Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

উপদেষ্টা পরিষদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক

রাজপথের উত্তাপ যমুনায়

পদত্যাগ করতে চান ড. মুহাম্মদ ইউনূস: পদত্যাগ না করার অনুরোধ নাহিদের * সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জামায়াতের

কাজী জেবেল কাজী জেবেল

মাসুদ করিম মাসুদ করিম

প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রাজপথের উত্তাপ যমুনায়

পালটাপালটি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজপথ। বিষয়টি নিয়ে চরম অস্বস্তিতে পড়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। চারদিকে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্যের ছায়া পড়েছে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায়। দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সৃষ্ট সংকটের সম্মানজনক সুরাহা না হলে পদত্যাগ করতে চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে আলোচনায় তিনি এ ইচ্ছা প্রকাশ করেন। বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা। এছাড়া ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এ সময় তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে পদত্যাগের মতো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার অনুরোধ জানান। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে তিনি এই আহ্বান জানান। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের আলোচনার মধ্যে বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন সরকারের দুই উপদেষ্টা ও এনসিপি নেতারা। 

বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে দেশের সার্বিক রাজনৈতিক এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা। এতে প্রধান উপদেষ্টা বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয় কী তা উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের কাছে জানতে চান। এ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকাণ্ড এবং তাদের দায়-দায়িত্ব নিয়েও কথা হয়। বৈঠকের পর একাধিক উপদেষ্টা এসব কথা যুগান্তরের কাছে নিশ্চিত করেন। 

জানতে চাইলে এক উপদেষ্টা যুগান্তরকে বলেন, ‘বর্তমানে দেশে যে বিশৃঙ্খল অবস্থা তার অন্যতম প্রধান কারণ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পালটাপালটি কর্মসূচি। এসব কর্মসূচির কারণে জনদুর্ভোগ হচ্ছে। সরকারের নিয়মিত কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো কোনো দায় নিচ্ছে না। সব দায় সরকারের ওপর চাপাচ্ছে।’ অপর এক উপদেষ্টা যুগান্তরকে বলেন, ‘রাজপথে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে উপদেষ্টাদের কিছু করণীয় আছে কিনা তা জানাতে বলেন প্রধান উপদেষ্টা। যদি করণীয় কিছু না থাকে সেটাও জানাতে বলেছেন।’ 

গতকাল উপদেষ্টা পরিষদের সাপ্তাহিক বৈঠক শেষে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সরকারি কর্মকর্তারা সভাস্থল ত্যাগ করেন। এরপর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা অনানুষ্ঠানিক বৈঠক শুরু করেন। এই বৈঠক চলে প্রায় চার ঘণ্টা। এর এক পর্যায়ে উপদেষ্টাদের উদ্দেশে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে আজকেই (বৃহস্পতিবার) পদত্যাগ করব। এই জঞ্জালের দায় আর নিতে চাই না। ইতোমধ্যে যেসব ঘটনা ঘটেছে, সবকিছুর পেছনে রাজনৈতিক ইন্ধন আছে। একাধিক উপদেষ্টা বৈঠকে একটি দলের কথা উল্লেখ করে বলেন-নির্বাচন কমিশনার, পুলিশ সুপার (এসপি) এবং জেলা প্রশাসক (ডিসি)সহ প্রশাসনের অধিকাংশ লোকই তাদের। এ অবস্থায় নির্বাচন দিলে তা হবে একটি সাজানো নির্বাচন। এই সাজানো নির্বাচনের দায় আমরা কেন নেব? এরপর জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের স্ক্রিপ্ট লেখা ও তা রেকর্ড করার আয়োজন শুরু হয়। তবে শেষ পর্যন্ত দু-একজন সিনিয়র উপদেষ্টা আরও দু-একদিন দেখার অনুরোধ করেন। আগামী শনিবার উপদেষ্টা পরিষদের একটি বৈঠক হওয়ার বিষয়ে আলোচনা রয়েছে। 

এদিকে সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনায় রাজপথে পৃথক কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি ও এনসিপি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসাবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের শপথ পড়ানোর দাবিতে তার নেতাকর্মীরা আন্দোলন করে আসছেন কয়েক দিন ধরে। আন্দোলনকারীরা সরকারের ছাত্র প্রতিনিধি স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের পদত্যাগ দাবি করেন। যদিও বৃহস্পতিবার দুপুরে এ কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। এদিকে দুপুরে নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের পদত্যাগ দাবি করে বিএনপি। অপর দিকে এনসিপি নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও জাতীয় সংসদের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে বুধবার নির্বাচন কমিশন এবং বৃহস্পতিবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। দলটি আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে বিএনপিপন্থি আখ্যায়িত করে তাদের পদত্যাগে বাধ্য করার হুঁশিয়ারি দেন। এমন পরিস্থিতির মধ্যে বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদ এ বৈঠক করল। 

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সাক্ষাতের বিষয়ে দলটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও রাজনৈতিক লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। সন্ধ্যা ৭টায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় তাদের সাক্ষাৎকালে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের পর জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, দেশের চলমান পরিস্থিতি, স্যারের পদত্যাগের একটি খবর আমরা আজকে (বৃহস্পতিবার) সকাল থেকে শুনছি। তো ওই বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে স্যারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। প্রধান উপদেষ্টা দেশের চলমান পরিস্থিতিতে কাজ করতে পারবেন না এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, স্যার বলছেন, আমি যদি কাজ করতে না পারি... যে জায়গা থেকে তোমরা আমাকে আনছিলা একটা গণ-অভ্যুত্থানের পর। দেশের পরিবর্তন, সংস্কার.....। কিন্তু যেই পরিস্থিতি যেভাবে আন্দোলন বা যেভাবে আমাকে জিম্মি করা হচ্ছে। আমি তো এভাবে কাজ করতে পারব না যদি রাজনৈতিক দলগুলা তোমরা সবাই একটি জায়গায়, কমন জায়গায় না পৌঁছাতে পারো। প্রধান উপদেষ্টাকে পদত্যাগের মতো সিদ্ধান্ত না নেওয়ার অনুরোধ জানান নাহিদ ইসলাম।


উপদেষ্টা পরিষদ অন্তর্বর্তী সরকার

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম