নাজমুল-মুশফিকের সেঞ্চুরিতে গলে বাংলাদেশের গর্জন
পারভেজ আলম চৌধুরী, ঢাকা
প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
জীবনের মতো ক্রিকেটেও বাঁকবদলের নদী বয়ে যায়। সেই নদী কখনো ‘ধীরে বহে মেঘনা’ কখনো খরস্রোতা। গলে প্রথম টেস্টের প্রথমদিন ১৭ ওভারের মধ্যে ৪৫ রানে তিন উইকেট পড়ে যাওয়ার পর মনে হয়েছিল, মোমের মতো গলে পড়বে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। এমনটি যে আগে বহুবার হয়েছে। তাই শঙ্কার মেঘ জমাট বাঁধছিল। কিন্তু ওই যে বাঁকবদল, সেটি না হলে কি আর ক্রিকেটকে বলা হয় গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা।
প্রথম সেশনে ২৮ ওভারে ৯০/৩। দ্বিতীয় সেশনে ৩০ ওভারে ৯২/০। তৃতীয় সেশন যেন মেঘভাঙা রোদ-৩২ ওভারে ১১০/০। ঢাকায় যখন বৃষ্টি হচ্ছে, গলে তখন রোদ হাসছে নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে। টস জিতে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ ৪৫/৩ হয়ে যাওয়ার পর শ্রীলংকা কী ভেবেছিল কে জানে, তবে প্রথম টেস্টের চিত্রনাট্যকার নিশ্চয় মুচকি হেসেছেন। বাঁকবদলের যে তখনই শুরু।
অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে বাইশ গজ দখলে নিলেন মুশফিকুর রহিম। বাংলাদেশের জন্য প্রথম টেস্টের প্রথমদিনটা হয়ে গেল ‘মেঘের কোলে রোদ হেসেছে’র মতো আরামপ্রদ। গল্পের বাকি অংশে শুধুই বাংলাদেশ। শুধুই নাজমুল-মুশফিক। আষাঢ়ের কদম ফুলের মতো দুজনের দুটি সেঞ্চুরি গলের বাইশ গজের উদ্যানে ফুটল সুরভিমাখা ফুল হয়ে। আর সেই জোড়া পুষ্পের মৌতাতে ২৪৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটির বদৌলতে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের বাগান হয়ে উঠল সৌরভময়।
দিনশেষে নাজমুল অপরাজিত ১৩৬। এর মধ্য দিয়ে লাল বলের ক্রিকেটে দুই হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করলেন তিনি। মুশফিক অপরাজিত ১০৫। প্রথমজনের ষষ্ঠ (শ্রীলংকার বিপক্ষে দ্বিতীয়) এবং দ্বিতীয়জনের দ্বাদশতম (শ্রীলংকার বিপক্ষে চতুর্থ) শতকের হাত ধরে বাংলাদেশ তিন উইকেটেই পৌঁছে গেল তিনশর কাছাকাছি। লংকান বোলাররা সূচনায় যে সফলতায় উদ্বেল হয়েছিলেন, দিনশেষে ঘর্মাক্ত হয়েছেন চতুর্থ উইকেটের পেছনে ছোটার ব্যর্থ চেষ্টা করে। তিন উইকেটের মধ্যে দুটি পেয়েছেন দুই হাতে বল করতে পারা অভিষিক্ত লংকান স্পিনার থারিন্দু রত্নায়েকে।
২০১৩ সালে গলে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করা মুশফিক গত বছর আগস্টে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচজয়ী ১৯১ রানের ইনিংস খেলার পর খরাজর্জর ছিলেন। দুর্দান্ত শতকে সব চাপ-টাপ উড়ে গেল কর্পুরের মতো। নাজমুলের জন্য সেঞ্চুরি পাওয়াটা জরুরি হয়ে পড়েছিল। সেই কবে ২০২৩ সালের নভেম্বরে শেষবার তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার এসেছিল তার ব্যাট থেকে। অধিনায়কোচিত ইনিংস খেলে তিনিও ফিরলেন স্বমহিমায়। শতক স্পর্শ করার পর শূন্যে লাফ দিলেন আনন্দে। জিম্বাবুয়ের কাছে স্বভূমে টেস্টে হার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে টি ২০ সিরিজ খোয়ানোর পর বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রের মসৃণ সূচনার জন্য যে আত্মবিশ্বাসের প্রয়োজন ছিল, গল টেস্টের প্রথমদিন তা পেয়ে গেছে বাংলাদেশ। (স্কোর কার্ড খেলার পাতায়)
