সাম্য হত্যায় উত্তাল ঢাবি
শাহবাগ থানা ঘেরাও আসামি গ্রেফতারে আলটিমেটাম
ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার প্রতিবাদে ও বিচার দাবিতে শাহবাগ থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার প্রতিবাদে ও বিচার দাবিতে শাহবাগ থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা। ছুটির দিন শুক্রবারও তৃতীয় দিনের মতো এ বিক্ষোভ করেন তারা। এ সময় শিক্ষার্থীরা প্রধান আসামিসহ সব আসামিকে গ্রেফতারে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন। নইলে আবারও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা। সাম্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) শিক্ষার্থী ও এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের নেতা ছিলেন।
শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে কর্মসূচির শুরুতে আইইআর ভবনের সামনে সমবেত হন শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। এতে অন্য বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও যোগ দেন। সেখান থেকে একটি মিছিল নিয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। এরপর দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে রাজু ভাস্কর্য থেকে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে শিক্ষার্থীরা শাহবাগ থানা অভিমুখে যাত্রা করেন এবং থানার সামনে অবস্থান গ্রহণ করেন। এ সময় থানা ফটকে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন এবং সাঁজোয়া যান প্রস্তুত রাখা হলেও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি।
থানা ফটকের সামনে অবস্থানকালে শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’, ‘খুনি কেন বাইরে, প্রশাসন কী করে’, ‘আমার ভাই মরল কেন, শাহবাগ থানা জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কিছুক্ষণ পর শাহবাগ থানার পক্ষ থেকে আলোচনার প্রস্তাব আসে। এ প্রেক্ষিতে আইইআরের চারজন শিক্ষক (অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম, অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, অধ্যাপক ড. শাহ শামীম আহমেদ) এবং চারজন শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রতিনিধিদল তাদের দাবি জানাতে থানার ভেতরে প্রবেশ করে। দীর্ঘ আলোচনা শেষে প্রতিনিধিদলটি বাইরে এসে সাংবাদিকদের সামনে তাদের তিন দফা দাবি তুলে ধরে।
দাবিগুলো হলো-হামলার সিসিটিভি ফুটেজ জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে; প্রকৃত দোষীদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার নিশ্চিত করতে হবে এবং দ্রুত বিচার কার্যকর করতে হবে।
আইইআরের ২৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম মুন্সী বলেন, আমাদের প্রধান ও একমাত্র দাবি সাম্য হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত প্রধান হোতাসহ সব আসামির গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। তিনি উল্লেখ করেন, হত্যার ৭২ ঘণ্টা অতিক্রান্ত হলেও প্রধান আসামি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। উত্থাপিত দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রকৃত জড়িতদের গ্রেফতার করা না হলে তারা আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলেও তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
আইইআর বিভাগের শিক্ষার্থী রাতুল আহমেদ শ্রাবণ বলেন, সাম্য হত্যার প্রধান আসামি এখনো অধরা এবং তাকে গ্রেফতারে কোনো তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। পুলিশ যাদের আটক করেছে, তারা জড়িত থাকলেও তারা মূল হোতা নয়। তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেন প্রধান আসামিকে ধরা হচ্ছে না, এ বিষয়ে পুলিশের কাছে ব্যাখ্যা চাই।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার গভীর রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন ঢাবি শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। সাম্য হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গন উত্তাল। শিক্ষার্থীরা নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছেন।
ছাত্রদলের নতুন প্রতিবাদ কর্মসূচি : ছাত্রদল নেতা ও ঢাবি শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্যের হত্যাকারী সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। শুক্রবার সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক (সহ-সভাপতি পদমর্যাদা) মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির। নতুন কর্মসূচি হলো-রোববার বেলা ১১টায় শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ। একই সঙ্গে সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলের প্রতিবাদ কর্মসূচি।
