দ্ধি পেয়েছে নদ-নদীর পানি। নৌ চলাচল বন্ধ রয়েছে অনেক জেলায়
গভীর নিম্নচাপে টানা বর্ষণ জলোচ্ছ্বাস-বন্যার আশঙ্কা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন গভীর নিম্নচাপটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে সাগরদ্বীপ ও খেপুপাড়ার নিকট দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করছে। বৃহস্পতিবার বিকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক বুলেটিনে এমনটাই বলা হয়েছে। এই সময় সব সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে। রয়েছে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশিরভাগ এলাকায় টানা বর্ষণ হয়েছে। এতে বৃদ্ধি পেয়েছে নদ-নদীর পানি। নৌ চলাচল বন্ধ রয়েছে অনেক জেলায়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মো. বজলুর রশিদ স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারি বৃষ্টিপাতের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে আরও ঘনীভূত হতে পারে। এর প্রভাবে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট, ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।
অতি ভারি বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন ও কক্সবাজার জেলাগুলোর পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে। সেইসঙ্গে ভারি বর্ষণজনিত কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কোথাও কোথাও অস্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে।
বৈরী আবহাওয়ার কারণে বরিশাল থেকে সব অভ্যন্তরীণ নৌপথে লঞ্চ চলাচল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। পাশাপাশি, মধ্যাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটেও লঞ্চ চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীসাধারণ, বিশেষ করে ঘরমুখো মানুষ ও শ্রমজীবী যাত্রীরা।
ছয় জেলায় বন্যার শঙ্কা : দেশের ছয় জেলায় বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। আজ ও আগামীকালের মধ্যে এসব এলাকার নদ-নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে একই নদীর আশপাশের নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। বৃহস্পতিবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এসব তথ্য জানিয়েছে। কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, ছয় জেলা হচ্ছে ফেনী, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ এবং নেত্রকোনা। ভারি বৃষ্টিতে সব নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে।
দক্ষিণাঞ্চল : ভোলা, হাতিয়া, সন্দ্বীপ, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ উপকূলজুড়ে ভারি বর্ষণ ও দমকা হাওয়া বয়ে যাওয়াসহ বিরূপ আবহাওয়া বিরাজ করছে। ফলে সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর ও নদীবন্দরগুলোকে ২ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে বাঁধ, রাস্তা ও ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিসের (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা মাহাবুবা সুখি জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৪২ দশমিক ৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। পটুয়াখালী নৌ-বন্দর কর্মকর্তা জাকী শাহারিয়ার জানান, নদীতে সব ধরনের ছোট আকারের লঞ্চ, মাছ ধরার ট্রলার ও স্পিডবোড বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
টেকনাফ ও কুতুবদিয়া (কক্সবাজার) : টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করেছে টেকনাফ উপজেলা প্রশাসন। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যান ফয়েজ জানান, দ্বীপে যাতায়াত বন্ধ হওয়ায় কিছুটা নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে বাজারে। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ এহসান উদ্দীন জানান, টেকনাফে আটকা পড়া সেন্টমার্টিনের মানুষগুলো হোটেল অথবা আত্মীয়স্বজনের বাসায় অবস্থান করলে কোনো সমস্যা নেই। কুতুবদিয়ায় সাগরে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পাঁচ-ছয় ফুট পানি বেড়ে গেছে। এতে আলী আকবর ডেইল বায়ু বিদ্যুৎ এলাকায় বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে বেশ কয়েকটি গ্রাম।
কুয়াকাটা, গলাচিপা-দক্ষিণ ও রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) : পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে পর্যটন কেন্দ্র। লঘুচাপে সমুদ্রের পানির স্তর বেড়ে নদ-নদীগুলোর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছেছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহআলম জানিয়েছেন।
ভোলা ও মনপুরা : ঝড়বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। নদীতে পানির চাপ বেড়েছে। প্লাবিত হয়েছে জেলা সদরের চর চটকীমারা, চরফ্যাশনের ঢালচর, কুকরিমুকরি, মনপুরার কলাতলির চর। এসব চরে জোয়ারের চেয়ে ৩ ফুট পানি হয়েছে। ভোলা-ঢাকা ও ভোলা-বরিশালসহ অভ্যন্তরীণ সব রুটের লঞ্চ ও ফেরি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।
বরিশাল : একাধিক সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। বুধবার সকাল থেকে বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলোর ১২টি পয়েন্টের মধ্যে ৬টি পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এমন বৈরী আবহাওয়ার কারণে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ সব রুটে ছোট লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বিআইডব্লিউটিএ।
আমতলী (বরগুনা) : তলিয়ে গেছে আউশের ধানের বীজতলা, মাছের ঘের ও পানের বরজ। গত তিনদিনে আমতলীতে ১১৯.৫৮ এবং তালতলীতে ১১০.৬৯ মিমি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। পূর্ণিমার জোর প্রভাবে পায়রা নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে বলে জানান গেইজ রিডার আবুল কালাম আজাদ।
মোংলা ও শরণখোলা (বাগেরহাট) : মোংলা বন্দরে অবস্থানরত দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সুন্দরবনের পশুর, বিপসা, বেলশ্বর ও শ্যালা নদীসহ বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বনাঞ্চলের নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৩ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে সুন্দরবন ৬ ফুট জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর ও রায়পুর : বুধবার থেকে সাগর উত্তাল থাকায় মেঘনা উপকূলীয় লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরী ফেরিঘাটের সঙ্গে সারা দেশের নৌ যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার জানান, এখনো আতঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি।
রাজিবপুর (কুড়িগ্রাম) : রৌমারী উপজেলায় প্রায় ১০০ মিটার রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় যাতায়াতে চরম দুর্ভাগ পোহাচ্ছে এলাকাবাসী।
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) : দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে লঞ্চ ও ফেরি চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশ পথ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে লঞ্চ ও ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা।
