জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকীতে নেতারা
এক ব্যক্তিই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চান না
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
এক ব্যক্তিই ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদ নির্বাচন চান না, তিনি হলেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস-এমন অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘জাপানে বসে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাহেব (প্রধান উপদেষ্টা) বিএনপির নামে বদনাম করছেন। দেশের সম্পর্কে বদনাম করছেন। উনি বলেছেন, দেশে নাকি মাত্র একটি দল নির্বাচন (ডিসেম্বরে) চায়। কিন্তু আমরা বলতে চাই, শুধু একটি লোক নির্বাচন চান না, তিনি হলেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।’
শুক্রবার সকালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে জিয়া উদ্যানে তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মির্জা আব্বাস এসব কথা বলেন।
এর আগে তার নেতৃত্বে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, সালাহউদ্দিন আহমদ, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনসহ সিনিয়র নেতারা সকাল সাড়ে ১০টায় সমাধি প্রাঙ্গণে আসেন। তারা কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পরে মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাতে অংশ নেন। এদিন সকালে প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জনান দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় তাদের অনেকেই কালো ব্যাজ ধারণ করেন। ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ, মুক্তিযোদ্ধা দল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, কৃষক দল, মহিলা দল, তাঁতীদল, মৎস্যজীবী দল, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে আলাদা আলাদাভাবে সমাধিতে ফুল দেওয়া হয়। দুপুরে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর টিএন্ডটি কলেজ, হাইকোর্ট মাজার, গুলশান-২ ঢাকা সিটি করপোরেশনের মার্কেট, বাসাবো খেলার মাঠ, ধানমন্ডি আবাহনী মাঠ, ধানমন্ডি কেএফসি, কলাবাগান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ মহানগরী উত্তর ও দক্ষিণের বিভিন্ন জায়গায় দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণ কর্মসূচি পালন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বিএনপি বরাবর ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছে। এই ডিসেম্বরের কথা কিন্তু ইউনূস সাহেব নিজে বলেছেন। আমরা বলিনি, এটি তারই প্রস্তাব। পরে তিনি সেখান থেকে শিফট করে জুন মাসে চলে গেলেন। জুন মাসে যদি নির্বাচনের কথা বলেন, এই নির্বাচন বাংলাদেশে কখনো হবে না।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন যদি করতে হয়, ডিসেম্বরের মধ্যেই করতে হবে। নির্বাচন যদি করতে না চান, তাহলে সেটি ইউনূস সাহেবের দায়দায়িত্ব, আমাদের নয়। বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচন আদায় করে নেবে। নির্বাচন না হলে বাংলাদেশের ভৌগোলিক অগ্রগতি থাকবে না।’
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের বহু সংস্কার করেছেন উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, বিদেশ থেকে কোনো পরামর্শক না এনে জিয়াউর রহমান দেশের সংস্কার করেছেন। ‘জিয়াউর রহমান খাল সংস্কার কর্মসূচি, গার্মেন্টস ব্যবসা, নারী শিক্ষাসহ বহু সংস্কার করেছেন। কিন্তু এই সরকার সংস্কার, সংস্কার করতে করতে এমন জায়গায় চলে গেছে, এখন তারা আর নির্বাচন দিতে চায় না।’ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে আধুনিক বাংলাদেশের জনক হিসাবে অভিহিত করেন মির্জা আব্বাস।
এদিকে দুপুরে গুলশানে এক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই সরকার বলেছিল তারা জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেবে, সেটাই তাদের প্রধান দায়িত্ব ছিল। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দেশে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। তাই সঠিক সময়ে বর্তমান সরকারকে নির্বাচন দিতে হবে। তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এই দেশের গণতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। তার আদর্শ অনুসরণ করেই বিএনপি জনগণের অধিকার পুনরুদ্ধারে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
বিকালে পৃথক এক কর্মসূচিতে মির্জা আব্বাস ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেওয়ার দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘টালবাহানা করে নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা করবেন না। আমরা খুব ভালো জানি, ডিসেম্বরে নির্বাচন না হলে এ দেশে আর কখনো নির্বাচন হবে না। এই বাংলাদেশ বিদেশি প্রভুদের হাতে পদানত হবে।’
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির বৈঠকের বিষয়টি তুলে ধরে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা বাইরে চলে আসার পর সন্ধ্যা ৬টা বা সাড়ে ৬টার সময় আপনার প্রেস সেক্রেটারি বলেছেন, জুন মাসে নির্বাচন হতে পারে। প্রেস সেক্রেটারি আর আপনি তো এক কথা নয়।’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আজ সংস্কারক সরকার কোন সংস্কার করার জন্য বাইরে থেকে মানুষ ইমপোর্ট (আমদানি) করে আনছেন। যারা এ দেশের নাগরিক নন। দেশের প্রতি অত মমত্ববোধ নেই। দেশকে ভালোবাসেন না। তারা কী করে এ দেশের মানুষের সংস্কার করবে, আমরা বুঝতে পারি না।’
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনালের কর্মক্ষমতা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘তাহলে কেন এই টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে দেব? বিদেশিরা এলে টাকা বাংলাদেশে রাখবে না। তাই বিদেশিদের প্রতি প্রেম-ভালোবাসা ছেড়ে দেন। দেশের মানুষকে ভালো রাখেন। আমরা দেশে লোক তৈরি করব। দেশের লোকেরাই নিউমুরিং টার্মিনাল চালাবে। বাইরের লোক দরকার নেই।’ সরকারের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘সেন্টমার্টিনে খাওয়া নেই, কাপড় নেই, মানুষ বাচ্চা নিয়ে স্কুলে যেতে পারে না। সেন্টমার্টিনে কী এমন হয়ে গেল যে বাংলাদেশি নৌকা যেতে পারবে না? সেখানে কী এমন ঘটনা ঘটছে, জানতে চাই। সাজেকে কী হচ্ছে, আমরা জানতে চাই।’
ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের জন্য সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দিতে হবে : এদিন বেলা সাড়ে ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও দুপুরে হাইকোর্টের মাজারগেটে জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দুস্থ ও অসহায়দের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি এবং যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সব রাজনৈতিক দলই চায় ডিসেম্বরে নির্বাচন হোক। প্রধান উপদেষ্টা যখনই ডেকেছেন রাজনৈতিক দলগুলো তার সঙ্গে আলোচনা করেছে। সব দলই দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা কেন বিএনপিকে নির্বাচন নিয়ে দোষারোপ করলেন তা বোধগম্য নয়। পুরো জাতি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, শুধু একটি দল নির্বাচন চায়-প্রধান উপদেষ্টার এমন বক্তব্য সঠিক নয়। যথেষ্ট তথ্য না থাকায় তিনি এমন মন্তব্য করেছেন।
এদিকে জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। জিয়াউর রহমানের আত্মার মাগফিরাত কামনাসহ মোনাজাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুস্থতা চেয়ে দোয়া করা হয়। এ সময় বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের কেন্দ্রীয় নেতা অংশ নেন।
