Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ড. ইউনূসের পদত্যাগ চায়নি বিএনপি

থাকতে না চাইলে বিকল্প বেছে নেবে জনগণ : সালাহউদ্দিন

সরকারের ভেতরে ও বাইরে কয়েকটি চক্র আছে, যারা নির্বাচন চায় না * নির্বাচন, করিডর, চট্টগ্রাম বন্দর ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে সমর্থন করি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

থাকতে না চাইলে বিকল্প বেছে নেবে জনগণ : সালাহউদ্দিন

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। ফাইল ছবি

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ চায় না বিএনপি। তবে তিনি থাকতে না চাইলে বিকল্প বেছে নেবে জনগণ। শুক্রবার যুগান্তরের সঙ্গে আলাপকালে এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। এ সময় জাতীয় নির্বাচন, করিডর, চট্টগ্রাম বন্দর ও চলমান পরিস্থিতি নিয়ে সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছেন বিএনপির এই নেতা। তার অভিযোগ, বিএনপির মতো একটা রাজনৈতিক দল সম্প্রতি কয়েক দফা সময় চেয়েও ড. ইউনূসের সাক্ষাৎ পায়নি। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না। সরকারের ভেতরে ও বাইরে কয়েকটি চক্র আছে, যারা সংসদ নির্বাচন চায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচনের রোডম্যাপের জন্য কয়েকদিন অপেক্ষা করে সরকারকে সহযোগিতা প্রশ্নে করণীয় চূড়ান্ত করবে দল। তিনি আরও বলেন, বিচার ও সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া। নির্বাচিত সরকার বিচার ও সংস্কারের কাজ চালিয়ে নেবে।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকারের মধ্যে একটি নয়, কয়েকটি কর্নার আছে, তারা যতদিন পারে বিলম্বিত করে সরকারকে টেনে নিয়ে যেতে চায়। এবং এ দায়দায়িত্বগুলো প্রধান উপদেষ্টার ঘাড়ে এসে যাচ্ছে। আমরা চেয়েছি নির্বাচনের রোডম্যাপ, উনি (ড. ইউনূস) নিজে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে চান। রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়, এখানে আবেগের কোনো বিষয় নয়। আবেগতাড়িত হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় নয়। আমরা তো ওনার পদত্যাগ চাইনি। আমরা পদত্যাগ চেয়েছি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার, পদত্যাগ চেয়েছি দুইজন ছাত্র প্রতিনিধির, যারা উপদেষ্টা পরিষদে আছেন। তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যেহেতু সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে, তাই তাদের পদত্যাগ চেয়েছি। এখন তারপরও যদি উনি (প্রধান উপদেষ্টা) ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন যে অসুবিধা, থাকতে চান না, তখন জাতি বিকল্প বেছে নেবে। এ পৃথিবীতে কেউ অপরিহার্য নয়।

সরকার ও বিএনপির মধ্যে বোঝাপড়ার ঘাটতি হয়েছে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে যোগাযোগ করেছি আমাদেরকে সকালে হোক, বিকালে হোক বা তার পরের দিন হোক যেন একটু সময় দেন। বিএনপির একটি টিম ওনার সঙ্গে দেখা করবে। আমাদের বক্তব্যগুলো বলব। বিএনপির মতো একটা রাজনৈতিক দল যদি সাক্ষাৎ ৫ দিনেও না পায়, ৬ দিনেও না পায়, এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে। এতে বুঝে নেন সম্পর্ক কেমন যাচ্ছে। আমরা সব সময় সরকারকে সহযোগিতা করতে চেয়েছি; কিন্তু সরকারের কোনো মহল বিএনপিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিপক্ষ হিসাবে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সব কর্মকাণ্ডে আমরা দেখেছি এবং বলতে গেলে আরেকটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ হয়ে কাজ করছে।

করিডর, চট্টগ্রাম বন্দর, নির্বাচন ও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সেনাপ্রধান তার অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। আগ্রহ প্রকাশ করেছেন আগামী জানুয়ারিতে নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করার। সেনাপ্রধানের এমন অবস্থানকে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছে বিএনপি। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সেনাপ্রধান তার আইনি এখতিয়ারের মধ্য থেকে অফিসারদের অ্যাড্রেস করতে পারেন, বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতে পারেন। সেটা আমরা সমর্থন করি। তিনি (সেনাপ্রধান) বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই একটি জাতীয় নির্বাচন করা উচিত। এ কথা সেনাপ্রধান জানুয়ারিতেও বলেছেন বা এর আগেও বলেছেন। তখন তো এ বিষয় নিয়ে এত বিতর্ক হয়নি। সেনাবাহিনী তো অনির্দিষ্টকালের জন্য মাঠে থাকতে পারে না। এটা তো আমাদের জন্য একটা ভালো দিক যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ডেমোক্রেসিতে ফিরতে চায় যথাশীঘ্র সম্ভব। আর আমরা সিভিলিয়ানরা কি সেটা চাই না? উনি (সেনাপ্রধান) দেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হওয়ার মতো কর্মকাণ্ড করতে দেবেন না বলেছেন, সেটা তো ঠিকই আছে। এ বিষয়গুলোয় আমরা ওনার বক্তব্যকে সমর্থন করি। এজন্যই করি যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গণতন্ত্র উত্তরণের জন্য বারবার তাগাদা দিচ্ছে।

বিএনপি মনে করে, ড. ইউনূসকে গোষ্ঠীগত স্বার্থের জন্য কিছু ব্যক্তি দীর্ঘমেয়াদি ক্ষমতায় রাখার তৎপরতা চালাচ্ছে। নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানের পদক্ষেপ তার নমুনা বলে মনে করে দলটি। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকারের ভেতরে ও বাইরে কয়েকটি চক্র আছে, যারা নির্বাচন চায় না। কেউ কেউ চাইলেও অনেকে বিলম্বিত নির্বাচন চায়। তাতে তাদের অনেক স্বার্থ থাকতে পারে। আমরা আরও কয়েকদিন দেখব। সরকারের প্রধান উপদেষ্টার যদি শুভবুদ্ধির উদয় হয়, ভালো। তা না হলে আমাদের পন্থা বেছে নেব।

সালাহউদ্দিন আহমেদ কথা বলেন ইশরাক হোসেনের শপথ আর তার সমর্থকদের কয়েকদিনের টানা আন্দোলন নিয়েও। তিনি বলেন, ওনারা (সরকারের উপদেষ্টারা) বলছেন যে যমুনা ঘেরাও হচ্ছে, অমুক হচ্ছে-তমুখ হচ্ছে। সেই সংস্কৃতি তো ওনারা সৃষ্টি করেছেন। ওনারা অ্যালাউ করেছেন ইতঃপূর্বে আরেকটি রাজনৈতিক দলকে এই কাজ করার জন্য। সুতরাং যথাসময়ে যা করা দরকার, সেটা না করে চাপের মুখে দাবি মেনে নেওয়ার যে একটা সংস্কৃতি ওনারা সৃষ্টি করেছেন, সেজন্য তো এ সরকারই দায়ী।

প্রধান উপদেষ্টা বিএনপি

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম