Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

স্থলবন্দরে ভারতের নিষেধাজ্ঞা

কূটনৈতিক তৎপরতায় সমাধানের তাগিদ

২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে ১৫৭ কোটি ডলার, পক্ষান্তরে আলোচ্য সময়ে আমদানি করেছে ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কূটনৈতিক তৎপরতায় সমাধানের তাগিদ

ভারত স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, প্রসেস ফুড (চিপস, বেকারি আইটেম), কার্বোনেটেড বেভারেজ, তুলা ও ঝুট, প্লাস্টিকের সামগ্রী ও ফার্নিচার আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মাসখানেক আগে ভারতীয় সুতা আমদানি বন্ধে বাংলাদেশি সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় দিল্লি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত ও ভারতীয় ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তাই বাংলাদেশকে কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে বিবদমান সমস্যা সমাধানের তাগিদ দিয়েছেন রপ্তানির সঙ্গে জড়িতরা। রোববার একাধিক ব্যবসায়ী যুগান্তরকে এ কথা জানিয়েছেন। 

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতিতে ভারতের পাল্লা ভারী। বাংলাদেশ ভারতে রপ্তানির চেয়ে আমদানি করে বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছে ১৫৭ কোটি ডলার, পক্ষান্তরে আলোচ্য সময়ে আমদানি করেছে ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক ভারতে বাজার দখল শুরু করেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারতে ৫৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। চলতি অর্থবছরে রপ্তানি করেছে ৫৬ কোটি ডলারের পোশাক, প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ১৯ শতাংশ। গত অর্থবছর বাংলাদেশ থেকে ভারতে ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলারের প্লাস্টিক পণ্য, ৩ কোটি ১৩ লাখ ডলারের তুলা ও ঝুট এবং ৬৫ লাখ ডলারের আসবাব রপ্তানি করা হয়। স্থলবন্দর ব্যবহার করে এসব পণ্য বেশি রপ্তানি হতো। 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ নিট পণ্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ভারতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বাজার ক্রমশ বাড়ছে। এ অবস্থায় স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি বন্ধের খবর কিছুটা উদ্বেগ তো বাড়াচ্ছে। যদিও স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে খুব বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় না। তারপরও এ বিষয়ে এখন থেকেই সরকারের মনোযোগ দেওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, ভারতে স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তে তৈরি পোশাক খাতের খুব বেশি সমস্যা হবে না। প্রসেস ফুড ও ফার্নিচার শিল্প বড় ধাক্কা খাবে। কারণ সেভেন সিস্টার্সে বাংলাদেশের প্রসেস ফুডের বড় বাজার তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় কূটনৈতিক পন্থায় ভারতের সঙ্গে আলোচনা শুরু করা উচিত। 

একক প্রতিষ্ঠান হিসাবে ভারতে সবচেয়ে বেশি খাদ্যপণ্য রপ্তানি করে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। এ গ্রুপের পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল যুগান্তরকে বলেন, ভারতে প্রতিবছর প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ অন্তত ৫০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য প্রসেস ফুড, ফার্নিচার ও প্লাস্টিকসামগ্রী রপ্তানি করে। রপ্তানির বাজার প্রতিবছর বাড়ছে। স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত এসব পণ্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে ভারতীয় অংশে বাংলাদেশের পণ্য বোঝাই ট্রাক আটকে দেওয়া হয়েছে। সরকারের উচিত হবে, কূটনৈতিক পন্থায় এ সমস্যার দ্রুত সুরাহা করা। তা না হলে রপ্তানি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ এপ্রিল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় সুতা আমদানি বন্ধ ঘোষণা করে বাংলাদেশ। তবে সমুদ্রপথে সুতা আমদানি চালু রাখা হয়। এর জবাবে ভারত বাংলাদেশ থেকে আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামে ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন (এলসিএস) বা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট (আইসিপি) এবং পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়ী এলসিএসের ফল, কার্বোনেটেড বেভারেজ, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা ও ঝুট, আসবাব রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। 

আখাউড়া স্থলবন্দরে স্থবিরতা : আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামে ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত ও আসবাবপত্র রপ্তানির নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছে। এতে রোববার সকাল থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে মাছ ব্যতীত সব ধরনের পণ্যসামগ্রী ভারতে রপ্তানি বন্ধ হয়ে পড়ে। 

আখাউড়া স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দর দিয়ে নির্দিষ্ট কিছু পণ্য আমদানিতে ভারত সরকারের দেওয়া নিষেধাজ্ঞায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে আখাউড়া স্থলবন্দরের রপ্তানি বাণিজ্য। প্রতিদিন যেখানে অর্ধশতাধিক ট্রাকে বিভিন্ন পণ্য এ পথে ভারতে রপ্তানি হতো, সেখানে নিষেধাজ্ঞার কারণে রোববার আখাউড়া দিয়ে মাত্র ৩ গাড়ি মাছ ভারতের ত্রিপুরায় রপ্তানি হয়েছে। এতে রপ্তানি বাণিজ্যে হঠাৎ স্থবিরতা চলে আসে। বন্দরের ব্যবসায়ীদের মাঝে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে প্রায় ৪২৭ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়। এদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল পর্যন্ত আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে প্রায় ৪৫৩ কোটি টাকার পণ্য ভারতে রপ্তানি হয়। 

আখাউড়া বন্দরের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, ভারতের এ ধরনের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বেনাপোল বন্দরে আটকে আছে তৈরি পোশাক বোঝাই ৩৬ ট্রাক : ভারতের নিষেধাজ্ঞার কারণে বেনাপোল বন্দরে আটকে গেছে তৈরি পোশাক বোঝাই ৩৬ ট্রাক। ভারতের পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, বাংলাদেশ থেকে বেশ কয়েকটি পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারত। যেসব পণ্যের এলসি/টিটি ইতোমধ্যে হয়ে গেছে সেসব পণ্য যাতে আমদানি করা যায় তার জন্য কাস্টমসে আলোচনা চলছে। বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমসবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, ভারত সরকার স্থলবন্দর দিয়ে গার্মেন্টস সামগ্রী আমদানি নিষেধাজ্ঞা জারি করায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। স্থলপথে এসব পণ্য রপ্তানিতে খরচ অনেক কম হতো। সমুদ্র ও বিমানপথে পণ্য রপ্তানিতে খরচ অনেক বেশি হবে। বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার বলেন, এ সংক্রান্ত কোনো চিঠি আমরা পায়নি। পত্র-পত্রিকায় দেখেছি। বেনাপোল বন্দর দিয়ে শনিবার পর্যন্ত সব পণ্য রপ্তানি হয়েছে। তবে রোববার সকাল থেকে অন্য পণ্য রপ্তানি হলেও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, পোশাক জাতীয় পণ্য রপ্তানি হয়নি। বিভিন্নভাবে জানতে পেরেছি ৩০-৩৫ ট্রাক পণ্য এখানে আটকে আছে।


ভারত

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম