ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ সম্পর্কে আব্দুল হক
ইরান মাথানত করবে না আমেরিকার চাপে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
চাপে রেখে ইরানকে কবজায় নিতে চায় আমেরিকা। এ কারণে তারা ইরানে হামলা করেছে। কিন্তু ইরান তাদের কাছে কখনোই মাথানত করবে না। তারা সর্বশক্তি দিয়ে আমেরিকা-ইসরাইলকে রুখে দেবে। ফলে ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ আরও দীর্ঘায়িত হবে। সহজেই যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার সুযোগ নেই। এমন মন্তব্য করেন, রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (রাওয়া) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ আব্দুল হক। শনিবার রাতে রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএসে নিজ বাসভবনে তিনি যুগান্তরের সঙ্গে একান্তে কথা বলেন। মোহাম্মদ আব্দুল হক বলেন, যুদ্ধ হয় প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে। নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষা ও শক্তির মহড়া দেখাতে তাদের মাঝে যুদ্ধ হয়। কিন্তু ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে দূরত্ব হাজার মাইল। তাহলে কেন ইসরাইল যুদ্ধ করছে? ইতিহাসের গভীরে গেলে দেখা যায়-তাদের এই যুদ্ধের একটি কারণ আছে। তা হলো-এই যুদ্ধের মাধ্যমে আমেরিকা-ইসরাইল একটা ধর্মীয় গোষ্ঠী বা জাতিকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়। ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ সহজেই থাববে না জানিয়ে তিনি বলেন, ইসরাইল মুসলমানদের ধ্বংস করে দিতে চায়। ইতোমধ্যেই তারা প্যালেস্টাইনকে ধ্বংসের চেষ্টা চালিয়েছে। এরপর তারা জর্ডান, মিসর ও সিরিয়া দখলের চেষ্টা করবে। এরপর দাবি করবে মক্কা শরিফ তাদের। এই অবস্থান শক্ত করতে তারা অগ্রসর হচ্ছে। আর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ইসরাইলের প্রধান বাধা একমাত্র ইরান। কারণ মুসলিম দেশগুলোকে নিয়ে ইসরাইলের এমন পরিকল্পনার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে ইরান। এ কারণে ইসরাইল পরিকল্পিত ভাবে ইরানের ওপর হামলা করছে। এই যুদ্ধে কিন্তু সৌদি আরব নিরাপদ নয়। আমেরিকা-ইসরাইল যদি ইরানের ওপর দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারে-তবে তারা একে একে সব মুসলিম রাষ্ট্র খেয়ে ফেলবে। এরপর ইসরাইল মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে নিজস্ব সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করবে। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল ইসলামের আদর্শ সহ্য করতে পারে না। তারা এই আদর্শকে ফান্ডামেন্টালিস্ট ও জঙ্গি বলে। এর সঙ্গে ভারতও জড়িত। এমন অবস্থার মধ্যেই ইসলামি দেশগুলোকে এক হতে হবে। সব মুসলিম রাষ্ট্র যদি এক হয়-সেক্ষেত্রে আমেরিকা-ইসরাইল কিছুই করতে পারবে না।
ইরানে পারমাণবিক বোমা তৈরির কারখানা ধ্বংস করতে ইসরাইল হামলা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল চায় না পৃথিবীতে কোনো মুসলিম দেশ বা গোষ্ঠীর হাতে পারমাণবিক অস্ত্র ও বোমা থাকুক। ইরানের যুদ্ধে সফল হলে তারা পাকিস্তানকে ধরবে। যে কোনো একটি অজুহাতে ইসরাইল-আমেরিকা পাকিস্তানের পারমাণবিককেন্দ্রে হামলা চালিয়ে ইরানের নাম দেবে। পরিবেশ কিন্তু সেদিকেই গড়াচ্ছে। এখনই কিন্তু সবাইকে সতর্ক হতে হবে। তবে ইরান-ইসরাইল যুদ্ধের শেষ পরিণতি কি হয়-তার জন্য সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে।
রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (রাওয়া) চেয়ারম্যান বলেন, ইসরাইল যুদ্ধের মাধ্যমে নিজেদের আদর্শ প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে তারা প্যালেস্টাইনকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে চায়। শুধু প্যালেস্টাইন দখল নয়, প্যালেস্টাইনসহ বিশ্বজুড়ে যত মুসলিম দেশ আছে সেগুলোকে শাসন করার অভিপ্রায় নিয়ে তারা কাজ করছে। মূলত ধর্মীয় কারণে ইসরাইল যুদ্ধ করে। আর আমেরিকা তৎপর একটি নির্ধারিত রেজিম চেঞ্জ করতে। এজন্য ইসরাইলের কাঁধে হাত রেখে ইরানকে দুর্বল করার চেষ্টায় রয়েছে। এখানে সফল হলে তারা ইরানের আর্মিকে দিয়ে একটা নতুন সরকার বানানোর চেষ্টা করবে। এই রেজিম চেঞ্জ না হওয়া পর্যন্ত আমেরিকা বসে থাকবে না। তবে ইরান ছেড়ে দেওয়ার দেশ নয়। কারণ ইরান একটি আদর্শিক দেশ এবং ইসরাইলের চেয়েও ঐতিহ্যবাহী। তারা ইসলামি আদর্শের মূল্যবোধে শক্তিশালী।
মোহাম্মদ আব্দুল হক বলেন, যুদ্ধের প্রভাব বাংলাদেশের ওপর ব্যাপকভাবে পড়বে। শুধু বাংলাদেশ নয়, এর প্রভাব সারা বিশ্বের ওপর পড়বে। ইরানের তেল ও গ্যাস ব্যবহার করে অনেকে নিজেদের অর্থনীতি উজ্জীবিত করছে। এই মধ্যপ্রাচ্যের ওপর বাংলাদেশও নির্ভরশীল। আমরা এখান থেকে তেল ক্রয় করি। ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদি হলে এই সংকট ছড়িয়ে পড়বে। সেই কারণে এখনই সরকারের উচিত প্রস্তুতি নেওয়া। বিশেষ করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উচিত তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
