ফারুকের মনোনয়ন বাতিল করল ক্রীড়া পরিষদ
ক্রীড়া প্রতিবেদক
প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বৃহস্পতিবার গভীর নিম্নচাপে টানা বৃষ্টিতে জলোচ্ছ্বাস-বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিন আরেকটি নিম্নচাপ মহাঝড়ে রূপ নিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি)। আগের দিন বিসিবির আট পরিচালকের সই করা চিঠি পান যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তাতে বিসিবি সভাপতির প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করা হয়। কাল বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ সাফ জানিয়ে দেন, তিনি পদত্যাগ করবেন না। রাতে নাটকীয় মোড় নেয় পুরো ঘটনা। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এক প্রজ্ঞাপনে ফারুক আহমেদের মনোনয়ন বাতিল করে।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, উপর্যুক্ত বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ ১৩.২ (খ) (৪) মোতাবেক জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ১৯/০৮/২০২৪ তারিখের ৩৪.০৩.০০০০.০০৪.০৩.০২৯-৩০৭৮ সংখ্যক স্মারক মূলে ইতঃপূর্বে মনোনীত পরিচালক ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে বিসিবির আটজন পরিচালক (বর্তমানে সংখ্যাগরিষ্ঠ) অনাস্থা প্রস্তাব দাখিল করায় এবং বিপিএলসংক্রান্ত গঠিত সত্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনায় বিসিবির কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার প্রয়োজনে ফারুক আহমেদের অনুকূলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ইতোপূর্বের মনোনয়ন বাতিল করা হলো। এমতাবস্থায়, এতদসংক্রান্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
একটি বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে, এরই মধ্যে পুরোনো একজন কাউন্সিলরকে সরিয়ে পরিচালক হিসাবে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নাম প্রস্তাব করেছে ক্রীড়া পরিষদ। সরকারের ইচ্ছা আমিনুল ইসলাম বিসিবির সভাপতি হোন। সেজন্য বোর্ডের কাউন্সিলর হওয়া আবশ্যক। সেই লক্ষ্যে ফারুকের মনোয়ন বাতিল করে তার জায়গায় আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ মনোনীত পরিচালক করার এই উদ্যোগ।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি ফারুক আহমেদের সঙ্গে প্রভাবশালী পরিচালক ফাহিম সিনহার দ্বন্দ্ব চলে আসছে শুরু থেকে। সেই দ্বন্দ্ব গড়িয়েছে বহুদূর। ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া আগেরদিন সন্ধ্যায় নিজের বাসায় ডেকে ফারুক আহমেদকে বলেছেন, সরকার তাকে আর এই পদে চায় না। ফারুককে সরালে সেটি হবে বোর্ডে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ। আইসিসির নিয়মের সুস্পষ্ট লংঘন। বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপের প্রমাণ পেলে আইসিসির নিষেধাজ্ঞা অবধারিত। তবে কেউ নিজ থেকে দায়িত্ব ছাড়লে সমস্যা নেই। এদিকে ফারুক কাল জানিয়েছেন, তিনি পদত্যাগ করবেন না। বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘আমি বোর্ড পরিচালকদের দ্বারা নির্বাচিত।’ সরকারের কাছে ফারুক জানতে চান কেন-তিনি পদত্যাগ করবেন? এরই মধ্যে আকরাম খান ছাড়া বাকি আট পরিচালক অনাস্থা জানিয়েছেন বোর্ড সভাপতির প্রতি। বুধবার ওই আট পরিচালকের সই করা চিঠি যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হয়। এদিকে জোর গুঞ্জন, সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলামকে এই পদে বসাতে চায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান বুলবুল জানিয়েছেন, এটাই তার কাজ করার সঠিক সময়। দেশের ক্রিকেটের স্বার্থে যে কোনো দায়িত্ব নিতে তিনি প্রস্তুত। ইতোমধ্যে তিনি তার বর্তমান কর্মস্থল আইসিসি থেকে বিনা বেতনে তিন মাসের ছুটি নেওয়ার প্রক্রিয়া শেষ করেছেন।
বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘উপদেষ্টা বলেছেন, বোর্ডের শীর্ষপদে তিনি পরিবর্তন চান। আমি এ নিয়ে এখনো কিছু ভাবিনি। মাত্রই গতকাল (বুধবার) রাতের ব্যাপার। কিছুটা সময় নিতে চাই।’ ফারুক বিসিবি সভাপতির পদ পেয়েছেন গত বছর ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর। মাত্র নয় মাসের মাথায় তাকে সরানোর তৎপরতা শুরু হলো। বোর্ডের একটি বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে, ফারুককে সরানোর পেছনের কারণ অদ্ভুত। গত বছর সেপ্টেম্বরে ফারুক বিসিবির সভাপতি হওয়ার পর বেশির ভাগ সংবাদ সম্মেলনে ফাহিম সিনহাকে দেখা যেত। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যে তাকে কোথাও দেখা যায়নি। ওই সূত্র জানিয়েছে, ফারুক ও সিনহার দ্বন্দ্ব চরম পর্যায়ে পৌঁছে। একে অপরের দোষ ধরতে মুখিয়ে থাকেন দুজন। এমনকি ফাহিম সিনহা বোর্ডের বিভিন্ন কাগজপত্রের প্রতিটি বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেন। সূত্র জানিয়েছে, ফাহিম সিনহার একজন নিকটাত্মীয় সরকারের উপদেষ্টা। ফারুক আহমেদকে একবার বলা হয়েছিল, তিনি যেন ফাহিম সিনহার সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করেন। তবে সেই সম্পর্কের খুব বেশি উন্নতি হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, সেখান থেকেই পানি এতদূর গড়িয়েছে। বোর্ড পরিচালকদের ভোটে গঠনতন্ত্র মেনেই সভাপতি হয়েছিলেন ফারুক।
এদিকে চলমান নাটকীয় পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আগামীকাল শনিবার বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের সভা স্থগিত করা হয়েছে।
বিসিবির গঠনতন্ত্রে ফারুককে সরানো সরাসরি সরকারের হস্তক্ষেপের শামিল বলে বিবেচিত হবে। গঠনতন্ত্রের ১৩.৩ ধারামতে, ‘পরিচালনা পরিষদের পরিচালকের মৃত্যু, পদত্যাগ, মানসিক ভারসাম্যহীনতা অথবা শৃঙ্খলাজনিত শাস্তি প্রদানের পরিপ্রেক্ষিতে পদ শূন্য হবে। মানসিক ভারসাম্যহীনতার বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে উপযুক্ত মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত থাকতে হবে। শৃঙ্খলাজনিত শাস্তির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিধি অনুসারে নিশ্চিত করতে হবে।’ এর বাইরে ১৫.২ উপ-অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকলে ওই পরিচালকের পদ শূন্য হবে। গঠনতন্ত্রের কোথাও সভাপতি বা কোনো পরিচালককে অপসারণের ক্ষমতা পরিচালনা পরিষদ বা সাধারণ পরিষদকে প্রদান করা হয়নি। গঠনতন্ত্রের ১৩.২(খ) ৪) অনুযায়ী, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ দুজন পরিচালক মনোনীত করতে পারবে। শুধু ব্যক্তিগত পদত্যাগ ব্যতীত সভাপতি বা কোনো পরিচালককে অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নেই। এছাড়া আইসিসি আর্টিকেলের ২.৪ (ডি) স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেছে সরকারের যে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপের কারণে আইসিসি সদস্যপদ সাময়িকভাবে শূন্য হবে। যা ইতোপূর্বে শ্রীলংকা ও জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটে বোর্ডের ওপর সে দেশের সরকারের হস্তক্ষেপের কারণে হয়েছে।
এদিকে বিসিবির দায়িত্ব নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কিনা এ সম্পর্কে জানতে চাইলে জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে বেশ কয়েক দিন আগে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, আমি সার্ভিস দিতে রাজি কিনা। আমি বলেছি, বেশ কিছু জায়গা আছে যেখানে অনেক কিছু করার আছে। তখন আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, দেশে আসব কবে। আমি বলেছিলাম, ব্যক্তিগত কাজে কদিন পর আমার দেশে আসার কথা। আমাকে পরিচালক হওয়ার কথা বলা হয়েছিল, সভাপতির বিষয়ে কোনো কথা হয়নি।’
