Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

গাজাবাসীর আতঙ্ক এবার ইসরাইলে

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

গাজাবাসীর আতঙ্ক এবার ইসরাইলে

ইসরাইলের তেল আবিবে ইরানের হামলায় ধসে যাওয়া একটি ভবন। ছবি: আল-জাজিরা

যুদ্ধের বিভীষিকা এতদিন গাজা উপত্যকার মানুষের জন্যই ছিল একচেটিয়া নির্মম বাস্তবতা। শিশু থেকে বৃদ্ধ, গর্ভবতী নারী থেকে আহত চিকিৎসাকর্মী-সবারই প্রতিদিনের জীবন কাটছে ইসরাইলি সাইরেন, ধ্বংসস্তূপ আর বোমার শব্দে। এবার সেই আতঙ্কের ছায়া এসে পড়েছে ইসরাইলিদের জীবনেও। ইরানের হামলায় ইসরাইলের তেল আবিব, রামাত গান, রিশন লে-সিয়োনের মতো শহরগুলো রূপ নিচ্ছে ধ্বংসস্তূপে। সেখানেও ভোররাতে ঘুম ভাঙছে ক্ষেপণাস্ত্রের গর্জনে। যে সাইরেন এতদিন গাজার আকাশ কাঁপিয়ে দিত, এখন তা কাঁপাচ্ছে ইসরাইলি জনপদ। যেসব আতঙ্ক এতদিন সীমান্তের ওপারের ‘বাস্তবতা’ বলে বিবেচনা করা হতো, সেগুলো এখন ইসরাইলের মাটিতেই ‘নিজের বাস্তবতা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শুক্রবার ভোরে ইরানে ভয়াবহ হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। সঙ্গে সঙ্গেই কঠোরভাবে এর জবাব দেন ইরানি সেনারাও। এরপর থেকেই শুরু হামলা-পালটা হামলা। ইরানের একের পর এক পালটা হামলায় অনেকটাই দিশেহারা হয়ে পড়েছে ইসরাইল। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। শনিবার ভোররাতে ইরানি হামলা নিয়ে তেল আবিবের বাসিন্দা তালি হোরেশ বলেছেন, ‘দরজাটা বন্ধ করে আমরা কম্পিউটারে খবর দেখছিলাম, হঠাৎ এমন একটা বিস্ফোরণ হলো যে পুরো বিল্ডিং দুলে উঠল। কয়েক মিনিট পর দরজা খুলতেই দেখি ধোঁয়ায় ভরে গেছে লিভিং রুম। সঙ্গে সঙ্গে আবার নিরাপদ কক্ষে ফিরে যাই আমরা।’ হোরেশ এবং তার পরিবার দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সেই সেফরুমে আটকে ছিলেন। পরে উদ্ধারকারীরা তাদের উদ্ধার করেন। স্থানীয় বাসিন্দা আভি গাটেনিও বলেছেন, ‘আমি আর আমার বাচ্চারা ঘুমাচ্ছিলাম, হঠাৎ সাইরেন বাজতেই দৌড়ে নিরাপদ কক্ষে চলে যাই। ৫ মিনিট পর বিস্ফোরণের শব্দ শুনি। তবে ভেতরে থাকায় খুব জোরে শোনা যায়নি। বাইরে এসে দেখি আশপাশ ধ্বংস। এক বৃদ্ধ দম্পতিকে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করি। এরপর আবার ছুটে যাই বাচ্চাদের কাছে। দেখি তারা ভয়ে কাঁপছিল।’ তেল আবিব হোম ফ্রন্ট কমান্ডের কর্নেল (অব.) মাইকেল ডেভিড বলেছেন, ‘এ ধরনের ঘটনা আমাদের আগে কখনো মোকাবিলা করতে হয়নি।’ ইরানের দফায় দফায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইতোমধ্যে বহু ইসরাইলি প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। এই পরিস্থিতিতে তেল আবিবের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে ইসরাইলের মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা সংস্থা (নাটাল)ও। দ্রুজ, বেদুইন এবং ইহুদি-সব সম্প্রদায়ের মানুষই একই আতঙ্কে শ্বাস নিচ্ছেন।

এদিকে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরাইলের আরব শহর তামরায় এক পরিবারের চারজন নিহত হওয়ার পর স্থানীয়দের ভেতরে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এই ঘটনার পর থেকেই উঠে আসছে পুরোনো অভিযোগ-আরব শহরগুলো সরকার থেকে ঠিকমতো সুযোগ-সুবিধা পায় না। তামরায় যেখানে ৩৮ হাজার মানুষ থাকেন সেখানে কোনো সরকারি বোমা আশ্রয়কেন্দ্র নেই। কিন্তু পাশের ইহুদি শহর কার্মিয়েলে (জনসংখ্যা ৫৫ হাজার) আছে ১২৬টি সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র। তামরার একটি পরিবারে হামলার ঠিক পরেই একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে কিছু ইসরাইলি ‘তোমার গ্রাম জ্বলুক বলে গান গাইছিলেন।’ ওই পরিবারের অনেকেই নিহত হয়েছেন। পরিবারটির বেঁচে যাওয়া একজন সদস্য বলেছেন, ‘আমার পরিবার মরল, আর ওরা তালি দিয়ে উৎসব করল? আমরা তাহলে কাদের নাগরিক?’

হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপ অনুযায়ী, ৮২.৭ শতাংশ ইহুদি ইসরাইলি ইরানে হামলাকে সমর্থন করেন। কিন্তু ৬৭.৯ শতাংশ আরব ইসরাইলি এর বিরোধিতা করেছেন। আর ৬৯.২ শতাংশ আরব ইসরাইলি নাগরিক জানিয়েছেন, এই হামলার পর তারা আতঙ্কে রয়েছেন। ২৫.১ শতাংশ মানুষ হতাশা প্রকাশ করেছেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইরান-ইসরাইল সংঘাত


আরও পড়ুন

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম