Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

এসআই সুকান্ত দাশকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ

বিক্ষোভে উত্তাল খুলনা, কেএমপি কার্যালয়ে তালা

Icon

খুলনা ব্যুরো

প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিক্ষোভে উত্তাল খুলনা, কেএমপি কার্যালয়ে তালা

ছবি: সংগৃহীত

পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সুকান্ত দাশকে ছেড়ে দেওয়ায় ক্ষোভে উত্তাল খুলনা। মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) কমিশনার ও সিটিএসবির উপ-পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ দাবিতে বুধবার কেএমপি সদর দপ্তর ঘেরাও ও প্রধান ফটকে তালা মেরে বিক্ষোভ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র ও সাধারণ জনতা। সামনের সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে মুহুর্মুহু স্লোগান দেয় তারা। এতে পুলিশ কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দারসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত ছিল।

এর আগে দুপুর সোয়া ২টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র ও সাধারণ জনতা নগরীর খানজাহান আলী সড়কে কেএমপি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে। ফলে নগরীর খানজাহান আলী সড়কের রূপসা ট্রাফিক মোড় থেকে টুটপাড়া কবরস্থান পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন হাজারো মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা থানায় কর্মরত ছিলেন এসআই সুকান্ত দাশ। কিন্তু ৫ আগস্ট ছাত্র-গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর চাকরিতে যোগ না দিয়ে তিনি পলাতক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাকর্মীসহ আন্দোলনরত ছাত্রদের ব্যাপক নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, হঠাৎ মঙ্গলবার বিকাল সোয়া ৪টার দিকে নগরীর ইস্টার্ন গেট এলাকায় এসআই সুকান্ত দাশকে একটি থ্রি হুইলারে যেতে দেখে বিক্ষুব্ধ জনতা মারধর করে খানজাহান আলী থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। কিন্তু রাতে পুলিশ তাকে থানা হেফাজত থেকে ছেড়ে দেয়। বুধবার সকালে এ খবর নগরীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়লে ছাত্ররা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। দুপুরে ছাত্ররা কেএমপি সদর দপ্তরের সামনে জড়ো হন। তাদের সঙ্গে অংশ নেন সাধারণ জনতা।

কেএমপির সামনে গিয়ে দেখা যায়, বিক্ষুব্ধরা স্লোগান দিচ্ছেন ‘এসআই সুকান্ত দাশ বাইরে কেন, পুলিশ কমিশনার জবাব দে, জবাই চাই, সুকান্তের চামড়া, খুলে নেব আমরা, সুকান্তের ফাঁসি চাই, অবিলম্বে পুলিশ কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দার ও সিটিএসবির উপ-পুলিশ কমিশনার এমএম শাকিলুজ্জামানের পদত্যাগ চাই, করতে হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য ও খুলনা মহানগরের সিনিয়র মুখপাত্র রুমি রহমান বলেন, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের সময় সোনাডাঙ্গা থানার এসআই সুকান্ত দাশ ছাত্রদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছেন। সে একাধিক মামলার আসামি। সুকান্ত দাশকে গ্রেফতার ও অবিলম্বে পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমাদের বিক্ষোভ চলবে।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের খুলনা মহানগর সদস্য সচিব জহুরুল তানভীর বলেন, দেশের তৃতীয় বৃহৎ নগরী খুলনার পুলিশ কমিশনার ব্যর্থ। তিনি খুলনায় আসার পর থেকে এখানের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তিনি এসআই সুকান্তের মতো লোককে ছেড়ে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের দোসরদের তিনি গ্রেফতার করছেন না। আমরা এমন লোককে খুলনায় দেখতে চাই না। আমরা কেএমপি কমিশনার হিসাবে একজন দেশপ্রেমিক যোগ্য লোককে চাই।’

এদিকে, পুলিশের একটি সূত্র জানায়, এসআই সুকান্ত দাশের বিরুদ্ধে খুলনা সদর থানায় ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় ১২ ডিসেম্বর মামলা করা হয়। মামলাটি বর্তমানে ডিবিতে তদন্তাধীন রয়েছে। এছাড়া মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এসএম শফিকুল আলম মনার বাড়ি ভাঙচুরসহ দুটি মামলা চলমান রয়েছে।

খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবীর হোসেন বলেন, মঙ্গলবার এসআই সুকান্ত আদালতে সাক্ষী দিয়ে তার কর্মস্থল চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা থানার উদ্দেশে ফিরছিলেন। তিনি নগরীর ইস্টার্ন গেট এলাকায় পৌঁছালে স্থানীয়রা তাকে মারধর করে। পুলিশ ও স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে। পরে তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে যান। তার বিরুদ্ধে খানজাহান আলী থানায় কোনো অভিযোগ নেই।

এ ব্যাপারে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, এসআই সুকান্তসহ সারা দেশে বহু পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। তদন্তে যাদেরই অপরাধ প্রমাণিত হবে তাদেরকেই গ্রেফতার করা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায় না। ছাত্ররা আমার পদত্যাগ চাইছে, আমার পদত্যাগে যদি সমস্যার সমাধান হয়ে যায়, তাহলে পদত্যাগ করতে আমার কোনো অসুবিধা নেই।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম