সরকারের প্রতি সালাহউদ্দিন
নির্বাচনের সিদ্ধান্ত দ্রুত ইসিকে জানান
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের সিদ্ধান্ত দ্রুত নির্বাচন কমিশনকে জানাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, লন্ডনে আলোচনার সূত্র ধরে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেটা শিগগিরই নির্বাচন কমিশনে যথাযথ প্রক্রিয়ায় কমিউনিকেট (যোগাযোগ) করতে হবে; যাতে নির্বাচন কমিশন জনগণের সামনে বলতে পারে যে তারা সরকারের কাছ থেকে পরামর্শমূলক বা নির্দেশনামূলক মেসেজ (বার্তা) পেয়েছে। সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে নাগরিক ঐক্যের উদ্যোগে ‘বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং কল্যাণ রাষ্ট্রের ভাবনায় জাতীয় বাজেট ২০২৫-২৬’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, কারও দায়মুক্তির বিষয়ে লন্ডন বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়নি। উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হয়েছে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে। সংবিধান যেহেতু এখন চালু আছে, সাংবিধানিকভাবে এই সরকার চলছে, সংবিধান যেভাবে বলেছে যে, উপদেষ্টারা মন্ত্রীর মর্যাদা ভোগ করবেন এবং মন্ত্রী হওয়ার জন্য আর্টিক্যাল ৬৬ অনুসারে সংসদ-সদস্য হওয়ার যে সব যোগ্যতা থাকতে হয়, সেটা উপদেষ্টামণ্ডলীকে মাথায় রাখতে বলব। সেখানে বিদেশি নাগরিকত্বের বিষয়টি কিন্তু অনুমোদন করেনি এবং আরও অনেক বিষয় আছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের রেটিফিকেশন (অনুমোদন) লাগবে পরবর্তী সংসদে। এটাও আপনারা মাথায় রাখবেন এবং রেটিফিকেশন লাগলে এর লেজিটিমেসি (বৈধতা) কীভাবে দেওয়া হবে, কোন জায়গায় দেওয়া হবে, সেটিও আমরা বিবেচনা করব। সুতরাং গণতন্ত্রের পক্ষে, জনগণের পক্ষে, অতি দ্রুত যাতে আমরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দিকে যেতে পারি, সেরকম কার্যক্রম আপনারা নেবেন।’
এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ১০ মাস যথেষ্ট সময় একটা বাজেট প্রণয়নের জন্য। নির্বাচিত সরকার ১২ মাস কাজ করে না বাজেট প্রণয়নের জন্য। বাজেটের তিন থেকে চার মাস আগে থেকে মনোযোগ দেয়। অথচ অন্তর্বর্তী সরকারের বাজেটটি একটি গতানুগতিক বাজেট।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাজেটে নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত যদি রাজনৈতিক দলের দিক থেকে না এসে আমলাতান্ত্রিক পর্যায় থেকে আসে, তা কখনো জনগণের পক্ষের বাজেট হয় না। সংসদে বসে যে সিদ্ধান্ত রাজনীতিবিদেরা নেন, তা প্রতিটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য। তিনি বলেন, ব্রিটিশরা দীর্ঘ সময়ের শাসনামলে এ দেশে যে পরিমাণ লুটপাট করেছে, গত ১৬ বছরে ব্রিটিশদের থেকেও বেশি লুটপাট করেছে ফ্যাসিস্ট হাসিনা রেজিম।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার সভাপতিত্বে সভায় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, ভাসানী জনশক্তি পার্টির সভাপতি শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার প্রমুখ বক্তব্য দেন। সভাপতির বক্তব্যে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সরকার সংস্কারের কথা বলে, কিন্তু বাজেটে তার প্রতিফলন নেই। অর্থনীতিতে নেই, পুলিশের কোনো সংস্কার হচ্ছে না, শিক্ষায় নেই, কোথাও নেই। সংস্কার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘টাস্কফোর্স আছে, কিন্তু তার কোনো মূল্য নেই। পুলিশ বা প্রশাসনে কী সংস্কার হচ্ছে, সেটাও জানানো হচ্ছে না। কোনো কমিটি পর্যন্ত নেই। তাই প্রশ্ন জাগে, এই কথিত সংস্কার কাদের জন্য, কিসের জন্য?’
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকে এমন কোনো কথা হয়েছে কিনা, যেটা বাইরে বলা যাবে না, সেই প্রশ্ন করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি। এর পরও নির্বাচনের তারিখের বিষয়ে দুই পক্ষ সম্মত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মান্না।
নির্বাচন ছাড়া যাওয়ার কোনো পথ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বা ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি যদি হঠাৎ কিছু ঘটিয়ে দেয়, সেটা বলা যায় না। কিন্তু আমরা তো জানি, সেই ঘটনা ঘটলেও নির্বাচন ছাড়া কোনো পথ নেই। সেই অর্থে মাইনাস নির্বাচন-এমন ধারণার কোনো ভিত্তি নেই। নির্বাচন ইস্যুতে বরফ জমেছিল, এখন সেটি গলতে শুরু করেছে।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মান্না বলেন, ‘বিএনপি বলেছিল ওই তারিখে নির্বাচন হতে পারবে না। সরকার বলেছিল একমাত্র ওই দল বিরোধিতা করছে। এখন যেভাবে কথা হচ্ছে, মনে হচ্ছে বরফ গলছে। আমি এটা ইতিবাচক মনে করি। আমি গণতন্ত্র চাই, সেজন্যই নির্বাচনের ওপর এত জোর দিচ্ছি।’
