ভোগান্তি মাড়িয়ে ঢাকায় ফিরছে মানুষ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ঈদুল আজহার টানা ১০ দিনের ছুটি শেষ হয়েছে শনিবার। আজ থেকে সব সরকারি অফিস খুলেছে। সরকারি ছুটির শেষ দিনে শনিবার বাস-ট্রেন ও লঞ্চে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মজীবীরা ট্রেন ও বাসের ছাদে চড়ে ঢাকায় ফিরেছেন। একইভাবে ট্রাক, পিকআপভ্যানে করেও মানুষ ঢাকা ফিরেছেন। যাত্রী সংকটে থাকা লঞ্চেও ছিল যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে সৃষ্টি হয় যানবাহনের দীর্ঘ সারি।
সরেজমিন কমলাপুর রেলস্টেশনে দেখা যায়, উত্তরবঙ্গ থেকে আসা ট্রেনগুলোতে ব্যাপক ভিড় ছিল। আসন না পেয়ে অনেক যাত্রী বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে উঠে এসেছেন। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে ট্রেনগুলো নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছাচ্ছে। এতে ভোগান্তি নিয়ে ঢাকায় ফিরছেন যাত্রীরা।
আরও দেখা যায়, শনিবার রংপুর ও বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেন যথাক্রমে এক থেকে দুই ঘণ্টা বিলম্বে কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছেছে। স্টেশন চত্বরে তীব্র ভিড়ের মধ্যে পরিবার নিয়ে ফিরতে দেখা গেছে অনেককেই।
দিনাজপুর থেকে আসা মিজানুর রহমান কমলাপুর সাংবাদিকদের জানান, ট্রেনের টিকিট পাননি। তাই উঠেছেন ছাদে। রোদের মধ্যে পুরো পথ আসতে কষ্ট হয়েছে। কিন্তু অফিস তো মিস করা যাবে না।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে কিছু ট্রেন দেরিতে পৌঁছাচ্ছে। যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি প্রথম অগ্রাধিকার হলেও ছাদে যাত্রী ওঠা পুরোপুরি ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না।
যানজটের কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়ক দিয়ে ফিরতি পথে মারাত্মক ভোগান্তির শিকার হয়েছেন যাত্রীরা। তবে গণপরিবহণ সংকট থাকায় যানজটের মধ্যেই বাসের ছাদ, খোলা ট্রাক ও পিকআপভ্যানে ঝুঁকি নিয়ে ফিরছেন অনেকে। যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মহাসড়কে পুলিশের পাশাপাশি সেনবাহিনীর সদস্যরা যানজট নিরসনে কাজ করলেও মানুষের চরম ভোগান্তি মাড়াতে হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) : একযোগে শত শত যানবাহন ও অসংখ্য যাত্রী ঘাটে আসায় দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় শনিবার দুপুর থেকে যানবাহনে দীর্ঘ সিরিয়াল সৃষ্টি হচ্ছে। বেলা ৩টার দিকে ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে দৌলতদিয়া সাইনবোর্ড পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটারজুড়ে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া প্রায় প্রতিটি লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী পার হচ্ছেন। এছাড়া মহাসড়কে কিছু অসাধু পরিবহণ চালক দালালদের সহায়তায় সিরিয়াল ভঙ্গ করে আগে ফেরিতে ওঠার জন্য ঘাটে চলে যেতে দেখা যায়। ফেরি পারাপারের টিকিট কাউন্টার থেকে ঈদ বকশিশের নামে ২০ টাকা থেকে এক-দেড়শ টাকা বাড়তি আদায়েরও অভিযোগ করেছেন অনেক চালক।
বরিশাল : ঢাকামুখী যাত্রীদের ঢল নেমেছে বরিশালের দুই লঞ্চ ও বাস টার্মিনালে। এবারের ফিরতি যাত্রা শুরুর মধ্যে শনিবার ভিড় ছিল মাত্রাতিরিক্ত। ফলে এ দিন লঞ্চ-বাসের টিকিট হয়ে উঠেছে সোনার হরিণ। দিনভর ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও লঞ্চ-বাসের টিকিট কিনতে পারেনি অধিকাংশ যাত্রী। পরে দালালদের মাধ্যমে কয়েকগুণ বেশি টাকায় টিকিট সংগ্রহ করতে হয়েছে সাধারণ যাত্রীদের। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা।
সরেজমিন দেখা যায়, বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদের স্বনামধন্য বাসের টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে। ফলে সাধারণ যাত্রীরা এসব বাসের কাউন্টার ঘুরে টিকিট পাচ্ছে না। পরে বাধ্য হয়ে টার্মিনালের দালালচক্রের মাধ্যমে কয়েক গুণ বেশি টাকায় টিকিট কিনতে হয়েছে অধিকাংশ সাধারণ যাত্রীকে। একই অবস্থায় বরিশাল নৌবন্দরেরও। এদিন ১২টি লঞ্চ সরাসরি ঢাকার উদ্দেশে যাত্রী নিয়ে গেছে। এসব লঞ্চের টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়ে যাওয়ায় কাউন্টার বা নৌবন্দরে এসেও যাত্রীরা টিকিট কিনতে পারেনি। তবে দুই থেকে তিনগুণ বেশি টাকায় দালালদের মাধ্যমে লঞ্চের টিকিট বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়া এদিন দালালদের কাছ থেকে প্রথম শ্রেণির কেবিনের টিকিট কিনে স্টাফ কেবিন দেওয়ার অভিযোগ করেছে ছয় যাত্রী। যাত্রীচাপ বেশি থাকায় এদিন সব লঞ্চ নিচতলা থেকে ছাদ পর্যন্ত থাকা খালি জায়গায় যাত্রী বসিয়ে বন্দর ত্যাগ করেছে। ফলে অনেক যাত্রী বসার জায়গাও পায়নি। দাঁড়িয়ে লঞ্চে চড়ে রওয়ানা দিতে দেখা গেছে অনেককেই।
কাউখালী (পিরোজপুর) : কাউখালী থেকে ঢাকাগামী লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই নিয়ে শনিবার বিকালে ঘাট থেকে ছেড়ে গিয়েছে এমভি রাজদূত প্রাইম। লঞ্চে পা দেওয়ার মতো তিল ধরনের কোনো ঠাঁই ছিল না। এরপরও স্বরূপকাঠি, মিরেরহাট, শিকারপুর, বানারীপাড়া, চৌধুরীর হাট, মুলাদীসহ ১০-১২টি লঞ্চঘাট থেকে এই লঞ্চে যাত্রী ওঠার কথা।
উত্তরা পশ্চিম (ঢাকা) : শনিবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরা আব্দুল্লাহপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা-বিমানবন্দর মহাসড়ক ধরে ঢাকায় প্রবেশ করেছে যাত্রীবাহী বাস, প্রাইভেটকারসহ নানা ধরনের পরিবহণ। ঈদের ছুটি কাটিয়ে নেত্রকোনা থেকে পরিবার নিয়ে ঢাকা ফেরা উত্তরা ৯ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা চাকরিজীবী লিয়াকত মজুমদার জানান, রাস্তায় যানজট কম। তবে বাস কাউন্টারগুলো বেশি ভাড়া নিচ্ছে। কয়েকদিন ঘুরে টিকিট পেতে হয়েছে। যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধে দুপুরে উত্তরার বিএনএস সেন্টার ও আজমপুর এলাকায় বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে। এ সময় বিআরটিএ’র অভিযানে ১৯ মামলায় ৫২ হাজার টাকা জরিমানা ও হানিফ পরিবহণ, আজমেরি পরিবহণ এবং ভিআইপি পরিবহণের তিনটি বাস জব্দ করা হয়। অভিযানে ট্রাফিক পুলিশের মামলায় ২৩ যানবাহনকে পঁয়ষট্টি হাজার পাঁচশ টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া যাত্রীদের কাছ থেকে বারো হাজার পঞ্চাশ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ায় ইউনাইটেড পরিবহণ, এস আর ট্রাভেলস ও এসআই পরিবহণের বাস থেকে সেসব বাড়তি ভাড়া সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে যাত্রীদের ফেরত দেওয়া হয়েছে।
