অবৈধ ভারতীয়দের নিয়ম মেনে ফেরত পাঠানো হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
বিশেষ প্রতিনিধি, শ্যামনগর থেকে
প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, যেসব ভারতীয় নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে আছে, তাদেরকে ভারতের মতো পুশব্যাক (ঠেলে পাঠানো) করা হবে না। যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ফেরত পাঠানো হবে। শনিবার সুন্দরবন শ্যামনগরে বিজিবির ‘বয়েসিং ভাসমান বিওপি’ উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীসহ বিজিবি সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিজিবির যশোর রিজিয়ন কমান্ডার, খুলনা সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার, নীলডুমুর ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক, আরবিজি কোম্পানির অধিনায়ক, বিজিবির অন্য পদবির কর্মকর্তা ও সৈনিকরা উপস্থিত ছিলেন।
মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, সুন্দরবনের জলসীমানায় বিজিবির যশোর রিজিয়নের আওতাধীন রিভারাইন বর্ডার গার্ড (আরবিজি) কোম্পানির দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় জলসীমান্ত রক্ষায় কাজ করবে বিজিবির নতুন ভাসমান বিওপি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ভারত মান্দারবারি সীমান্ত এলাকা দিয়ে পুশ-ইন করেছিল। সেখানে আমি পরিদর্শন করেছি। ভারতকে আমরা জানিয়েছি, আমাদের কোনো বাংলাদেশি যদি তাদের (ভারতে) ওখানে থেকে থাকে, তাহলে প্রোপার চ্যানেলে পাঠান। কিন্তু তারা সেটা না করে পুশ-ইন করছে। শুক্রবার আপনারা দেখেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সীমান্ত দিয়ে ভারত পুশ-ইনের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু স্থানীয়দের সহযোগিতায় বিজিবি ও আনসার সদস্যরা তা রুখে দিয়েছে। আপনারা সবাই যদি সহযোগিতা করেন, তাহলে ভারত পুশ-ইন করতে পারবে না। বিজিবির সঙ্গে জনগণ ও সাংবাদিক ভাই-বোনদের সহযোগিতা দরকার।
উপদেষ্টা বলেন, ডিপ্লোমেটিক সলিউশনের (কূটনীতিক সমাধান) ইতোমধ্যে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কূটনীতিক সমাধানের জন্য এ বিষয়ে আমাদের অ্যাম্বাসিডর, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানের সঙ্গেও কথা হয়েছে।
প্রতিবেশী রাষ্ট্র উসকানিমূলক পদক্ষেপ নিচ্ছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমার কাছে এটা (পুশ-ইন) ওরকম উসকানি মনে হচ্ছে না। যেহেতু এর আগেও তারা (ভারত) পুশ-ইন করেছিল. অনেক আগে; যে সময় পুশইন করেছিল, সে সময় আমি বিজিবির ডিজি ছিলাম। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে শুনছেন গুজরাটে বাঙালি কলোনির মতো ছিল (বাঙালি বস্তি)। গুজরাটে সেটা ভেঙে দেওয়ার পরেই এটা (পুশ-ইন) শুরু হয়েছে।
রোহিঙ্গা নাগরিক এমনকি ইউএনএসিআরের কার্ডহোল্ডারদেরও পুশ-ইন করা হয়েছে কেন জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এটা আমরা প্রতিবাদলিপি পাঠিয়েছি। এর ভেতর কিছু রোহিঙ্গা চলে আসে। যেসব রোহিঙ্গা আমাদের দেশে ছিল, তাদেরও পাঠিয়েছে আবার ভারতীয় রোহিঙ্গাদেরও পাঠিয়ে দিচ্ছে। এজন্য আমরা এটার প্রতিবাদলিপি পাঠিয়েছি।
মাদক ও দুর্নীতিমুক্ত হলে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে : মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি জানান, দেশে খুনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পেছনে বড় সমস্যা মাদকাসক্তকে দায়ী করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, মাদক আর দুর্নীতি কমাতে পারলে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে। শনিবার বিকালে কোস্ট গার্ড বেইস মোংলায় নবনির্মিত বোট ওয়ার্কশপ ও স্লিপওয়ের উদ্বোধন শেষে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে বোট ওয়ার্কশপ ও স্লিপওয়ের নামফলক উন্মোচন করেন স্বরাষ্ট্র উপেদষ্টা। সমুদ্র পথে কোস্ট গার্ডকে আরও দক্ষ ও শক্তিশালী করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, এ জন্য কোস্ট গার্ড বহরে আরও পাঁচটি বড় ধরনের বোট কেনার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি সেটি হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, নৌপথে নিরাপত্তার জন্য বোট ওয়ার্কশপ ও স্লিপওয়ে কোস্ট গার্ডের পশ্চিম জোনের একমাত্র স্থাপনা। যার মাধ্যমে কোস্ট গার্ডের পাশাপাশি ভবিষ্যতে নৌবাহিনী, বর্ডার গার্ড, মোংলা বন্দর, নৌপুলিশ, বন বিভাগ ও বিআইডব্লিউটির নৌযান মেরামতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা যাবে। এ ছাড়া এই উন্নয়ন কার্যক্রম বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের সক্ষমতা ও পরিষেবার মান বাড়াতে আরও এক মাইলফলক হিসাবে বিবেচিত হবে।
এ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্ম সচিব মু. জসীম উদ্দিন খান, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার এডমিরাল মো. জিয়াউল হক, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী এবং আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, নৌপুলিশ, বন বিভাগ ও মোংলা বন্দরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
