Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা

করিডর নয়, ত্রাণ পৌঁছাতে সহায়তা করা হবে

করিডর নিয়ে আমাদের সঙ্গে কারও কোনো কথা হয়নি * বাংলাদেশ ছাড়া আমার অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব নেই

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২২ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

করিডর নয়, ত্রাণ পৌঁছাতে সহায়তা করা হবে

ছবি: সংগৃহীত

‘করিডর’ নিয়ে বাংলাদেশ কারও সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি বলে জানিয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই-রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, জাতিসংঘের সাহায্য নিয়ে বাংলাদেশে একটি করিডর দেওয়ার যে গুজব তৈরি হয়েছে, আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলে দিচ্ছি, করিডর নিয়ে আমাদের সঙ্গে কারও কোনো কথা হয়নি এবং কারও সঙ্গে কোনো কথা হবে না। করিডরের বিষয়টা বুঝতে হবে। এটা হচ্ছে একটা ইমারজেন্সি সময়ে দুর্যোগপূর্ণ জায়গা থেকে মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা। আমরা এখানে কাউকে সরাচ্ছি না। যেহেতু আরাকানে সাহায্য-সহযোগিতা অন্যান্য সাপ্লাই রুট দিয়ে সম্ভব হচ্ছে না, জাতিসংঘ আমাদের এইটুকুই বলল যে, কাছেই যেহেতু বর্ডার, তাদের সাহায্য করতে, যাতে ত্রাণগুলো ওপারে নিয়ে যেতে পারে। জাতিসংঘ তার বিভিন্ন সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে রাখাইনের ভেতরে যেসব চ্যানেল আছে, সেটা ব্যবহার করে রাখাইনের জনগণের কাছে মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেবে। বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন। 

আরাকানের যে অবস্থা, তাতে করিডরের কোনো প্রয়োজন নেই-এমন মন্তব্য করে খলিলুর রহমান বলেন, করিডর সৃষ্টি করে লোকজনের যাতায়াতের ব্যবস্থা করার কোনো প্রয়োজনীয়তা এখন নেই। যেটা প্রয়োজন আছে, সেটা হলো ত্রাণ সরবরাহ করা। এটা করতে পারলে সেখানকার পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হবে এবং সেই অবস্থায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা করতে পারব। আরাকানের অবস্থা যতদিন অস্থিতিশীল থাকবে, ততদিন আমরা প্রত্যাবাসন নিয়ে কথা বলতে পারব না। আর প্রত্যাবাসনের কথা বলতে না পারলে প্রত্যাবাসন কৌশলের কথাও বলতে পারব না।

এক প্রশ্নের উত্তরে খলিলুর রহমান বলেন, যার অস্তিত্ব নেই, সে বিষয়ে আলাপ কি করে হয়? যেহেতু জাতিসংঘের যে কার্যক্রম রাখাইনে চলছে সেটা চলা আর সম্ভব না এবং যুদ্ধাবস্থার কারণে মানবিক সহায়তা রাখাইনে নেওয়া যাচ্ছে না। সে কারণে জাতিসংঘ মহাসচিব জানতে চেয়েছেন এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সাহায্য করতে পারে কিনা। আমরা সেটা বিবেচনা করছি। জাতিসংঘের তরফ থেকে আরাকান আর্মিকে জানানো হয়েছে এই সহযোগিতা বিতরণে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা যাবে না, কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না। যুদ্ধের কাজে ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা আরও বলেন, আমাদের তরফ থেকে শঙ্কা হচ্ছে, আরাকানের যে নতুন রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও নিরাপত্তামূলক প্রশাসন তৈরি হয়েছে, সেখানে আমরা রোহিঙ্গাদের অংশগ্রহণের চিহ্ন দেখছি না। আমরা আরাকান আর্মিকে সরাসরি বলেছি, আমরা কোনোরকম অ্যাথনিক ক্লিনজিং (জাতিগত নির্মূল অভিযান) সহ্য করব না। তাদের বলেছি, তারা যদি শুধু রাখাইনদের নিয়ে রাজ্য পরিচালনা করতে চায়, তাহলে তারা হবে একটি বর্ণবাদী রাষ্ট্র। বাংলাদেশ মনে করে, এই সমস্যার একমাত্র সমাধান হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করা। এই কাজ করার সব অপশন আমাদের টেবিলে থাকবে। আমাদের সব কূটনৈতিক ও অন্যান্য প্রচেষ্টা দিয়ে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব। আমরা এই সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে চাই।

ব্যবস্থাপনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে খলিলুর রহমান বলেন, পুরো কন্ট্রোল থাকবে জাতিসংঘের, ওপারে নিয়ে যাওয়ার পরে সেখানকার নিরাপত্তা, সবকিছু তাদের দায়িত্ব। আমাদের দায়িত্ব সীমান্ত পর্যন্ত, সেখানে মাদক পাচার হচ্ছে কিনা, অন্য কিছু হচ্ছে কিনা, সেটা আমরা দেখব। দুই পক্ষ সম্মত হলে, কনফ্লিক্ট কমলেই শুধু আমরা যাব। ত্রাণ সরবরাহের সুযোগ দেওয়া হলে কোন রুটে সেটা হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে মি. রহমান বলেন, দুই পক্ষ, সব পক্ষ যদি রাজি হয়, তাহলে আমরা সবার সঙ্গে বসে সেটা ঠিক করব। এটা শুধু সরকারের নয়, সব অংশীজনের সঙ্গে বসে আমরা সেটা ঠিক করব। এখনো সেই পর্যায়ে আমরা যাইনি। তিনি আরও বলেন, রোগী তো এখনো হাসপাতালে। এসব নিয়ে এখনো আলোচনা শুরু হয়নি।

করিডর ইস্যুতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোনো মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে কোনো মতপার্থক্য নেই। সেনাপ্রধানের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে আমরা এক সমতলে অবস্থান করছি। এ নিয়ে কোনো ফাঁকফোকর নেই। তিনি বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়হীনতার সুযোগ নেই, আর সেনাবাহিনীর সঙ্গে আমি খুব ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি।

২৭ এপ্রিল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে শর্ত সাপেক্ষে মিয়ানমারের বেসামরিক লোকজনের জন্য করিডর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ প্রসঙ্গে খলিলুর রহমান বলেন, ফরেন অ্যাডভাইজারের সঙ্গে আমার রোজ কথা হয়। উনি করিডর শব্দটা বলেই কিন্তু সেটা কারেক্ট করেছিলেন, উনি পাথওয়ে বলেছিলেন। সেটা ছিল স্লিপ অব ট্যাং, সেটা পরে কারেক্ট করেছিলেন, উনি কিন্তু পরে সেটা আর কখনোই বলেননি। যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কারণে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমেরিকা কেন, আমরা কারও চাপের মুখে নেই। কেউ চাপ দিচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সবার সঙ্গে কথা বলছি। তাহলে (চাপ) যেটা নেই, সেটা তো আমি অনুভব করতে পারছি না।

প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই-রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান আরও বলেন, আপনাদের হয়তো মনে আছে, সেপ্টেম্বরে প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে উত্থাপন করেছিলেন এবং জাতিসংঘকে এই ইস্যুতে একটি সম্মেলন আয়োজন করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এতে সাড়া দিয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সচিবালয়ে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। একটি জাতি নিয়ে জাতিসংঘের এমন সম্মেলন আয়োজন বিরল উদাহরণ। দ্বিতীয় যে বিষয় আমরা দেখছি, এই সমস্যার সমাধান কী? আমরা প্রথম থেকেই ভেবেছি এই সমস্যার সমাধান রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন করা। এটিই সমাধান। এই বিষয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে নিরলসভাবে কাজ করেছি। আমি আনন্দিত যে এই বিষয়ে আমরা আন্তর্জাতিক একটা ঐকমত্যে পৌঁছেছি।

অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব নেই : সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান জানান, বাংলাদেশ ছাড়া তার অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব নেই। তিনি বলেন, আমার একটাই নাগরিকত্ব, বাংলাদেশের নাগরিকত্ব। আমি এখানে আসার আগে আমার পরিবারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে থেকেছি। কিন্তু আমার যুক্তরাষ্ট্রের কোনো পাসপোর্ট নেই। বাংলাদেশ ছাড়া আমার অন্য কোনো দেশের নাগরিকত্ব নেই।

ড. খলিলুর রহমান বলেন, শুধু যুক্তরাষ্ট্রে থেকেছি বলে যদি আমাকে বলা হয়, আমি বিদেশি নাগরিক, তাহলে তারেক রহমান সাহেবকেও সেই কথা বলতে হয়। আমি আবেদন করব যে, আপনারা বুঝেশুনে কথা বলবেন। আমাকে যদি ঢিল নিক্ষেপ করেন, তাহলে সেটা কিন্তু অন্যের ওপর গিয়েও পড়তে পারে। আমি যেটা নই আমাকে সেটা বানাবেন না, প্লিজ। তিনি বলেন, পারলে প্রমাণ করেন, আদালতে গিয়ে প্রমাণ করেন। আমার তো একটা অধিকার আছে বাংলাদেশি হিসাবে। সেই অধিকারকে যদি সম্মান না দেন সেটা খুব দুঃখজনক হবে। এগুলো বন্ধ করুন।


জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম