আজ জাতীয় কবির ১২৬তম জন্মবার্ষিকী
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দ্রোহ, প্রেম ও বিপ্লবী চেতনায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। সাম্য, সম্প্রীতি আর মানবতার কথা রয়েছে যার প্রতিটি লেখায়, তিনি আমাদের জাতীয় কবি। প্রিয়ার ভালোবাসায় বিভোর হয়ে কবি লিখেছিলেন ‘মোর প্রিয়া হবে এসো রানী, দেবো খোঁপায় তারার ফুল’, ঠিক একইভাবে দ্রোহের আগুনে জ্বলে উঠে বিদ্রোহী কবি লিখেছিলেন ‘বল বীর চির উন্নত মম শির’।
আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ দ্রোহ, প্রেম, মানবতার কবি ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী। ১৩০৬ বঙ্গাব্দের এই দিনে তিনি অবিভক্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি ছিলেন একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ ও দার্শনিক। সাহিত্যের সব শাখায় তার বিচরণ থাকলেও তিনি মূলত কবি হিসাবেই সবচেয়ে বেশি পরিচিত। কাজী নজরুল ইসলামের ডাকনাম ছিল ‘দুখু মিয়া’। তিনি গ্রামের স্থানীয় মসজিদে মুয়াজ্জিনের কাজ করতেন। মক্তবে কুরআন, ইসলাম ধর্ম, দর্শন এবং ইসলামি ধর্মতত্ত্ব অধ্যয়ন শুরু করেন। ১৯০৮ সালে বাবার মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল মাত্র নয় বছর। পারিবারিক অভাব-অনটনের কারণে তার শিক্ষাজীবন বাধাগ্রস্ত হয় এবং মাত্র দশ বছর বয়সে জীবিকা অর্জনের জন্য তাকে কাজে নামতে হয়। নজরুল মক্তব থেকে নিম্ন-মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সেই মক্তবেই শিক্ষকতা শুরু করেন। আর্থিক সমস্যায় ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর তাকে আবার কাজে ফিরে যেতে হয়। প্রথমে তিনি যোগ দেন বাসুদেবের কবিদলে। এর পর একজন খ্রিষ্টান রেলওয়ে গার্ডের খানসামা এবং সবশেষে আসানসোলের এম বকসের বেকারিতে কাজ নেন। ১৯১৭ সালের শেষদিকে তিনি সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসাবে যোগ দেন। ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসে কুমিল্লা থেকে কলকাতা ফেরার পথে নজরুল দুটি বৈপ্লবিক সাহিত্যকর্ম সৃষ্টি করেন। এই দুটি হচ্ছে বিদ্রোহী কবিতা ও ভাঙার গান সংগীত। একই সময় তিনি লিখেছিলেন আরেকটি বিখ্যাত কবিতা কামাল পাশা। ১৯২২ সালে তার অমর অজর কাব্য অগ্নিবীণা প্রকাশিত হয়।
নিজের লেখনীর মধ্য দিয়ে অসাম্প্রদায়িকতা, সাম্য, সম্প্রীতি ও মানবতার জয়গান গেয়েছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। সাম্রাজ্যবাদ-উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে, শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে তিনি যেমন বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠকণ্ঠ, তেমনি স্বাধীনতা, অসাম্প্রদায়িকতা ও মানবতার সবচেয়ে উজ্জ্বল শিল্পস্বর।
ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি যেমন সর্বাধিক প্রাসঙ্গিক ছিলেন, তেমনি জুলাই জাগরণও তাকেই অবলম্বন করেছিল। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ২৪ মে কবিকে সপরিবার বাংলাদেশে নিয়ে আসে তৎকালীন সরকার। বাংলা সাহিত্য এবং সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিদ্রোহী কবি নজরুলকে সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৭৬ সালে তৎকালীন সরকার কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি কবিকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাঙালির চেতনার কবি নজরুল। ‘মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই, যেন গোর থেকে মুয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই’ এমন গানের প্রত্যাশা বাস্তবায়নের জন্যই কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয়।
কবির জন্মদিন উদযাপন করতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে থাকছে নানা আয়োজন। জাতীয় পর্যায়ে জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপনে তিন দিনব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় কুমিল্লা ও ঢাকাসহ দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে জন্মজয়ন্তীর অনুষ্ঠানমালা। এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান : কাজী নজরুলের উত্তরাধিকার।’ আজ বিকাল ৩টায় কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এই আয়োজনে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। অনুষ্ঠানে ‘নজরুল পুরস্কার ২০২৩ ও ২০২৪’-এর জন্য মনোনীতদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে এবং পুরস্কারপ্রাপ্ত গুণীজন তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করবেন। আলোচনা, নাচ, গান, আবৃত্তি, নাটকসহ নানা আয়োজনে সাজানো থাকবে তিন দিনের এই আয়োজন।
এছাড়া নানা বর্ণাঢ্য আয়োজনে জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপন করবে বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিককর্মী সংঘ। আজ সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে শুরু হবে দুই দিনব্যাপী নজরুল উৎসব। নজরুলজয়ন্তী উপলক্ষ্যে আজ থেকে দুই দিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ছায়ানট।
