সুপরিকল্পিতভাবে নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্র চলছে: মির্জা ফখরুল
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২১ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, হাজার হাজার ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে নতুন একটা সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার এবং সত্যিকার অর্থে ফ্যাসিবাদমুক্ত একটি আধুনিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, সেখানেও আমরা দেখি একটা কালো ছায়া এসে দাঁড়িয়েছে। অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া, জনগণের অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করা এবং ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার একটা পাঁয়তারা শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের যৌথ সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এ যৌথ সভা হয়। সভায় থাইল্যান্ডের ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মির্জা ফখরুল ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন।
আবার বিভাজনের রাজনীতি শুরু হয়েছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, এখানে গোত্রে গোত্রে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে পরস্পর মুখোমুখি করার একটা ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত শুরু হয়েছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, কিছু মানুষ যারা সরকারের মধ্যে অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে, অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে বাংলাদেশকে ভিন্নদিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, ভিন্নখাতে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, বিএনপির ওপর সব সময় গুরুদায়িত্ব এসে পড়ে। সেই দায়িত্বটি হচ্ছে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব, বাংলাদেশকে আবার নতুন করে গড়ে তোলার দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব হচ্ছে-শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, আমাদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়া যে স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য কাজ শুরু করেছিলেন, এখন তরুণ নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নতুন স্বপ্নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বাংলাদেশ ও দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলোকে বাস্তবায়িত করার জন্য আজ বিএনপির প্রত্যেক নেতাকর্মীকে অত্যন্ত সজাগ ও সচেতনভাবে তাদের কাজ করতে হবে। যে কোনো ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যেন আর কখনো কেউ কেড়ে নিতে না পারে; বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব কেউ যাতে বিনষ্ট করতে না পারে; বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে কেউ যাতে আর কখনো ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচার দিয়ে দাবায়ে রাখতে না পারে, সেভাবে বিএনপির প্রত্যেক কর্মীকে আজ সেই ভূমিকা পালন করতে হবে। ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকীতে আজ শোক নয়, আমরা শোককে পুরো শক্তিতে পরিণত করতে চাই।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজ যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে, বাংলাদেশকে ১৫ বছর ধরে একটা ফ্যাসিস্ট শাসনের মধ্যে রেখেছিল, তারা আবারও ষড়যন্ত্র করে চলেছে সীমান্তের ওপার থেকে।
জিয়াউর রহমানের শাহাদতবার্ষিকীতে ৮ দিনের কর্মসূচি : সাবেক রাষ্ট্রপতি ও দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ৮ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। এদিন যৌথ সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ২৬ মে থেকে ২ জুন ৮ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। রিজভী বলেন, যেহেতু ৭ জুন কুরবানির ঈদ, সেজন্য আমাদের কর্মসূচি কিছুটা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। ৩০ মে সকাল সাড়ে ১০টায় শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি আলোচনা সভা, দুস্থদের মধ্যে চাল-ডাল-বস্ত্র বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে। শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দুইদিন নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়, গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়সহ সারা দেশে দলীয় কার্যালয়ে বিএনপির পতাকা অর্ধনমিত রেখে কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। বিএনপিসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলো জিয়াউর রহমানকে নিয়ে পোস্টার প্রকাশ করবে। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশের ব্যবস্থা নেবে দলটি। কর্মসূচির মধ্যে আছে ২৯ মে বিকাল ৩টায় রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা, ৩০ মে সকাল সাড়ে ১০টায় শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ এবং মসজিদে মসজিদে গণদোয়া। এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডে দুস্থদের মধ্যে চাল-ডাল ও বস্ত্র বিতরণ করা হবে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি ছাড়াও সারা দেশে জেলা ও উপজেলা-থানা-পৌর ইউনিটগুলোও জিয়াউর রহমানের স্মরণে আলোচনা সভা, দুস্থদের মধ্যে খাবার ও বস্ত্র বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।
যৌথ সভায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
