বিপদে পড়লেই ট্রাম্পের ‘দুই সপ্তাহ’
শাবনুর নাহার
প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক জীবন আর কৌশল বিশ্লেষণ করলে বারবার ভেসে উঠে একই চিত্র। বিপদে পড়লেই তার মুখে শোনা যায় সেই পরিচিত সময়সীমা-‘দুই সপ্তাহ’। এ যেন ট্রাম্পের এক আজব দাওয়াই। যা তিনি ব্যবহার করেন যুদ্ধ, শান্তি, কূটনীতি, বাণিজ্য, স্বাস্থ্যনীতি বা যে কোনো বড় সংকটে ‘সময় কিনতে’। কখনো রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত, কখনো ইরান ইস্যুতে যুদ্ধের সিদ্ধান্ত, কখনো আবার অভ্যন্তরীণ নীতির বড় ঘোষণা-সব ক্ষেত্রেই তার এই ‘দুই সপ্তাহ’ নীতি অনেকটা রাজনীতির ভেলকিবাজি। যা দিয়ে তিনি গণমাধ্যম, জনগণ আর আন্তর্জাতিক মহলকে একটুখানি থমকে দেন। তারপর নিজের মতো পালটা খেলা খেলতে থাকেন আবারও। আলজাজিরা, বিবিসি, ওয়াশিংটন পোস্ট। ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, সে সময় নানা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে ‘দুই সপ্তাহের মধ্যে’ বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার অঙ্গীকার করতেন তিনি। হোক তা স্বাস্থ্যনীতি, অর্থনৈতিক শুল্ক, অবকাঠামো উন্নয়ন, অথবা বৈদেশিক নীতি। বর্তমানে ইরানের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষিতে ট্রাম্পের ‘দুই সপ্তাহ’ ঘোষণা আবারও সেই পুরোনো ছকেই ধরা দেয়। বৃহস্পতিবার তিনি জানিয়েছেন, দুই সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবেন ইরানে হামলা চালাবেন কিনা। এর আগে জানানো হয়েছিল, ট্রাম্প ইরানে হামলার পরিকল্পনা করেছেন। এছাড়া বুধবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, আমি কি করব তা কেউ জানে না। কখনো কখনো আবার ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার সম্ভাবনা নিয়ে ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি। এত হম্বিতম্বির মাত্র তার এক দিন পরেই আবারও সেই পুরোনো ধাঁচেই ফিরে গেলেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সামরিক হামলার আগে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার জন্য আরও দুই সপ্তাহের সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন ল্যাভিট। যদিও ট্রাম্পের এই দুই সপ্তাহের মেয়াদে কখনোই স্পষ্ট ফলাফল দেখানো হয়নি। বরং এটি ছিল সময় নষ্ট করার, আলোচনার সুযোগ প্রসারিত করার এবং চাপ কমানোর এক প্রকার রাজনৈতিক কৌশল। যার মাধ্যমে ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান। তবে বারবার অবস্থান বদলের কারণে অনেক বিশ্লেষকরাই ইরান নিয়ে ট্রাম্পের আদৌ কোনো সুস্পষ্ট কৌশল বা লক্ষ্য আছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরানি বংশোদ্ভূত মার্কিন বিশ্লেষক নেগার মরতাজাভি বলেছেন, ‘আমি নিশ্চিত নই, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই জানেন কিনা, তিনি আসলে কী চান।’ মরতাজাভি আরও বলেছেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন একটা, করেন আরেকটা।’
তিন সপ্তাহ আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, রাশিয়া যদি ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করার কোনো ইচ্ছা না দেখায়, তাহলে দুই সপ্তাহের মধ্যে নতুন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। কিন্তু সেই দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি ট্রাম্প। মে মাসে ট্রাম্প দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে নতুন আমদানি শুল্কের কথা বলেছিলেন। কিন্তু পরে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এক সপ্তাহ আগে আবারও তিনি বলেছেন, দুই সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র তাদের বাণিজ্য সহযোগীদের নতুন শুল্কের কথা জানাবে। কিন্তু এটিরও কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। ২০২০ সালে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘দুই সপ্তাহ’র মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যসেবা পরিকল্পনা ঘোষণা করবেন। কিন্তু সেই পরিকল্পনাও থমকে গেছে সেখানেই।
