Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

সাম্য হত্যার বিচার দাবি

ঢাবির ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন বিভিন্ন ভবনে তালা

ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান * একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবন বন্ধ

Icon

ঢাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাবির ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন বিভিন্ন ভবনে তালা

সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাবির ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন বিভিন্ন ভবনে তালা। ছবি: সংগৃহীত

শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার ঘটনায় দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবারও উত্তাল ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। হত্যার প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন এবং ধর্মঘট পালন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এদিন ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। প্রশাসন ঘোষিত অর্ধবেলা শোক প্রত্যাখ্যান করে পূর্ণদিবস ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও ধর্মঘট পালন করে একদল শিক্ষার্থী। এ সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়। ছাত্রদলের কর্মসূচিতে বাইরের কিছু নেতাকর্মীকে অংশ নিতে দেখা গেছে, যা অনেক শিক্ষার্থীর কাছে প্রত্যাশিত নয়। সরেজমিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দেখা যায়, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। বেলা ১টার পর তাদের কর্মসূচি শেষ হয়। অন্যদিকে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ‘সন্ত্রাসবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন এবং ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করে একদল শিক্ষার্থী। কিছু শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগিয়ে দেয়। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তারা (ছাত্রদল ও বাম) এসেই বলেছে কোনো কার্যক্রম চলবে না, সব বন্ধ থাকবে। সবাই বেরিয়ে যান।

ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থানকালে ‘আমাদের অঙ্গীকার, নিরাপদ ক্যম্পাস’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’, ‘ফাঁসি ফাঁসি চাই, হত্যাকারীর ফাঁসি চাই’, ‘খুন হয়েছে আমার ভাই, খুনি তোদের রক্ষা নাই’, ‘সাম্য ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেত দেব না’, ‘ক্যাম্পাসে লাশ পড়ে, প্রশাসন কী করে’সহ নানা ধরনের স্লোগান দেন তারা।

এদিন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, আমাদের আজকের এ কর্মসূচি নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে। আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সিটি করপোরেশন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আমরা আজ দাবি জানাচ্ছি, আগামী দিনে কোনো শিক্ষার্থী যেন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার না হয়, সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, আমাদের ছোট ভাই সাম্যকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে কীভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়, তা আমাদের প্রশ্ন। তিনি বলেন, ‘আমরা ভিসিকে কয়েকবার ক্যাম্পাস নিরাপদ করার জন্য স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু কোনো পদক্ষেপ দেখতে পাইনি?। ক্যাম্পাসে ৫ আগস্টের আগের কয়েক বছরে একটিও খুনের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু ৯ মাসে কীভাবে দুটি হত্যা হয়। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ প্রক্টরকে আজকের পর আর তার পদে দেখতে চাই না। সেই সঙ্গে ভিসির পদত্যাগ দাবি করছি?।’

সমাবেশে শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে এখনো খুনি হাসিনার দোসররা অবস্থান করছেন। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলেছিলাম, আপনারা ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। কিন্তু তারা করেননি?। এরই ফল, আমার ভাই সাম্য হত্যা।’ তিনি বলেন, ‘যারা বিগত ৯ মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে নিরাপদ করতে পারেননি, তাদের পদত্যাগ দাবি করছি।’

এদিকে সাম্যের মৃত্যুতে প্রশাসনের ঘোষিত অর্ধবেলা শোক প্রত্যাখ্যান করে পূর্ণদিবস ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও ধর্মঘট পালন করছে একদল শিক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার ‘সন্ত্রাসবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি পালন করেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল ও বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাদের উপস্থিতি দেখা গেছে। আন্দোলনরতরা এদিন কোনো ক্লাস বা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করা এবং প্রশাসনিক সব কাজ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিও জানিয়েছন তারা।

বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন একাডেমিক ভবন ঘুরে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা কলাভবন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ ভবনে তালা দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদ ও প্রশাসনিক ভবনেও তালা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল ও বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর একদল নেতাকর্মী প্রশাসনিক ভবনে ঢুকে পড়ে। তবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান ভবনে ছিলেন না। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের ধর্ম সম্পাদক শরীফ উদ্দিন সরকার, আন্তর্জাতিক সম্পাদক মেহেদী হাসান, ক্রীড়া সম্পাদক সাইফ উল্লাহ সাইফ, কবি জসীমউদ্দীন হল ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক তানভীর বারী হামিম, সূর্য সেন হলের প্রচার সম্পাদক প্রান্ত মাহমুদ, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের ঢাবি শাখার সংগঠক সীমা আক্তার প্রমুখ।

জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী ও মাস্টার দা সূর্য সেন হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক আবিদ উর রহমান মিশু বলেন, আমাদের দাবি দুটি। ভিসি ও প্রক্টরের পদত্যাগ এবং নিরাপদ ক্যাম্পাস। একই সঙ্গে সাম্যের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

এদিকে সাম্যের নিহতের ঘটনায় উপচার্য (ভিসি) ও প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি গ্রহণ এবং কালো ব্যাজ ধারণ কর্মসূচি পালন করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল ছাড়াও মহানগরের কয়েকটি ইউনিটের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। এ নিয়ে কিছু শিক্ষার্থীর মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাহতাব নামের এক শিক্ষার্থী জানান, ছাত্রদলের কর্মসূচিতে কিছু বাইরের নেতাকর্মীও ছিল, যা তাদের কাছে প্রত্যাশিত নয়।

শাহবাগ থানা থেকে আসা সোহান নামের এক ছাত্রদল কর্মী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের ছাত্রদলের একজন ভাইকে মেরে ফেলা হয়েছে। তিনি জুলাই বিপ্লবের একজন যোদ্ধা ছিলেন। সহকর্মীদের কর্মসূচিতে একাত্মতা জানাতে নিজের তাগিদে এসেছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, শাহরিয়ার আলম সাম্য জুলাই অভ্যুত্থানে সম্মুখসারির যোদ্ধা ছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং গণমাধ্যমে সেটি স্পষ্ট হয়েছে। সাম্যের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যেহেতু কেন্দ্রীয় ছাত্রদল কর্মসূচি দিয়েছে, তাই সাম্যকে ভালোবেসে বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেছে। আগামী দিনগুলোয় আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়েই কর্মসূচি সফল করব।

সাম্য হত্যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম