Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

সাক্ষাৎকার: ড. মাহবুব উল্লাহ

ফোকলা অর্থনীতিতে ভালো বাজেট আশা করা যায় না

বাজেট ভাবনা ২০২৫-২৬

Icon

দেলোয়ার হুসেন

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ফোকলা অর্থনীতিতে ভালো বাজেট আশা করা যায় না

ড. মাহবুব উল্লাহ

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকার ২ জুন জাতীয় বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘ ১৫ বছরে দেশে নজিরবিহীন লুটপাটের মাধ্যমে রাষ্ট্রের টাকার পাশাপাশি ব্যাংকে রাখা আমানতকারীদের টাকাও আত্মসাৎ করেছে। এসব টাকার একটি বড় অংশ বিদেশে পাচার করেছে। হাসিনা সরকার দেশের অর্থনীতিকে একেবারে ‘ফোকলা’ করে গেছে। এই ফোকলা অর্থনীতি সামাল দিতে গিয়ে বর্তমান সরকারকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। এর মধ্যে মূল্যস্ফীতির হার চড়া, রাজস্ব আয় নিম্নমুখী, সরকারের ঋণনির্ভরতা বেশি, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট, রাজকোষে অর্থের সংকট, সরকারের আয়ের খাত সংকুচিত হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের মন্দা, লুটপাটে দুর্বল হওয়া ব্যাংকগুলোতে তীব্র তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। দেশে চলছে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতা। এসব চলতে থাকলে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম যেমন বাধাগ্রস্ত হবে, তেমনি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে স্বাভাবিক গতিতে ফিরিয়ে আনাও হবে কঠিন। এমন পরিস্থিতিতে একটি ভালো বা জনতুষ্টির বাজেট দেওয়া সম্ভব নয়। এটি সরকারের কাছে প্রত্যাশাও করা যায় না। যুগান্তরের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ। সম্প্রতি রাজধানীর তার নিজ বাসভবনে দেওয়া এই সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেছেন, আগামী বাজেটে সরকারকে বিনিয়োগ বাড়ানো, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং ছোট ও মাঝারি খাতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি গণ-অভ্যুত্থানের চেতনার প্রতিফলনও যাতে বাজেটে থাকে সেদিকেও নজর রাখতে হবে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দেলোয়ার হুসেন।

যুগান্তর : একটি বড় রাজনৈতিক অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় বাজেট দিতে যাচ্ছে। আপনার মতে কেমন বাজেট হওয়া উচিত?

ড. মাহবুব উল্লাহ : আগে দেশে একটি ফ্যাসিস্ট সরকার ছিল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ওই সরকার দেশকে শোষণ করেছে, মানুষের বাক-স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে। ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের ফলে হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। একটি সরকারের জায়গায় আরেকটি সরকার এসেছে। কিন্তু দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। আর্র্থ-সামাজিক অবস্থা আগে যেমন ছিল, এখনো তেমনই রয়েছে। আগের সরকারের সাধারণ মেহনতি মানুষের প্রতি যে অবহেলা অবজ্ঞা ছিল, এখনো তেমনই রয়ে গেছে। আর যারা অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের তেমন কোনো আদর্শ গড়ে ওঠেনি। শেখ হাসিনা দেশের যে অর্থনীতি রেখে গেছেন তা ছিল অত্যন্ত দুর্বল। রিজার্ভের অবস্থা ছিল একেবারে তলানিতে। ডলার সংকট ছিল প্রকট। মূল্যস্ফীতি ছিল আকাশচুম্বী। রেমিট্যান্স ঠিকমতো আসছিল না। দেশ থেকে পুঁজি পাচার হয়েছে ব্যাপকভাবে। দুর্নীতির নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছে হাসিনা সরকার। এভাবে দেশের অর্থনীতিকে ‘ফোকলা’ করে রেখে গেছে। ফোকলা অর্থনীতিতে একটি ভালো বাজেট হবে এমন কিছু আশা করা যায় না।

তারপরও যেহেতু একটা বাজেট দিতে হবে। এখানে লক্ষ্য রাখতে হবে সম্পদের সীমাবদ্ধতার মধ্যে যতটুকু সম্ভব বাজেটে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর দিকে বেশি নজর দিতে হবে। যাতে বেকারদের কর্মের সংস্থান হয়। পণ্যমূল্য সহনীয় ও মানুষের আয় বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। মানবসম্পদ উন্নয়নের দিকে বেশি অগ্রাধিকার দিতে হবে। এগুলো একদিনে হবে না। এবারের বাজেটে একটি দর্শন তুলে ধরতে হবে, যাকে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে আগামীতে তাদের জন্য ভালো কিছু আসছে না। তারা আশায় বুক বাঁধতে পারে। তবে এটা ঠিক, এমন পরিস্থিতিতে সরকার বাজেট দিচ্ছে তাতে অনুমান করা যায়, এবারের বাজেটে নতুন বা চমকপ্রদ কিছু থাকবে না। আমি এমনটা আশাও করি না। কারণ হঠাৎ করে জনতুষ্টির বাজেট দেওয়ার মতো সক্ষমতা দেশের যেমন নেই, তেমনি সরকারেরও নেই।

যুগান্তর : ভালো বাজেট দেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা কোনটি? কীভাবে সেটি দূর করা যায়?

ড. মাহবুব উল্লাহ : ভালো বাজেট দেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা সম্পদের অপ্রতুলতা বা রাজস্ব আয় কম হওয়া। সরকারের হাতে সম্পদ না থাকলে জনকল্যাণে ব্যয় করার চিন্তাও করতে পারবে না। এজন্য ভালো বাজেট দিতে হলে আগে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত, সরকারের আগ্রহ থাকতে হবে। রাজনৈতিক সরকারগুলোর বাজেট দিয়ে নিজেরাই হাততালি দেয় যে ভালো হয়েছে, জনমুখী হয়েছে। কিন্তু বাজেট হয়েছে তাদের দলীয় লোকদের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে নয়।

বাংলাদেশ বছরে যে রাজস্ব আয় করে তা খুব বেশি নয়। মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির হিসাবে ৭ থেকে ৮ শতাংশের বেশি নয়। এটি দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের চেয়েও কম। এমনকি নেপালের চেয়েও কম। রাজস্ব আয় না বাড়ার পেছনে বড় কারণে অদক্ষতা, দুর্নীতি। যেসব আমলা রাজস্ব আয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, বিশেষ করে এনবিআর রাজস্ব আয় বাড়াতে পারছে না।

যুগান্তর : কর্মসংস্থানের অভাব থেকেই দানা বেঁধেছে কোটা সংস্কার আন্দোলন। সে আন্দোলনেই সরকারের পতন। সেই চেতনার প্রতিফলন ঘটাতে করণীয় কী?

ড. মাহবুব উল্লাহ : শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে লুটপাটের কারণে অর্থনীতিতে একটা বন্ধ্যত্ব সৃষ্টি হয়েছিল। শিক্ষাজীবন শেষ করে চাকরি পাচ্ছিল না। আবার চাঁদাবাজি ও পুঁজির অভাবে উদ্যোক্তাও হতে পারছিল না। এখন সরকারের চাকরির বাজার সৃষ্টি করতে হলে দেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। সহজে ব্যাংক ঋণ দিতে হবে। চাঁদাবাজি বন্ধ করে উদ্যোক্তাদের বিকাশের সুযোগ দিতে হবে। বিশেষ করে কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য নীতি সহায়তায় ছাড় দিয়ে তাদের সহায়তা করতে হবে।

কিন্তু দেশে যদি নানা ধরনের অস্থিরতা, বিশৃঙ্খলা চলতে থাকে, তাহলে তো দেশি বিনিয়োগ কেন, কোনো বিনিয়োগই হবে না। এমন একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যদি দেশ চলতে থাকে তবে ভালো বাজেট প্রত্যাশা করাও ঠিক হবে না। এবারের বাজেটের আকার ছোট হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কারণ অতীতে যেমন বড় বাজেট হয়েছে, এবার এত বড় বাজেট করা সম্ভব হবে না। করা উচিত হবেও না। আগে বড় বাজেট করে বছর শেষে দেখা গেছে পরিবর্তন করে আকার ছোট করা হচ্ছে। সবকিছু বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

যুগান্তর : বিগত সরকার অনেকগুলো মেগা প্রকল্প নিয়ে অর্থনীতিতে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করেছে। এ সরকার দু-একটি ছাড়া কোনো মেগা প্রকল্প রাখবে না। আপনি কী মনে করেন?

ড. মাহবুব উল্লাহ : বড় বড় মেগা প্রকল্প থেকে আপাতত বেরিয়ে আসতে হবে। ছোট ছোট প্রকল্প নিতে হবে। এতে কর্মসংস্থান বেশি হয় এবং দ্রুত সুফল পাওয়া যায়। কিন্তু মেগা প্রকল্প থেকে সুফল মেলে খুব ধীরে ধীরে। মেগা প্রকল্পের প্রয়োজন আছে। তবে তা অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশের অবস্থা ভালো হলে মেগা প্রকল্প নেওয়া যেতে পারে।

এখন পরিস্থিতি দেখে ছোট বাজেট দেওয়াটা জরুরি। শ্রীলংকায় এখন একটা বিপ্লবী সরকার ক্ষমতায় আছে। তারা সম্প্রতি একটি বাজেট দিয়েছে। তাতে বরাদ্দের যে খাতগুলো তা দেখলে অবাক হতে হয়। সেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, গবেষণা, নতুন উদ্ভাবনী, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ব্যাপক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সেগুলো দেখলে বেশ চমৎকার। বাংলাদেশেও এমন একটা বাজেট করা উচিত। আমাদের এখানে গবেষণায়, নতুন নতুন উদ্ভাবনীতে কোনো বাজেট দেওয়া হয় না। চিন্তাও করা হয় না। এটা হলো আমাদের চিন্তার দরিদ্রতা। আমরা অর্থনৈতিকভাবে যেমন দরিদ্র, তেমনি চিন্তার দিক থেকেও দরিদ্র। চিন্তার দরিদ্রের কারণে আমাদের বাজেটে নতুন নতুন উপকরণ আসতে পারছে না।

যুগান্তর : রাজনৈতিক সরকারের বাজেটের সঙ্গে এই সরকারের বাজেটকে কীভাবে তুলনা করবেন?

ড. মাহবুব উল্লাহ : রাজনৈতিক সরকারগুলো তাদের বাজেটকে জনতুষ্টির বা পপুলিজম বাজেট বলে প্রচার চালায়। এর কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। কিছু কিছু কাজ থাকে যেগুলো করলে তাদের যে সমর্থক গোষ্ঠী আছে তারা খুশি হয়, লাভবান হয়। আসলে সত্যিকারের জনতুষ্টির বাজেট যেটি, সেটি আমাদের দেশে কখনোই হয়নি। বেকারদের কর্মসংস্থান, দরিদ্রদের জন্য নানা সুবিধা দেওয়া, মধ্যবিত্তদের জন্য নানা খাতে সুবিধা দেওয়া, বিভিন্ন অত্যাবশ্যকীয় সেবা জনগণের দোরগোরায় নিয়ে যাওয়া, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প বিকাশে নীতি সহায়তা দেওয়া-এগুলো থাকলেই হতে পারত সত্যিকার অর্থে জনতুষ্টির বাজেট। সেই ধরনের বাজেট আমাদের এখানে কখনোই হয়নি। আমাদের এখানে বাজেটের লক্ষ্য হচ্ছে বড়লোককে আরও বড়লোক বানানো, গরিবকে আরও গরিব করা। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার একজন নামকরা শিক্ষক ছিলেন, তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করা, তিনি বলতেন আমারে দেশে বাজেটের মানে হচ্ছে সাধারণ গরিবের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে ধনীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত আমরা যেসব বাজেট দেখেছি সবগুলোই এই দর্শন থেকে হয়েছে। পাকিস্তান আমলেও এই দর্শনের ভিত্তিতেই বাজেট হয়েছে। কাজেই এদিক থেকে স্বাধীনতার পর শুধু দেশের নামে পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে দেশের দর্শনে কোনো পরিবর্তন হয়নি।

যুগান্তর : রাজনৈতিক সরকার বড় বাজেট দিয়েছে, কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। এই সরকারের কী করা উচিত?

ড. মাহবুব উল্লাহ : আমাদের দেশে বেসরকারি খাত ব্যাপকভাবে বিকশিত হয়েছে। সরকার নিজেই সব কাজ করবে এটা উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নয়। সরকার নীতি প্রণয়ন করবে। তার আলোকে বেসরকারি খাত ব্যবসা করবে। এখানে ছোট-বড় উদ্যোক্তারা থাকবে-এটা হওয়া উচিত। এজন্য সরকার বাজেটে পলিসিগত কিছু প্রণোদনা দিতে পারে। টাকা দিয়ে প্রণোদনা নয়। পলিসিগত প্রণোদনা দিলে বেসরকারি খাত ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত যাতে বিকশিত হয় বা তাদের আয় যাতে বাড়ে, সে ব্যবস্থা নিতে পারে। এই চেষ্টাটা এবারের বাজেটে করতে পারে। যাতে নতুন কর্মসংস্থান হতে পারে। ছোট ছোট কর্মসংস্থানে আয় বাড়াতে পারে। সোজা কথা বাজেটের কাজটা হবে নীতি সমর্থন দেওয়া। কিন্তু আমাদের এখানে ছোটদের প্রণোদনা দেওয়া হয় না। দেওয়া হয় বড়দের। এটা ঠিক নয়।

যুগান্তর : আপনার একটি লেখাতে পড়েছি, ‘সভ্যতার ইতিহাস হলো দাম বৃদ্ধির ইতিহাস।’ যদিও এটি প্রবাদ বাক্য। তারপরও এটি কি এখন বাস্তবতায় রূপ নিচ্ছে?

ড. মাহবুব উল্লাহ : মূল্যস্তর কখনোই স্থায়ীভাবে কমবে না। এটা বাড়বে। এর সঙ্গে মানুষের আয় বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলে মূল্যস্তর বাড়ার কারণে মানুষ যেটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, আয় বাড়ানোর ফলে তা পুষিয়ে যায়। পণ্যমূল্যসহ আরও নানা কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়ে। উন্নয়ন প্রকল্পের নামে বাজারে টাকার প্রবাহ বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি করে তার বিপরীতে জনগণকে যতটুকু সুবিধা দেওয়া হয়, তার চেয়ে বেশি জনগণ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়। শ্রমিকের বেতন বাড়ল কিন্তু তাকে তো বাজার থেকে বেশি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে। ফলে তার বেতন যেটুকু বাড়ল তার চেয়ে বেশি তার চলে গেল।

মূল্যস্ফীতি হচ্ছে এক ধরনের কর। এর মাধ্যমে জনগণের টাকা চলে যাচ্ছে ব্যবসায়ীর পকেটে। কর বাড়িয়ে একটি পর্যায়ে সরকার তা নিয়ে যাচ্ছে। এভাবে মানুষের আয়ের টাকাই হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

যুগান্তর : শিক্ষাব্যবস্থায় অস্থিরতা চলছে। বাস্তবতার সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থা মিলছে না। বাজেটে শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?

ড. মাহবুব উল্লাহ : আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় বৈষম্য আছে। এমএ বা বিএ পাশ করলে এখানে চাকরি পাওয়া যায় না। যেনতেনভাবে একটি সার্টিফিকেট জোগাড় করার জন্য পড়াশোনা করি। আমি এটাকে বলি ‘ডিপ্লেমা ডিজিজ’ বা ‘সাটিফিকেট জোগাড় করার একটি রোগ।’ এই রোগে এখন আমাদের শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। সার্টিফিকেটনির্ভর শিক্ষার জন্য আমাদের অভিভাবকরা অনেক টাকা খরচ করছে। অনেক অভিভাবক এত টাকার খরচ দিতে পারেন না। তখন শিক্ষার্থীরা পার্টটাইম কাজ করে বা টিউশনি করে। তখন শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে পড়াশোনা করতে পারে না। ফলে শিক্ষার মানেরও অবনতি ঘটে। ফলে আমাদের শিক্ষার মান নেমে গেছে। শিক্ষকদের মানও নেমে গেছে। এ দেশে কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু হওয়া উচিত। সেটি চালু হচ্ছে না।

দেশে কর্মমুখী শিক্ষার জন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে অনেকগুলো পলিকেটনিক ইনস্টিটিউট চালু করেছে। এগুলোতে ভর্তির হার কম। এবার ৫০ শতাংশ আসনও পূর্ণ হয়নি। তাহলে একটা প্যারাডক্সের মধ্যে বা ধাঁধার মধ্যে আছি আমরা। কারিগরিক শিক্ষা যথাযথ না থাকার ফলে অনেকে চাকরি পাচ্ছেন না। কিন্তু কারিগরি শিক্ষায় ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি হচ্ছে না। তার মানে হচ্ছে কারিগরি শিক্ষার যে সিলেবাস তার মধ্যেই কিছু সমস্যা আছে। তারা যে শিক্ষা দেয় তার চাহিদা দেশের বাজারে বা বিদেশের বাজারে হয়তো নেই। যে কারণে ছাত্রছাত্রীরা এগুলোতে ভর্তি হচ্ছে না। এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাজারের শ্রমের চাহিদা বিদেশের বাজারের চাহিদা পর্যালোচনা করে সিলেবাস পুনর্গঠন করা জরুরি।

যুগান্তর : রাজস্ব আয় কম হওয়ায় সরকার প্রতিবছর ঘাটতি বাজেট করছে। এতে সরকারের ঋণ ও সুদের অঙ্ক ক্রমেই স্ফীত হচ্ছে। এটাকে কীভাবে দেখেন?

ড. মাহবুব উল্লাহ : সরকারের ঘাটতি অর্থায়ন একটি রীতি হয়ে গেছে। এতে সুদ ও ঋণ মিলে টাকার অঙ্ক অনেক বেড়ে যাচ্ছে। এ খাতে বাজেটের বড় অংশ ব্যয় হচ্ছে। এটা ভবিষ্যতের জন্য বিপদ ডেকে আনবে। রাজস্ব আয় বাড়ালে ঘাটতি হয় না। রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। আয়কর বাড়ালে অর্থনৈতিক বৈষম্য কমে। আবার আয়কর বাবদ পাওয়া অর্থ সরকার দরিদ্রদের কাজে ব্যয় করতে পারে। রাজস্ব বাড়াতে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা লাগবে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম