ফেসবুকে ইশরাক হোসেন
একটি দলের প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করাদের পদত্যাগ করতে হবে
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
যারা নিরপেক্ষতা বিসর্জন দিয়ে শুধু একটি দলের প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করেছেন, তাদের অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি করেছেন বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। তিনি বলেছেন, মেয়র-ফেওর কিছুই না; অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কতিপয় ব্যক্তির অন্তরে ক্ষমতার লোভ ও এটি চিরস্থায়ী করার কুৎসিত সত্যটা বের করে আনাটাই আন্দোলনের মুখ্য উদ্দেশ্য। সোমবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন। দীর্ঘ নীরবতার পর তিনি আদালতের রায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ঘিরে নেতাকর্মীদের কর্মসূচি এবং অন্তর্বর্তী সরকার ও এনসিপি নেতাদের সাম্প্রতিক মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে অবশেষে এ পোস্ট দেন। এদিকে মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া গেজেট স্থগিত চেয়ে রিটের ওপর আজ শুনানির জন্য দিন রেখেছেন হাইকোর্ট।
ইশরাক হোসেন বলেন, অনেক সমালোচনা মাথা পেতে নিয়েছি। পিতা-মাতা তুলে গালাগালও চুপ করে সহ্য করে গিয়েছি। কারণ একটাই, এদের চেহারা উন্মোচন করতে হবে। গণতন্ত্রের স্বার্থে, জনগণের ভোটের অধিকারের স্বার্থে। সর্বশক্তি দিয়ে এই সরকার বিএনপির মেয়রকে দায়িত্ব থেকে দূরে রাখার চেষ্টার মধ্য দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কী ভূমিকা পালন করবে, তা ক্লিন কাট (পরিষ্কার) বুঝিয়ে দিল।
তিনি বলেন, কোনো কথা চলবে না; যারা নিরপেক্ষতা শুধু বিসর্জন দিয়েছে নয়, বরং একটি দলের প্রতিনিধির কাজ করেছে, তাদের অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। এরা হাসিনার মতোই বিচারকদের হুমকি দিয়েছে; নির্বাচন কমিশনকে চ্যালেঞ্জ করছে। উচ্চ আদালতে হস্তক্ষেপ করেছে। আমলাতন্ত্র হাসিনার দোসরদের সঙ্গে নিয়ে লম্বা কুচক্রী পরিকল্পনা করছে। একদিন এদের সবার নাম ও পরিচয় প্রকাশ পাবে।
তিনি জানান, হাসিনাকেও বলেছিলাম, কবরটা ঠিক করাই আছে, আল্লাহর হুকুম থাকলে সেখানে হবে ইনশাআল্লাহ। লড়াই শেষ হয়নি। হয় দাবি আদায় করব, নয়তো আল্লাহর নির্ধারিত স্থান মাটির নিচে শায়িত হব। গণতন্ত্রের সঙ্গে, জনগণের ভোটাধিকারের সঙ্গে একচুলও ছাড় দেওয়া হবে না।
এদিকে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ডিএসসিসি মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে তার সমর্থকরা সোমবারও নগর ভবন ‘ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেছেন। এ সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের পদত্যাগ দাবি করেছেন আন্দোলনকারীরা। বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া আন্দোলন শুক্রবার ছাড়া টানা চারদিন একই দাবিতে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন ইশরাক সমর্থকরা। আন্দোলনকারীরা জানান, মেয়র হিসাবে ইশরাক হোসেন শপথ গ্রহণ না করা পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির সবশেষ মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তাতে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে পৌনে দুই লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস। ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করেন। এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। তবে বাধ সেধেছে শপথ পড়ানো নিয়ে। বিষয়টি গড়িয়েছে উচ্চ আদালত এবং আইন মন্ত্রণালয়ে।
মেয়র ঘোষণার গেজেট স্থগিতের রিট শুনানি আজ : ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া গেজেট স্থগিত চেয়ে রিটের ওপর আজ মঙ্গলবার শুনানির জন্য দিন রেখেছেন হাইকোর্ট। সোমবার বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ দিন রাখেন। আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন।
আদালত ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে রায় দেওয়ার পর ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। ওইদিনই মেয়র ঘোষণা করে দেওয়া রায় ও ডিক্রির বিরুদ্ধে আপিল করতে আইনি নোটিশ দেন রফিকুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ নামে দুই ব্যক্তি। নোটিশে গেজেট প্রকাশ এবং ইশরাককে শপথ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয়। পরে মামুনুর রশিদ হাইকোর্টে রিট করেন। রিটে ২৭ মার্চের রায় এবং ২৭ এপ্রিলের গেজেট কেন বেআইনি হবে না এবং ইশরাক হোসেনের শপথ পরিচালনা থেকে বিরত রাখার নির্দেশনা কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে। এ রুল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় রায় ও গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত চাওয়া হয়েছে।
