত হয়। পরে ঢাবি ক্যাম্পাসে নিয়ে আসা হয় লাশ। এ সময় তার সহপাঠী, বন্ধুবান্ধবরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। একে অপরকে সান্ত্বনা দিতে দেখা যায়। বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে ফ্রিজিং অ্যাম্বুলেন্সে লাশ সিরাজগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয়। 

এছাড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ও এনসিপি দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ সাম্যের ঘাতকদের শাস্তির দাবি জানান। জুলাই আন্দোলনে সাম্য সম্মুখসারির যোদ্ধা ছিলেন বলে মন্তব্য করেন। 

সাম্য নিহতের খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাত থেকেই ছাত্রদল, জুলাই ঐক্য ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল এবং ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। একপর্যায়ে তারা ভিসির সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান। বুধবার দুপুরে সাম্য হত্যার বিচার দাবি, ভিসি ও প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ছাত্রদল। সমাবেশে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির সাম্যের খুনিদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে ভিসি ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেন।

ডিএমপির সংবাদ বিজ্ঞপ্তি : বুধবার ঢাকা মহানগর পুলিশ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাম্য মঙ্গলবার রাত পৌনে ১২টায় দুই বন্ধুকে নিয়ে মোটরসাইকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে ক্যাম্পাসে ফিরছিলেন। রমনা কালীমন্দিরের উত্তর পাশে বটগাছসংলগ্ন পুরোনো ফোয়ারার কাছে আসার পর অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জন তাদের মোটরসাইকেল দিয়ে শাহরিয়ারের মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে দুর্বৃত্তদের বাগ্?বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে তারা শাহরিয়ার ও তার বন্ধুদের ইট দিয়ে আঘাত করে। একজন সাম্যকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ডান পায়ের ঊরুর পেছনদিকে আঘাত করে। এতে সাম্য রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে যান। এ সময় দুর্বৃত্তরা সাম্য ও তার বন্ধুদের ভয় দেখানোর পাশাপাশি হুমকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে শাহরিয়ারকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বিক্ষোভ সমাবেশ : বুধবার দুপুরে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল ঢাবি ক্যাম্পাসের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। এ সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির বলেন, সাম্যকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, এ ঘটনা প্রমাণিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আর নিরাপদ নয়। এর আগেও মানসিক ভারসাম্যহীন তোফাজ্জলকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে আমরা দেখেছি। ঢাবি প্রশাসন নিরাপত্তা দিতে চরমভাবে ব্যর্থ দাবি করে তিনি বলেন, প্রক্টর শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তার পদত্যাগ দাবি করছি। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসাবে উপাচার্যও দায় এড়াতে পারেন না। তাই তারও পদত্যাগ দাবি করছি। তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাতে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন। তাই আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। নাসির উদ্দিন বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করছি। অনতিবিলম্বে সাম্যের হত্যার বিচার দাবি করছি। প্রতিটি হল থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের দাবি জানান তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনেও আওয়ামী লীগের অনেক দোসর রয়েছে দাবি করে তাদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি করেন। 

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থী সাম্যকে হত্যার পর এখন পর্যন্ত ভিসি ও প্রক্টরের কাছ থেকে কোনো ধরনের স্পষ্ট বিবৃতি আমরা পাইনি। এই প্রশাসনের দায়িত্ব ছিল সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার নিশ্চিত করা এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিচার করা। কিন্তু এ ব্যাপারে তাদের কোনো স্পষ্ট অবস্থান আমরা দেখতে পাইনি। আমাদের মনে হয়, তাদের দ্বারা কখনো সাম্য হত্যার বিচার করা সম্ভব না। উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমদ খান ও প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদের পদত্যাগ দাবি করে রাকিব বলেন, আমরা আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায় করব। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে যে পদত্যাগের দাবি জানানো হয়েছে, আমরা আশা করব ভিসি ও প্রক্টর স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমরা রাজপথে অবস্থান নিয়ে আমাদের দাবি আদায় করব। হুঁশিয়ারি দিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি বলেন, আগামী দিনে ঢাকাসহ সারা দেশে একজন ছাত্রদল নেতা যদি হামলার শিকার হয়, তাহলে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকাররের পদত্যাগ দাবি করব।

আমার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে : বুধবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গের পাশে বসেছিলেন সাম্যর বাবা ফখরুল আলম। তিনি ছেলের স্মৃতিচারণ করে বলেন-গত পরশু ছেলের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলাম। তখনও সে আমাকে বলল, বাবা তুমি চিন্তা করো না, আমি ভালো আছি। এরপর কাল রাতেই আমার ছেলের মৃত্যুর খবর এলো। তিনি বলেন, আমার ছেলে খুবই শান্ত স্বভাবের ছিল। কারোর সঙ্গে কোনো ঝামেলায় জড়াত না। বিগত আওয়ামী লীগ শাসনামলে সে হলেও থাকতে পারেনি; ওর বড় ভাই ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা ছিল এটাই ছিল তার অপরাধ। ৫ আগস্টের পর সে হলে সিট পেয়েছে। মঙ্গলবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামনে শুধু বাইকে ধাক্কা লাগার মতো তুচ্ছ কারণে এমন ঘটনা তারা ঘটায়নি। ওকে মেরে ফেলার জন্য পরিকল্পিতভাবেই এটি করেছে। আমি আমার ছেলে হত্যার সর্বোচ্চ বিচার চাই। যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো মায়ের বুক খালি না হয়। এ সময় সাম্যর অন্য স্বজন ও সহপাঠীদের আহাজারি আর আর্তনাদে মর্গ এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। বেলা ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে সাম্যর লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। এর আগে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আবুল কালাম। তিনি উল্লেখ করেন, সাম্যর ডান পায়ের রানের পেছনের অংশে কাটা জখম রয়েছে। এ ছাড়া পিঠের মাঝ বরাবর লালচে দাগ রয়েছে। 

থানায় মামলা, গ্রেফতার ৩ : মঙ্গলবার রাতে নিহত সাম্যর মেজো ভাই শরীফুল ইসলাম বাদী হয়ে ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে রাতেই একটি হত্যা মামলা করেছেন। ওইদিন রাতেই শাহবাগ থানা পুলিশ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার তিনজন হলেন-মাদারীপুর সদরের এরশাদ হাওলাদারের ছেলে মো. তামিম হাওলাদার (৩০), কালাম সরদারের ছেলে পলাশ সরদার (৩০) ও ডাসার থানার যতীন্দ্রনাথ মল্লিকের ছেলে সম্রাট মল্লিক (২৮)। তাদের আদালতে হাজির করে কারাগারে রাখার আবেদন করে পুলিশ। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মনসুর বলেন, গ্রেফতার তিনজনই ভাসমান হকার। হত্যার ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এরা জানিয়েছে, তিনজন ফার্মগেটের ফুটপাতে গেঞ্জির ব্যবসা করত। প্রায় ২০ দিন আগে ওই মাদারীপুর থেকে ঢাকায় আসে। ঘটনায় আহত হয়ে দুজন শেরেবাংলা নগর থানা এলাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিল সেখান থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। 

সাম্য হত্যার ঘটনায় তিনজন কারাগারে : ঢাবি ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য (২৫) হত্যা মামলায় গ্রেফতার তিনজন আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জামসেদ এ আদেশ দেন। এদিন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার এসআই তৌফিক হাসান তাদের আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তা মঞ্জুর করে আদেশ দেন। কারাগারে পাঠানো আসামিরা হলেন, মাদারীপুর সদরের এরশাদ হাওলাদারের ছেলে মো. তামিম হাওলাদার (৩০), কালাম সরদারের ছেলে পলাশ সরদার (৩০) ও ডাসার থানার যতীন্দ্রনাথ মল্লিকের ছেলে সম্রাট মল্লিক (২৮)। মঙ্গলবার (১৩ মে) রাতে রাজধানীর রাজাবাজারসহ কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

৭ সদস্যের কমিটি : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিকে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। বুধবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দুর্বৃত্তদের হামলায় সাম্যর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খানকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন-আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ ইকরামুল হক, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক তৈয়েবুর রহমান, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. সিরাজুল ইসলাম এবং ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক মো. আবুল কালাম সরকার। সহকারী প্রক্টর শারমীন কবিরকে কমিটির সদস্য-সচিব করা হয়েছে। ডেপুটি রেজিস্ট্রার (তদন্ত) সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবেন।

শোক ঘোষণা : শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য নিহত হওয়ার ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৫ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) শোক দিবস ঘোষণা করা হয়েছে। এদিন অর্ধদিবস বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন ভিসি অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান তিনি। এর আগে দুপুর ২টার পর সেখানে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। বৈঠক শেষে ভিসি বলেন, শাহরিয়ার আলম সাম্যের স্মৃতির প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানিয়ে আগামীকাল শোক দিবস পালন করবে বিশ্ববিদ্যালয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এদিন অর্ধবেলা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। 

আইজিপিকে স্মারকলিপি : তিন দফা দাবিতে জুলাই ঐক্য পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে। বুধবার বিকালে শাহবাগ থানার ওসি খালিদ মনসুরের হাতে এই স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন ঢাবি শিক্ষার্থী এবি জুবায়ের ও মোসাদ্দেক ইবনে আলী। দাবিগুলো হচ্ছে-সাম্য হত্যার দৃষ্টান্তমুলক বিচার, নিরাপদ ক্যাম্পাস এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দুটি গেট স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে। 

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার স্ট্যাটাস : ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার ঘটনায় নিজের ফেসবুকে আবেগঘন পোস্ট দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। বুধবার দুপুরে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি সাম্য হত্যার বিষয়ে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন। পোস্টে তিনি শুধু একটি প্রাণহানির ঘটনায় দুঃখ প্রকাশই করেননি, বরং গোটা উদ্যান এলাকাকে নিরাপদ করতে নিজের অগ্রণী ভূমিকা পালনের দৃঢ় প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত করেছেন। সাম্যর স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে আসিফ মাহমুদ লিখেছেন, ২০১৯ সালের দিকে ক্যাম্পাসে গেস্টরুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে কিংবা শিক্ষার্থীদের যে কোনো যৌক্তিক দাবির আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে যেসব মুখ সব সময় দেখা যেত, সাম্য তাদের একজন। প্রথমবর্ষ থেকেই সাম্য ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী এবং অসম্ভব ভদ্র একজন ছেলে। সেই ছোট ভাই সাম্য আজ আর আমাদের মাঝে নেই, এটা মেনে নেওয়া সত্যিই কষ্টকর। তিনি জানান, এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে তার অবস্থান স্পষ্ট করে তিনি বলেন, হত্যাকারীদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হবে। তবে শুধু ব্যক্তি নয়, উদ্যানকেন্দ্রিক অপরাধ চক্র, মাদক চক্র এবং উদ্যানের অনিরাপদ পরিবেশও এ ঘটনার জন্য সমানভাবে দায়ী।

মায়ের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত সাম্য : বেলকুচি-চৌহালী (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, বুধবার রাত ১০টার দিকে বেলকুচি উপজেলার ধুকুরিয়াবেড়া ইউনিয়নের সড়াতৈল গ্রামের জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে মা ও দাদির কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন সাম্য। এরআগে সড়াতৈল মাদ্রাসা মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহবুব মোর্শেদ ও বায়েজিদ সুমন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন, সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু ও সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামানসহ সহস্রাধিক মানুষ অংশ নেন। এ সময় সাম্যের বড় ভাই আহসান হাবিব হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকার সাম্যকে নিরাপত্তা দিতে পারেনি। আমরা এই হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানাই। এতে প্রশাসন ব্যর্থ হলে আন্দোলনের মাধ্যমে তা আদায় করতে বাধ্য হব। 

এরআগে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে গ্রামের বাড়িতে সাম্যের লাশবাহী গাড়ি গ্রামে পৌঁছে। এ সময় তাকে শেষবারের মতো দেখতে আশপাশের বহু মানুষ ভিড় করেন। স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে চারপাশ। 

জানা গেছে, সাম্যের মা কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট। সাম্যের বড় চাচা ডা. কাউসার আলম বলেন, মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে জানতে পারি সাম্যকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খুন করা হয়েছে। জানি না কোন অপরাধে আমার ভাতিজাকে হত্যা করা হলো। 

সাম্য হত্যায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে স্থানীয় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, সাম্য উল্লাপাড়া মোমোনা আলী বিজ্ঞান স্কুলের অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। 

পারিবারিক সূত্র জানায়, সাম্যের বাবা ফকরুল আলম ফরহাদ ঢাকার মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকার একটি বহুতল ভবনের সপ্তমতলায় পরিবার নিয়ে থাকেন। গ্রামের বাড়িতে থাকেন সাম্যের চাচারা।


উত্তাল

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম