নিরাপদ ছাত্রাবাসের দাবিতে আন্দোলন
ঢামেক অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
নিরাপদ ছাত্রাবাসসহ পাঁচ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজ দুপুর ১২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে বলা হয়েছে। তবে পেশাগত এমবিবিএস পরীক্ষার্থী ও বিদেশি শিক্ষার্থীরা এর আওতামুক্ত থাকবে। শনিবার দুপুরে একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এদিকে, ঢামেক বন্ধ ঘোষণার সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তারা ঘোষণা দিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন এবং হল ত্যাগ করবেন না। চতুর্থবর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, একতরফা প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
ঢামেক বন্ধের বিষয়টি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক কামরুল আলম বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা দ্রুত হোস্টেল নির্মাণের দাবিতে আন্দোলন করছিলেন। এর মধ্যে কলেজের পুরোনো একটি ছাত্রাবাস বসবাসের অনুপযোগী ঘোষণা করেছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। তবে সেখানে কয়েকজন ছাত্র এখনো থাকছেন। তাদের সেখান থেকে সরে যাওয়ার কথা বললেও সেখানে থাকছেন।
অধ্যক্ষ কামরুল আলম আরও বলেন, প্রতিবছর নতুন ভর্তি হওয়া প্রথমবর্ষের এমবিবিএস শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ বছর ঢাকা মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে। এসব বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
পাঁচ দফা দাবিতে ঢামেক শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি : ঢাকা মেডিকেল কলেজের আবাসিক ভবন ও একাডেমিক স্থাপনার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা নিরসনে শিক্ষার্থীরা স্মারকলিপি দিয়ে পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছেন। ২৮ মে থেকে পাঁচ দফা দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন ঢামেক শিক্ষার্থীরা। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত কলেজ ক্যাম্পাসের মিলন চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীদের একাংশ। তারা জানান, ৭ মাস আগে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা ভবনে এখনও তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন, আর কর্তৃপক্ষ উদাসীন। শনিবারের অবস্থান কর্মসূচিতে হাতে হ্যান্ডমাইক ও ব্যানার নিয়ে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ শুরু করেন। পরে তারা কলেজ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অংশে মিছিল করেন। তারা ‘প্রহসন মানি না, মানব না’, ‘দাবি আমাদের-মানতেই হবে’ স্লোগান দিতে থাকেন।
শিক্ষার্থীদের দাবি, শহীদ ডা. ফজলে রাব্বি ছাত্রাবাসসহ একাধিক ভবন দীর্ঘদিন ধরে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। গণপূর্ত বিভাগের পক্ষ থেকে সাত মাস আগে ডা. ফজলে রাব্বি ছাত্রাবাসকে সরকারিভাবে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ভবনের ছাদ ও দেওয়াল থেকে প্রতিনিয়ত পলেস্তারা খসে পড়ছে, অনেক জায়গায় রড বেরিয়ে এসেছে। এতে যে কোনো সময় প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। ভবন ধসে কেউ নিহত হলে তার দায় কে নেবে? তারা বলেন, এই ভবনগুলোতে বসবাসের অভিজ্ঞতা মানেই প্রতিদিন একটা অদৃশ্য মৃত্যু-ভয়ের সঙ্গে বসবাস করা। রানা প্লাজা বা জগন্নাথ হল ট্র্যাজেডির মতো ভয়াবহ ঘটনা এড়াতে এখনই দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, তারা একদিনের ক্ষোভে নয়, ধারাবাহিক উদ্বেগ ও সচেতনতার ভিত্তিতে এই আন্দোলনে নেমেছেন। এর আগেও বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ করা হয়েছে। কে-৮২ ব্যাচ তাদের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম বয়কট করেছে, বিভিন্ন ব্যাচ ক্লাস ও ওয়ার্ড বর্জন করেছে, এমনকি প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগানোর মতো চূড়ান্ত প্রতিবাদও হয়েছে।
এক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী বলেন, আমরা চিকিৎসা শেখার জায়গায় এসেছি, ভবন ধসে মরার জন্য নয়। অথচ প্রশাসন নির্লিপ্ত। কোনো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নেই।
পাঁচ দফা দাবি : শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপিতে উত্থাপিত পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে-নতুন ছাত্রাবাস ও ছাত্রীনিবাস নির্মাণের জন্য দ্রুত বাজেট পাশ। আবাসন ব্যবস্থা নির্মাণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিকল্প আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। নতুন একাডেমিক ভবনের জন্য আলাদা বাজেট পাশ করা। সব প্রকল্প ও কার্যক্রমের অগ্রগতি শিক্ষার্থীদের সামনে স্বচ্ছভাবে উপস্থাপনের জন্য শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নিয়োগ। স্মারকলিপিটি কলেজ প্রশাসনের কাছে পৌঁছে দেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তৌহিদুল আবেদীন তানভীর, সাদিয়া ইসলাম মৌলি, আবদুল্লাহ আল নোমান, আলফাজ হোসাইন শিহাব, সিয়াম মোর্শেদ প্রমুখ।
