Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ইসির জরুরি বৈঠকে সিদ্ধান্ত

দাঁড়িপাল্লা প্রতীকসহ নিবন্ধন ফিরে পাচ্ছে জামায়াত

ইশরাকের বিষয়ে আর কিছু করবে না ইসি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দাঁড়িপাল্লা প্রতীকসহ নিবন্ধন ফিরে পাচ্ছে জামায়াত

জামায়াতে ইসলামীর দলীয় প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’সহ দলটির নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এজন্য জাতীয় সংসদের ‘নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা’ সংশোধনেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই সংশোধনীতে দাঁড়িপাল্লাসহ ১০০টি প্রতীক সংরক্ষণ করা হবে। বিধিমালা সংশোধন করতে সময় লাগায় আপাতত জামায়াতের নিবন্ধন দিয়ে সনদ দেওয়া হবে। বিধিমালা সংশোধন হওয়ার পর প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে। বুধবার নির্বাচন কমিশনের এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই সভায় বিএনপির নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের শপথের বিষয়ে আপিল বিভাগের রায় পর্যালোচনা করা হয়। ইশরাকের বিষয়ে ইসির আর কিছুই করার নেই বলে ওই সভায় সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ ইসির এসব সিদ্ধান্তের কথা সাংবাদিকদের জানান।

ইসি সূত্র জানায়, জামায়াতকে প্রতীক দেওয়া এবং ইশরাক হোসেনের বিষয়ে আপিল বিভাগের রায় নিয়ে গত দুই দিন নির্বাচন কমিশনে কয়েক দফা অনানুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার হঠাৎ করে কমিশন সভা ডাকার নোটিশ জারি করে ইসি সচিবালয়। ওই নোটিশ অনুযায়ী বেলা ৩টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে কমিশনের এ সভা অনুষ্ঠিত হলো।

জামায়াতে ইসলামীর বিষয়ে সভার সিদ্ধান্ত জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ২০১৩ সালে হাইকোর্টের একটি রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছিল, গত ১ জুন আপিল বিভাগ সেটাকে পূর্বাপর অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। আদেশের কপি নির্বাচন কমিশনে পাঠাতে এবং ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। যে কারণে বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। অতিসত্বর জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধন ফিরে পাবে।

রাজনৈতিক দল হিসাবে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে এক যুগ আগে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল ঘোষণা করে ১ জুন রায় দেন আপিল বিভাগ। তবে দলটির প্রতীক হিসাবে দাঁড়িপাল্লার বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দেননি আদালত। ফলে জামায়াত দাঁড়িপাল্লা প্রতীক পাবে কি না, সেই বিষয়ে নানা আলোচনা ছিল। কারণ, সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের উপস্থিতিতে ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ফুল কোর্ট সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে ‘দাঁড়িপাল্লা’ ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসাবে একমাত্র সুপ্রিমকোর্টের মনোগ্রামে ব্যবহৃত হবে। অন্য কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতীক হিসাবে বা কোনো নির্বাচনে প্রার্থীর প্রতীক হিসাবে দাঁড়িপাল্লা বরাদ্দ না করতে ইসিকে চিঠি দিয়েছিল। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন বিধিমালা থেকে দাঁড়িপাল্লা বাদ দেওয়া হয়।

ইসির সভায় দাঁড়িপাল্লা প্রতীক জামায়াতকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় জানিয়ে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, জামায়াতে ইসলামী তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে আমাদের কাছে একটি আবেদন করে দলটির প্রতীক হিসাবে দাঁড়িপাল্লা ফেরত চেয়েছিল। আমরা এটা নিয়েও বিশদ আলোচনা করেছি। ২০১৩ সালে জামায়াতের প্রতীক ছিল দাঁড়িপাল্লা। ২০০৮ সালের নভেম্বরে দলটির নিবন্ধন দেওয়ার সময়ের প্রজ্ঞাপনে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক দেওয়া হয়। এছাড়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ধারা ৯০-এর উপধারা চ-তে বলা আছে, কোনো দলকে কোনো প্রতীক দিলে তা সংরক্ষণ করতে হবে। এ অবস্থায় আমাদের সামনে আসে, সুপ্রিমকোর্টের ফুল কোর্ট সভার আদেশে ২০১৬ সালে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকটি বাতিলের বিষয়টি। আমরা দেখেছি, এটি ছিল একটি প্রশাসনিক পত্র, যেটি রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন পেয়েছিল এবং ব্যবস্থাটি নিয়েছিল। কিন্তু আমাদের সামনে জামায়াতে ইসলামীর আবেদনের সঙ্গে একটি রিট পিটিশন এবং একটি আদেশের (রিট পিটিশন নম্বর ৩৭৯৭/২০০৬) কপি জমা দিয়েছে। এটায় বলা হয়েছে, দাঁড়িপাল্লা আদালতের ন্যায়বিচারের প্রতীক, তাই যেন একটা দলীয় প্রতীক না হতে পারে-এই মর্মে একটি আপিল দাখিল করলে সেটা আদালত খারিজ করে দেন এবং বলেন, এটি নির্বাচনি প্রতীক হিসাবে ব্যবহার করার কারণে কোনোভাবেই আদালতের মান ক্ষুণ্ন করবে না। এ রায় এখনো বলবৎ আছে। এসবকিছু বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন কমিশন নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াতে ইসলামীর দাঁড়িপাল্লা প্রতীক ফেরত দেওয়া হবে। অর্থাৎ তারা তাদের দলীয় নিবন্ধন ও প্রতীক দুটিই ফেরত পাবেন। তবে দলীয় প্রতীকটি যেহেতু আমাদের প্রতীকের তফশিলে আনতে হবে, দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষ করতে একটু সময় লাগবে। এছাড়া প্রতীকের সংখ্যা ৬৯ থেকে ১০০টিতে উন্নীত করব। এমনও হতে পারে, জামায়াতের নিবন্ধন তাৎক্ষণিকভাবে পাবে। যত দ্রুত সম্ভব প্রতীক বরাদ্দ পাবে।

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের বিষয়ে ইসির অবস্থান জানান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, হাইকোর্ট এবং আপিল বিভাগের অবজারবেশনসহ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে যে রায় দিয়েছেন, তা কমিশন সভায় বিশদ আলোচনা হয়েছে। আপিল বিভাগ এখানে আমাদের ইসির স্বাধীনতা এবং সুপ্রিমেসি অন ইলেকশন মেটার্স এস্টাবলিস্ট করেছেন এবং এখানে পাঁচটি ডিএলআর-এর (ঢাকা ল রিপোর্টসন) রেফারেন্স দিয়েছেন। আমরা ডিএলআর-এর রেফারেন্স দেখেছি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বনাম নির্বাচন কমিশন এবং মাহমুদুল হক ভারসেন্স এনায়েত উল্লাহ। এই ডিএলআর-এর রেফারেন্সগুলোয় যেটা বলা আছে, নির্বাচন প্রসেস শুরু হয় তফশিল ঘোষণার মাধ্যমে এবং সম্পন্ন হয় ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশের মাধ্যমে। এজন্য আমরা মনে করি, নির্বাচন কমিশন তার দায়িত্ব সম্পন্ন করেছে এবং গেজেট বহাল আছে বিধায় নির্বাচন কমিশনের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

ইশরাকের শপথের বিষয়টি নিষ্পত্তি হলো কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, ইসির পক্ষ থেকে এটুকু বলতে পারি, নির্বাচন কমিশনের কাজ হচ্ছে গেজেট প্রকাশ করা। শপথের ব্যাপারে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইনের ধারা ৭-এ পরিষ্কারভাবে বলা আছে কারা এটা বাস্তবায়ন করবে। যদি কোনো আইনি জটিলতা না থাকে, অপরাপর কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকে, তাহলে আমরা তাদের পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ গেজেট পাঠানোর চিঠিতে তখনই উল্লেখ করেছিলাম। কমিশন বৈঠকের পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বা আপিল বিভাগকে কোনো চিঠি দেবে কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আমরা কোনো প্রয়োজনই অনুভব করছি না।

নির্বাচন কমিশনার বলেন, বৈঠকে বিবিধ এজেন্ডায় সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা হয়। ওই আলোচনা মুলতুবি করা হয়েছে। ঈদের পরে মূল আলোচনা হবে। এখন পর্যন্ত আবেদন জমা পড়েছে ৬০৭টি। ৭৫টি আসনের পুনর্বিন্যাস চেয়ে বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে এসব আবেদন করেছেন। সীমানা নির্ধারণে কোনো মানদণ্ড ঠিক হয়েছে কি না-এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আইনে যে জিনিসগুলো আছে-প্রশাসনিক অখণ্ডতা, ভৌগোলিক সুবিধা, স্ট্যাটাস, জনসংখ্যা, ভোট সংখ্যা ইত্যাদি বিষয় দেখব। ২২৫টি আসনে কোনো আবেদনই পড়েনি। সেগুলোয় আমরা হাত দেব কেন?

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইভিএম নিয়ে যে কমিটি হয়েছে, সেটা ইভিএম ডিজপোজাল করার ব্যাপারে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হবে না। স্থানীয় সরকার নির্বোচনেও এটি ব্যবহার হবে কি হবে না, এটা আমরা অপেক্ষা করব ঐকমত্য কমিশনের রিপোর্টের ওপর।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম