ইরানে সরকার বদলের মার্কিন লক্ষ্য পূরণ হয়নি
এম শফিউল্লাহ
প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি : সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
ইরানে সরকার পরিবর্তনের ট্রাম্পের লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না। তবে যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে, ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানীদের হত্যা করে, পরমাণু স্থাপনায় হামলা করে এবং ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করে তাদের লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানোর পর ইরান তা মেনে নিয়েছে। তবে যুদ্ধবিরতি ক্ষণস্থায়ী বলে মনে হচ্ছে। তাছাড়া, ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো যুদ্ধবিরতি হয়নি।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্য ও জার্মানি ২০১৫ সালে এক চুক্তিতে উপনীত হয়। ওই চুক্তিতে ইরান পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ রাখবে বলে সম্মত হয়। তবে পরমাণুবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএইএ-এর নজরদারির মধ্যে ইরান শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের লক্ষ্যে পরমাণু প্রকল্প গ্রহণ করতে পারবে। ট্রাম্প ক্ষমতায় যাবার পর ২০১৮ সালে চুক্তিটি বাতিল করে। কারণ নেতানিয়াহু চুক্তির বিরোধিতা করেছিলেন। তারপর থেকে যুক্তরাষ্ট্র নতুন চুক্তি করার জন্য ইরানের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। জুনের প্রথম সপ্তাহে মাস্কাটে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অচলাবস্থার প্রেক্ষিতে ১০ জুন ইসরাইল ইরানে হামলা চালায়। ইরানের শীর্ষস্থানীয় সেনা কমান্ডার এবং পরমাণু বিজ্ঞানীদের হত্যা করে। ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করে। ইসরাইল যদিও আয়রন ডোম দিয়ে কিছু কিছু ক্ষেপণাস্ত্র আকাশে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে। তবে অনেক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে এবং তেল আবিব ও হাইফাসহ অনেক শহরে অবকাঠামো এবং জনমালের ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
ইসরাইল ইরানের মিসাইল স্থাপনায় ক্ষতিসাধন করেছে। তারপর ২২ জুন সকালে বি-২ যুদ্ধজাহাজ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালায়। ওই হামলায় ইরানের তিনটি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটা ইরানের সার্বভৌমত্বে বড় ধরনের আঘাত। ইরান বলেছে, সময় ও সুযোগ মতো জবাব দেওয়া হবে। তবে যুদ্ধবিরতির জন্য কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মধ্যস্থতা করেন। ইরান অবশ্য কাতার ও ইরাকে মার্কিন স্থাপনায় হামলা করেছে। মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার পূর্বে কাতারকে ইরান জানিয়েছে যে, তাদের লক্ষ্যবস্তু মার্কিন স্থাপনা, কাতার নয়। প্রতীকী প্রতিবাদ হিসাবে ইরান মার্কিন ঘাঁটিতে বোমাবর্ষণ করলেও ট্রাম্প ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি আহ্বান করেছেন। উভয়পক্ষ যুদ্ধবিরতি মেনে নিয়েছে।
যুদ্ধবিরতি সাময়িক স্বস্তি হলেও সংকটের কোনো সমাধান হয়নি। একটা নাজুক পরিস্থিতিতে এই যুদ্ধবিরতি হয়েছে। আপাতত আগ্রাসন বন্ধ হয়েছে। ইরানকে হরমুজ প্রণালিও বন্ধ করতে হয়নি। কাতারের সঙ্গে ইরানের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। আবার কাতারে রয়েছে মার্কিন ঘাঁটি। এসব কারণে মধ্যস্থার জন্য কাতার উপযুক্ত দেশ। এখন ইরান তার ক্ষয়ক্ষতির পর্যালোচনার সুযোগ পাবে। আকাশ প্রতিরক্ষাকেও আরও জোরদার করতে পারবে।
লেখক : সাবেক রাষ্ট্রদূত ও মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ
