Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সংলাপে ড. দেবপ্রিয়

রাজনীতিকরা পালালেও পুরো শক্তিতে আমলারা

Icon

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২০ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রাজনীতিকরা পালালেও পুরো শক্তিতে আমলারা

আওয়ামী লীগের আমলে চোরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল দেশে। তিন শ্রেণির লোক এর সঙ্গে জড়িত। তারা হলেন-আমলা, কিছু ব্যবসায়ী আর রাজনীতিক। ক্ষমতা বদলের পর রাজনীতিকরা পালিয়ে গেছেন, ব্যবসায়ীরা ম্রিয়মাণ (নিস্তেজ); কিন্তু আমলারা পুরো শক্তি নিয়ে পুনরুজ্জীবিত আছেন।

সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাজেটবিষয়ক এক সংলাপে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন। তার মতে, অর্থনৈতিক সংস্কারে বর্তমান সরকারের মনোযোগ কম। দেশের মোট রাজস্ব আয়ের ৭৫ শতাংশই ব্যয় হয় সুদ ও ভর্তুকিতে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দুই ভাগ করা যৌক্তিক। তবে প্রক্রিয়া ঠিক হয়নি।

এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম এ সংলাপের আয়োজন করে। সংলাপের বিষয় ছিল ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২৫-২৬ : নীতি সংস্কার ও জাতীয় বাজেট’। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, দেশ কোনদিকে যাচ্ছে, কেউ জানে না। দেশকে সম্পূর্ণ অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এছাড়াও বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন, গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক এম আবু ইউসুফ প্রমুখ।

আমির খসরু আরও বলেন, অনিশ্চয়তার মাধ্যমে কোনো সরকার আগাতে পারে না। কারণ, কেউ বিনিয়োগ করতে আসবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ওপর দিয়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের জন্য ‘মানবিক করিডর’ এবং চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয় শোনা যাচ্ছে। এটি স্পর্শকাতর এবং দেশের নিরাপত্তা ইস্যু। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া কোনো অরাজনৈতিক বা অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নয়। করিডর ও বন্দর বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই।

আমির খসরু বলেন, এ সরকারের ওপর আমার খুব বেশি প্রত্যাশাও নেই। কারণ, এ ধরনের সরকারের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। তারা জনগণের মেন্ডেট নিয়ে দেশ পরিচালনা করছে না। ফলে পাবলিক ফিডব্যাক (জনগণের প্রতিক্রিয়া), ব্যবসায়ীদের অনুভূতি বুঝতে পারছে না। এ সরকারের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে যেতে যে কাজগুলো করা দরকার, সেটাই করা।

মূল প্রবন্ধে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ। কিন্তু এ খাতের সংস্কারে সরকারের মনোযোগ কম। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছিল সরকার। এরপরই বিভিন্ন পর্যায় থেকে বলা শুরু হলো সরকারের মেয়াদ ৫ বছর হওয়া উচিত।

তিনি বলেন, আমাদের সাধারণ আক্ষেপ হলো-সরকারের পক্ষ থেকে অন্যান্য সংস্কারে যতখানি মনোযোগ দেওয়া হয়, অর্থনৈতিক সংস্কারের ব্যাপারে অতখানি মনোযোগ আমরা দেখি না। এটা একটা বড় ধরনের সমস্যা। তার মতে, অর্থনীতিতে স্বস্তি না থাকলে অন্য কোনো সংস্কার কিন্তু স্বস্তিতে থাকবে না।

ড. দেবপ্রিয় বলেন, তবে এতকিছু অসম্পূর্ণতা বা অসংগতি থাকার পরও বাজেট কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, সেটি চারটি বিষয়ের ওপর অনেকখানি নির্ভর করবে। এর মধ্যে রয়েছে-আমাদের যে ঐক্য প্রক্রিয়ার আলোচনা চলছে এর ফলাফল, নির্বাচন সম্পর্কে একটি নির্দিষ্ট পথরেখা পাওয়া, যে বিচারের কথা বলা হচ্ছে, তা আগে হবে, না পরে হবে এবং শান্তিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা।

তিনি বলেন, এনবিআর দুই ভাগ করা যৌক্তিক। এটা আমাদের শ্বেতপত্রেও এ ধরনের সুপারিশে ছিল। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় করা হয়েছে, সেটা ঠিক হয়নি। আলোচনা ছাড়া পেশাজীবীদের জায়গা সংকুচিত ও অন্যান্য অংশীজনকে নিয়ন্ত্রণে রেখে করা হয়েছে, এটা ঠিক হয়নি। এটাকে এখন ঠিক করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ অর্থনীতিবিদ বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে যদি আমরা পরিসংখ্যান দেখি, তৃতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি কমেছে, ঋণপ্রবাহ তেমন উল্লেখযোগ্য নয়, মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এডিআই) কমেছে এবং পুঁজিবাজারের সব সূচক নিুমুখী। এ অবস্থায় কর্মসংস্থান কীভাবে হবে?

তার মতে, বেকারত্বের হার বেড়েছে ৪ শতাংশের বেশি। শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি হারের চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেশি, অর্থাৎ তাদের প্রকৃত মজুরি কমে যাচ্ছে। তাহলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, এটা এখন জোর দিয়ে বলতে পারছি না। রাজস্ব আয় জিডিপি অনুপাত ১০ শতাংশের নিচে আছে। এটা বাড়াতে হবে। আগামী অর্থবছরেও ১০-এর নিচে থাকছে। পরোক্ষ করের বৃদ্ধির হার বেশি। এর মানে হচ্ছে-সাধারণ মানুষের ওপরই করের বোঝা বাড়ছে।

বাজেটে ব্যয়ের তথ্য উল্লেখ করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, রাজস্ব ব্যয়ের দুটি খাত সবচেয়ে বেশি হচ্ছে-প্রথমটি সুদব্যয় আর দ্বিতীয়টি ভর্তুকি। সুদব্যয় ও ভতুর্কিতে মোট রাজস্ব আয়ের ৭৫ শতাংশ চলে যায়। সরকারের অর্থনীতি পরিচালনা কোনো ঘোষিত নীতিমালার আলোকে হচ্ছে না, তা চলছে অ্যাডহক ভিত্তিতে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার দুর্বলতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য মুদ্রানীতি এখনো প্রতিফলিত হয়নি। ৮ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে এলে আমরা একটা সিগন্যাল পাব। বাংলাদেশে এ মুহূর্তে চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। যুব দারিদ্র্য বাড়ছে, এটা বলা বাহুল্য।

তিনি আরও বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকার এলেও তারা অর্থনৈতিক বৈষম্য মোকাবিলায় যথেষ্ট পদক্ষেপ নিতে পারেনি। যে ফিসক্যাল পলিসি নিয়ে কাজ হচ্ছে, সেটাও কিন্তু গত সরকারের। পুরোনো যে কাঠামো রয়েছে, সেটাকেই ধুয়েমুছে কাজ করা হচ্ছে, সেটা আমাদের পছন্দ হয়নি। টাস্কফোর্সের যে সুপারিশ ছিল, সেটা ধরে যে গতি আসার কথা ছিল, তা আমরা দেখতে পাইনি।

আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ইতিহাসের পরিবর্তন বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সঙ্গে জড়িত। ফলে পুরোনো ও নেতিবাচক ধারণা থেকে বেড়িয়ে এসে দেশের উন্নয়ন ও সক্ষমতা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হতে হবে।

অধ্যাপক এম আবু ইউসুফ বলেন, এবার একটা ভিন্নধর্মী বাজেট হবে বলে আমরা আশা করি। কারণ, বাজেট নিয়ে আগে যারা কথা বলেছে, তারা এখন বাজেট প্রণয়ন করছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে যত কমিটি করেছে শ্বেতপত্র, টাস্কফোর্স ও কমিশন-এসবের প্রতিফলন বাজেটে থাকা উচিত। কিছু প্রতিফলন এর মধ্যে দেখা গেছে, যেমন এবারের বাজেটের আকার কমছে, এডিপির আকার ও প্রকল্পের সংখ্যা কমানো হয়েছে।

নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম