Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

শেকড়ের টানে ঢাকা ছাড়ছে মানুষ

ঈদের আনন্দ যাত্রায় মৃদু ভোগান্তি

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঈদের আনন্দ যাত্রায় মৃদু ভোগান্তি

বাড়ির পানে ছুটছেন নগরবাসী। ছবি: ‍যুগান্তর

ঈদে টানা ১০ দিনের লম্বা ছুটি। তাই বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ নানা মাধ্যমে বাড়ির পানে ছুটছেন নগরবাসী। গাবতলী, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, মহাখালী, আব্দুল্লাহপুর, বাস টার্মিনাল, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এবং কমলাপুর রেলস্টেশনসহ সবখানেই ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড়। এসব স্টেশনে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায়সহ আছে নানা অভিযোগ। আবার অনেকে বলছেন, এবারের ব্যবস্থাপনা অন্যবারের চেয়ে ভালো। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেন যাত্রীরা। পুলিশ, আনসারের পাশাপাশি নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছেন সেনাসদস্যরাও। বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগে উত্তরায় দুজনকে গ্রেফতার করেছে সেনাবাহিনী। মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়ায় গতি কমছে গাড়ির। কিছু স্থানে যানজট তৈরি হচ্ছে। এতে নির্ধারিত সময়ে গাড়িগুলো বাস টার্মিনালে আসতে পারছে না। ফলে ফিরতি যাত্রায় বিলম্ব হচ্ছে। টার্মিনালে যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে লঞ্চগুলো। পন্টুন থেকে লঞ্চ সর্বত্র মানুষ আর মানুষ। যাত্রীরা বলছেন, এবার ঈদ উপলক্ষ্যে লম্বা ছুটি যা ঈদ আনন্দকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এদিকে সবচেয়ে স্বস্তির যাত্রা ট্রেনে। কমলাপুর থেকে ঠিক সময়ে ছেড়ে গেছে প্রায় সব ট্রেন। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সন্তুষ্ট যাত্রীরা। বিকালের পর চাপ বাড়ে বিমানবন্দর রেলস্টেশনে। এবারও শতভাগ টিকিট অনলাইনে হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেন অনেকেই। যাত্রীদের নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা বজায় রাখতে স্টেশনে তিন স্তরের চেকিং ব্যবস্থা রয়েছে। তবে বাসে যাত্রার চিত্র একটু ভিন্ন। রাজধানী থেকে উত্তরাঞ্চলের বাসগুলো সময়মতো ছাড়লেও পথে মহাসড়কে সৃষ্টি হয় চাপ। বিশেষত বিকালে পোশাক কারখানা ছুটির পর গাজীপুর চন্দ্রায় তৈরি হয় যানজট। ঢাকা, টাঙ্গাইল ও ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী তোলা হচ্ছে। এতে চন্দ্রাসহ কয়েকটি স্থানে তৈরি হয়েছে জটলা। বরাবরের মতোই আছে বাসে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ।

গাবতলী বাস টার্মিনাল : সরকারি ছুটি শুরুর আগের দিনে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে ঈদে বাড়ি ফেরা যাত্রীর চাপ বেড়েছে। আগের ২ দিনের তুলনায় এদিন সকাল থেকে কাউন্টারগুলোতে মানুষের ভিড় ছিল। সরেজমিন গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে-সকাল থেকে যাত্রী বোঝাই বাস ঢাকা ছাড়ছে। কাউন্টারের সামনে লোকজন সিরিয়াল দিয়ে টিকিট কাটছেন। আবার অনেকে টিকিট কেটে বাসের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে রয়েছেন। এ দিন যাত্রীচাপ বেশি থাকায় মিরপুর ১ নম্বর টেকনিক্যাল থেকে আমিন বাজার ব্রিজ পর্যন্ত যানজট ছিল। তবে অফিস ছুটির পর লোকজনের চাপ আরও বেড়েছে। অনেক কোম্পানি বেশি ভাড়া নিয়েছে। এদিন ৫০০ টাকার টিকিট ৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে কাউন্টারের লোকজন বলছেন সরকার নির্ধারিত মূল্যে তারা টিকিট বিক্রি করছেন। ঢাকা রাজবাড়ি রুটের রাবেয়া পরিবহণের যাত্রী মোনালিসা বলেন, সকালে কাউন্টারে এসে টিকিট কিনতে চাইলে ৫০০ টাকার টিকিট ২০০ টাকা বেশি দাম চাওয়া হয়। অভিযোগটি বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাছে জানালে ম্যাজিস্ট্রেট কাউন্টারে এসে তাদের সতর্ক করেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে কাউন্টারের লোকজন কয়েক ঘণ্টা টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখেন। তাদের সঙ্গে একই রুটের নদীয়া, এমএম ও সৌহার্দ পরিবহণের লোকজনও টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখে। এতে টিকিটের জন্য যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেন। রাবেয়া পরিবহণের স্টাফ লিমন বলেন, বুধবার দুপুরের পর ঢাকা-রাজবাড়ি রুটের সব বাসের টিকিট বিক্রি বন্ধ। সকালে একটু ঝামেলা হয়েছে। কি ঝামেলা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স শাখার কর্মচারী জসিম বলেন ঈদের ছুটিতে তিনি রাজশাহী সদরে যাবেন। অফিসে হাজিরা দিয়ে দুপুরের দিকে তিনি গাবতলীতে এসেছেন। বাসের জন্য প্রায় ঘণ্টা খানেক কাউন্টারে অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন গাবতলীতে এসেই টিকিট পেয়েছি। টিকিট কাটার সময় কাউন্টারের লোকজন বলেছেন ২টায় গাড়ি ছাড়বে। এখন ৩টার কাছাকাছি। তিনি বলেন কাউন্টারের লোকজন জানিয়েছে গাড়ি জ্যামে আটকা পড়েছে তাই দেরি হচ্ছে। গাবতলীতে ডিউটিরত বিআরটিএর ভ্রাম্যমাণ আদালত ০৯-এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাসমিয়া বলেন, কেউ যেন টিকিটের দাম বেশি না রাখে এজন্য সতর্ক করা হয়। তবে কাউকে জরিমানা করা হয়নি।

সদরঘাট : নৌপরিবহণ খাত সারা বছর অলস সময় পার করলেও ঈদে জমজমাট হয়েছে। শ্রমিকদের লঞ্চ ঘাটে ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য। বুধবার টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড়। পন্টুন থেকে লঞ্চ সর্বত্র মানুষ আর মানুষ। যাত্রীরা বলছেন, ঈদ উপলক্ষ্যে সদরঘাটের ব্যবস্থাপনা অন্যবারের চেয়ে অধিকতর ভালো। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তাদের স্বস্তি প্রকাশ করতে দেখা গেছে। যাত্রীরা আরও বলছেন, এবার ঈদের লম্বা ছুটি, যা ঈদ আনন্দকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এই লম্বা ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে আনন্দময় সময় অতিবাহিত করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। সদরঘাটের সার্বিক নিরাপত্তা জোরদারে কঠোর বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। পুলিশ আনসারের পাশাপাশি নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছেন সেনাসদস্যরাও। যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে তৎপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। একই সঙ্গে, কিছুক্ষণ পরপরই পন্টুনের এক মাথা থেকে আরেক মাথায় টহল দিচ্ছেন তারা। সদরঘাটের ইজারাদার মোহাম্মদ সুমন ভূঁইয়া বলেন, ঈদে যাত্রীদের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। টার্মিনালে নিরাপত্তা নিশ্চিতে সার্বক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা কাজ করছেন।

কমলাপুর : বুধবার ভোর থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রী চাপ বাড়তে শুরু করে। সরেজমিন দেখা গেছে, দিনের শুরুতে ভোর ৪টায় প্রথম ট্রেন ছেড়ে যায়। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে একে একে ৬৯টি ট্রেন ছেড়ে যায়। এর মধ্যে ৪৩ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন কমলাপুর থেকে ছেড়ে গেছে। লালমনি, ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেন কিছুটা বিলম্বে ছাড়লেও বাকি ট্রেনগুলো নির্ধারিত সময়ে ছাড়ে। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বাড়তি প্রস্তুতি নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। প্ল্যাটফর্মে টিকিটবিহীন কোনো যাত্রীকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। একাধিক টিটিই জানান, ঢাকা রেলওয়ে বিভাগে টিটির স্বল্পতা রয়েছে। তারা আরও বলেন, কমলাপুর ও বিমানবন্দর স্টেশন থেকে বুধবার টিকিট ছাড়াই বহু যাত্রী ট্রেনে উঠেছেন। এতে তাদের কিছুই করার ছিল না। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আনোয়ার হোসেন জানান, বুধবার প্রতিটি ট্রেনে উপচে পড়া ভিড় ছিল। ২-৪টি ট্রেন ৭ মিনিট থেকে ৪০ মিনিট বিলম্বে ছেড়ে গেছে। তবে বৃহস্পতি ও শুক্রবার ট্রেনে বেশি ভিড় হবে।

টঙ্গী : কলকারখানা একযোগে ছুটি হওয়ায় বাড়ি ফিরছেন হাজার হাজার মানুষ। বুধবার দুপুরের পর থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে পর্যাপ্ত যাত্রীবাহী বাস না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েন দূরপাল্লার যাত্রীরা। এ সময় তাদের টঙ্গীর গাজীপুরা, এশিয়া পেট্রোলপাম্প, সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি রোডের মাথা, কলেজগেট, চেরাগআলী, স্টেশনরোড, টঙ্গীবাজার এলাকায় গাড়ির জন্য দীর্ঘ অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। টঙ্গী বায়োফার্মা ফার্মাসিউটিক্যালস কারখানার কর্মচারী হাসান তার স্ত্রীকে নিয়ে যাচ্ছেন জামালপুরের গ্রামের বাড়ি। তিনি জানালেন, প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে বাসের জন্য স্টেশনরোড এলাকায় অপেক্ষা করছি। কিন্তু কোনো গাড়িতে উঠার সুযোগ পাচ্ছি না। এ ব্যাপারে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক (টঙ্গী জোন) মো. মাসুম খান বলেন, পোশাক কারখানা, বিভিন্ন অফিস-আদালত একযোগে ছুটি হওয়ায় ময়মনসিংহগামী যাত্রীবাহী পরিবহণের কিছুটা সংকট দেওয়া দিয়েছে। তবে ঢাকামুখী যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। এদিকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কারণে আব্দুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বুধবার দুজনকে গ্রেফতার করেছে সেনাবাহিনী। এরা হলেন, এজে পরিবহণের আমিরুজ্জামান লিমন (৩২) এবং শাহজালাল পরিবহণের মো. বোরহান উদ্দিন (৩০)। তাদের উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ছিল মানুষের ঢল। বুধবার দুপুরের পর থেকে নারায়ণগঞ্জের সাইনর্বোড, শিমরাইল মোড়, কাঁচপুর, মদনপুর বাসস্ট্যান্ডগুলোতে গাড়ির জন্য শত শত যাত্রীকে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। যাত্রীদের অভিযোগ, বাসস্ট্যান্ডে এসে গাড়ির জন্য দীর্ঘ সময় ধরে পরিবার-পরিজন নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। আর এই সুযোগে বাস কাউন্টার থেকে ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে বাড়তি ভাড়া গুনে ঈদে ঘরমুখো মানুষকে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। বিশেষ করে ছোট ছোট বাচ্চা ও বৃদ্ধদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত করার কাজ চলার কারণে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর লাভলী সিনেমা হল থেকে রূপসী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই থাকে। সাইনবোর্ড তিশা বাস কাউন্টারের দায়িত্বে ছিলেন আজমীর হোসেন। তিনি জানান, এবার ঈদে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক আমাদের বেশ ভোগাবে বলে মনে হচ্ছে। এই রুটে সড়ক বর্ধিতকরণের কাজ চলায় এমনিতে ঢাকা থেকে সিলেট পৌঁছাতে স্বাভাবিক সময়ে চেয়ে দু-তিন ঘণ্টা বেশি সময় লাগছে। স্টারলাইন কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা সোহাগ মিয়া জানান, বরপা থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে প্রতিনিয়ত জ্যাম সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে এই রুটের গাড়ি আটকে থাকার কারণে এই রুটের যাত্রীদের গাড়ির জন্য দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তবে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম