Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

আন্দোলন স্থগিত একদিন

অবরুদ্ধ সচিবালয়ে বিক্ষোভ, অচল প্রশাসন

ভূমিসচিবের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির সঙ্গে কর্মচারী নেতাদের বৈঠক

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অবরুদ্ধ সচিবালয়ে বিক্ষোভ, অচল প্রশাসন

ছবি: সংগৃহীত

সভা-সমাবেশের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ বাতিলের দাবিতে অবরুদ্ধ সচিবালয় ছিল বিক্ষোভে উত্তাল। টানা চতুর্থ দিন বুধবারও সচিবালয়ে প্রায় দিনভর বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের নন-ক্যাডার কর্মকর্ত-কর্মচারীরা। বিকালে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির সঙ্গে বৈঠক শেষে এক দিনের জন্য আন্দোলন স্থগিত করেন কর্মচারী নেতারা। আজ তারা কর্মসূচি পালন করবেন না। নেতারা আংশিক নয়, পুরো অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি জানান। এর আগে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা উপেক্ষা করে আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ, মিছিল ও সমাবেশে অচল হয়ে পড়ে সচিবালয়ের কর্মকাণ্ড। দাপ্তরিক দায়িত্ব ফেলে কর্মচারীরা প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিলে অংশ নেন। সচিবালয়ের বাইরে পরিকল্পনা কমিশনসহ সরকারি বিভিন্ন অফিসে কর্মসূচি পালন করেন কর্মচারীরা। তারাও একযোগে সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ বাতিলের দাবি জানান। এছাড়া ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারাও তাদের কলমবিরতির কর্মসূচি পালন করেন। আজও তাদের কর্মসূচি চলবে। সচিবালয়ে প্রবেশ করতে বাধার মুখে পড়েন বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের সভাপতি ও সাবেক সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার। তিনি তাৎক্ষণিক এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। সচিবালয় বিটে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীদের পূর্বঘোষণা ছাড়াই ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এতে পেশাগত দায়িত্ব পালনে বিড়ম্বনায় পড়েন সংবাদকর্মীরা। ওসমানী উদ্যানের মেইন গেটে ফ্যাসিবাদবিরোধী জুলাই মঞ্চ নামে একটি সংগঠন ‘ফ্যাসিবাদ উৎখাতযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করেছে।

মঙ্গলবার সকাল থেকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), পুলিশের এপিবিএন সদস্য, র‌্যাব, সোয়াটসহ বিভিন্ন বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য সচিবালয়ের ভেতরে অবস্থান নেন। সচিবালয়ের বাইরেও নেওয়া হয় কঠোর নিরাত্তাব্যবস্থা। এর আগে সোমবার রাতে সচিবালয় ও সংলগ্ন এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। এ কারণেই মূলত সচিবালয়ের ভেতর অতিরিক্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়। সব নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যেই বেলা ১১টায় সচিবালয়ের ভেতরে মিছিল বের করেন বাদিউল কবির ও নিজামুল হক। কয়েক শ কর্মচারী মিছিলে যোগ দেন। এর পরপরই মিছিল নিয়ে বের হন নুরুল ইসলাম ও নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে কর্মচারীদের সব সংগঠন। সচিবালয়ের ভেতরে তিন সহস্রাধিক কর্মচারীর মিছিল ও সমাবেশ শুরু হয়। প্রথমে তারা সচিবালয়ের বাদামতলায় সমবেত হলেও পরে অবস্থান নেন জনপ্রশাসন ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নতুন ভবনের সামনে। সেখানেই তারা প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। পরে বেলা ১টার দিকে ভূমিসচিবের নেতৃত্বে কমিটি গঠন ও আলোচনার আশ্বাস পেয়ে কর্মসূচি স্থগিত করে আলোচনার টেবিলে ফিরে যান। এদিকে ফ্যাসিবাদবিরোধী জুলাই মঞ্চ নামে একটি সংগঠন ‘ফ্যাসিবাদ উৎখাতযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করেছে। ফ্যাসিবাদের দোসর সচিবসহ আমলাদের অপসারণের দাবি জানিয়ে তাদের নানা ধরনের স্লোগান দিতে দেখা গেছে। বেলা ১টার দিকে জুলাই মঞ্চের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে দেখা করতে সচিবালয়ে প্রবশে করে।

কর্মচারী নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধানে মঙ্গলবার ছয় সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এএসএম সালেহ আহমেদকে। এর সদস্যরা হলেন যুব ও ক্রীড়া সচিব, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব, স্থানীয় সরকার সচিব এবং লেজিসলেটিভ বিভাগের সচিব।

বেলা আড়াইটার দিকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে কর্মচারী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন কমিটির সদস্যরা। বৈঠক শেষে বিকাল সোয়া ৪টার দিকে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এএসএম সাহেল আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দায়িত্ব পেয়ে আমরা কর্মচারীদের সমস্যা শুনতে এবং চলমান আন্দোলন নিয়ে কথা বলতে বসেছি। কর্মচারীরাও সরকারের অংশ। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা গেলে আন্দোলনের দরকার পড়ে না। তিনি বলেন, কর্মচারীরা সম্প্রতি জারি করা সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ ২০২৫ বাতিল চেয়েছে। আমরা তাদের দাবির বিষয়টি বুধবার মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে অবহিত করব। এ বিষয়ে কী সুপারিশ করবেন-এমন প্রশ্নে ভূমিসচিব বলেন, কর্মচারীরা যা দাবি করেছে বা বলেছে, তাই মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে জানাব। মন্ত্রিপরিষদ সচিব শুনে যে সিদ্ধান্ত দেবেন, পরে সে আলোকে কাজ করব।

এ সময় বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম বলেন, আমরা জারি করা সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ আংশিক নয় বরং সম্পূর্ণ বাতিল চেয়েছি। সচিব স্যার আমাদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। তিনি আরও বলেন, বৈঠকে উপস্থিত অন্যা সচিবরাও আমাদের দাবি যৌক্তিক বলে স্বীকার করেছেন। তাদের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (আজ) কর্মসূচি স্থগিত করা হলো।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কার্যকরী সভাপতি ও সাবেক সচিব মো. আব্দুল খালেক যুগান্তরকে বলেন, আমরা কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনকে সমর্থন করি। আমরা সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবি জানাই। তিনি আরও বলেন, আমরা স্বরাষ্ট্র সচিবের দপ্তরে গিয়ে জানতে পারি তিনি অফিসে নেই। তবে অতিরিক্ত সচিব মাহবুব আলমকে বলে এসেছি সচিবালয়ে দাঙ্গা পুলিশ কেন মোতায়েন করা হলো, এর জবাব দিতে হবে। পুলিশ দিয়ে সরকারি কর্মচারীর ন্যায্য দাবি দমন করা যাবে না।

পরিকল্পনা কমিশনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান : সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ-২০২৫ প্রত্যাহারের দাবিতে মঙ্গলবার পরিকল্পনা কমিশন চত্বরে দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালিত হয়। এখানে সরকারি কর্মচারীরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় তারা কোনো বক্তব্য না দিয়ে শুধু অবস্থান করেন। এতে পরিকল্পনা কমিশন, পরিকল্পনা বিভাগ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মচারীরা অংশ নেন।

বুধবারও ২৫ ক্যাডারের কলমবিরতি অব্যাহত : প্রশাসন ক্যাডারের বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিবাদে দেশব্যাপী ২৫টি ক্যাডারের দুই দিনের কলমবিরতি কর্মসূচি চলছে। কেন্দ্র থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায়ে অভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন প্রশাসন ছাড়া অন্যান্য ক্যাডার কর্মকর্তারা। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। আজও তাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

জারি করা অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারীদের চারটি বিষয়কে অপরাধের আওতাভুক্ত করা হয়।

এগুলো হচ্ছে-সরকারি কর্মচারী যদি এমন কোনো কাজে লিপ্ত হন, যা অনানুগত্যের শামিল বা যা অন্য যে কোনো সরকারি কর্মচারীর মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি করে বা শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি করে, অন্যান্য কর্মচারীর সঙ্গে সমবেতভাবে বা এককভাবে ছুটি ছাড়া বা কোনো যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া নিজ কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকেন বা বিরত থাকেন বা কর্তব্য সম্পাদনে ব্যর্থ হন, অন্য যে কোনো কর্মচারীকে তার কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকতে বা বিরত থাকতে বা তার কর্তব্য পালন না করার জন্য উসকানি দেন বা প্ররোচিত করেন এবং যে কোনো সরকারি কর্মচারীকে তার কর্মে উপস্থিত হতে বা কর্তব্য সম্পাদনে বাধাগ্রস্ত করেন, তাহলে তিনি অসদাচরণের দায়ে দণ্ডিত হবেন। অধ্যাদেশে এসব অপরাধের শাস্তি হিসাবে বলা হয়েছে, দোষী কর্মচারীকে নিুপদ বা নিু বেতন গ্রেডে নামিয়ে দেওয়া, চাকরি থেকে অপসারণ বা চাকরি থেকে বরখাস্ত করার দণ্ড দেওয়া যাবে।

সচিবালয় বিক্ষোভ

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম