রাতের ভোটের কারিগর জনতার হাতে আটক
‘জুতার মালা’ পরিয়ে লাঞ্ছিত করে জনতা * বিএনপির মামলায় গ্রেফতার, নেওয়া হয়েছে ডিবি হেফাজতে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে আটকের পর সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদাকে সুনির্দিষ্ট মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরায় নিজ বাসায় তিনি জনতার হাতে ঘেরাও হন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বহুল আলোচিত ‘রাতের ভোটের’ সময় তিনি সিইসির দায়িত্বে ছিলেন। এজন্য তাকে অনেকে ‘রাতের ভোটের’ প্রধান খলনায়ক হিসাবে আখ্যায়িত করেন।
উত্তরার ৫নং সেক্টরের বাসা থেকে আটকের পর উপস্থিত বিক্ষুব্ধ জনতা তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা ছাড়াও গলায় ‘জুতার মালা’ পরিয়ে পুলিশে দেয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাত ১০টায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে মিন্টো রোডে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার নাসিরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, সাবেক সিইসি কেএম নূরুল হুদার বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় একটা মামলা হয়েছে। ওই মামলায় তিনি ৯ নম্বর আসামি। তার বিরুদ্ধে নির্বাচনে অবৈধভাবে একটি দলকে বিজয়ী করানোর অভিযোগ করা হয়েছে।
এদিকে রোববার দুপুরে শেরেবাংলা নগর থানায় সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করে বিএনপি। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ১০ জন নির্বাচন কমিশনারসহ অন্তত ২১ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন না করে তারা জনগণের ভোট ছাড়াই নির্বাচন করে ফৌজদারি অপরাধ করেছেন।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অভিযোগ আছে, ওই নির্বাচনে ভোটের আগের রাতেই ব্যালটে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে সিল মারার বিস্তর তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। এ কারণে রাতের ভোট হিসাবে পরিচিতি পায় ওই নির্বাচন। ফলও হয় একতরফা। নির্বাচনে ২৯৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট পায় ২৮৮টি। অপরদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট পায় মাত্র আটটি আসন। তখনকার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা কমিশন বিষয়টি জানার পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উলটো ধামাচাপা দেয়।
শুধু তাই নয়, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করা নূরুল হুদা ওইসব ঘটনায় কোনোরকম বিব্রতও ছিলেন না। বরং তিনি নাকি সফলভাবেই জাতীয় নির্বাচনসহ ছয় হাজারের বেশি বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচন করেছেন বলে দাবি করেন। অথচ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অস্বাভাবিক ভোট পড়ে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কমপক্ষে ১৯৭টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়ে। আর অন্তত ১ হাজার ৮৮৯টি কেন্দ্রে ভোট পড়ে ৯৫ থেকে ৯৯.৯৯ শতাংশ। নির্বাচন কমিশনের সহযোগিতায় ভোটের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে ফেলা হয় বলে বিএনপি বিভিন্ন মাধ্যমে বহুবার অভিযোগ করেছে। সাংবিধানিক পদে থেকে নূরুল হুদা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশে এমন সব গুরুতর অপরাধ করেছেন বলেও অভিযোগ করে আসছে দলটি।
রোববার সন্ধ্যায় সাবেক সিইসি কেএম নূরুল হুদাকে আটকের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর কিছুক্ষণের মধ্যে সেটি ভাইরাল কনটেন্টে পরিণত হয়। টক অব দ্য কান্ট্রি হয়ে যায়। ভিডিওতে দেখা যায়, একদল লোক সাবেক সিইসিকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। এ সময় কয়েকজন তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। কয়েকজন নূরুল হুদার গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেন। কেউ কেউ রাতের ভোটের কারিগর ছিলেন বলে ধিক্কার দিচ্ছেন। এর মধ্যে কয়েকজন স্লোগান দিয়ে নূরুল হুদার বিচারও দাবি করেন। ততক্ষণে খবর পেয়ে পুলিশ এসে নূরুল হুদাকে উদ্ধার করে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তরা বিভাগের ডিসি মইদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘কিছু লোক উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টরে সাবেক সিইসির ভাড়া বাসা ঘেরাও করে রেখেছিলেন। আমরা তার নিরাপত্তার জন্য পুলিশ পাঠিয়ে তাকে কাস্টডিতে নিই। নূরুল হুদার বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা আছে। তবে উনি যেহেতু একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, আমরা তাকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করেছি।’
এদিকে এ বিষয়ে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান বলেন, স্বেচ্ছাসবক দল ঢাকা মহানগর উত্তরের নেতাকর্মীরা গোপন সূত্রে তার অবস্থান জানাতে পারেন। যেহেতু তার নামে মামলা রয়েছে, সেহেতু নেতাকর্মীরা তাকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। তিনি বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থা নষ্ট করেছেন। আমরা বিশ্বাস করি তার উপযুক্ত শাস্তি হবে।
