Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

খামেনির তীব্র সমালোচনা

ইরানে আবারও হামলার হুমকি ট্রাম্পের

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ইরানে আবারও হামলার হুমকি ট্রাম্পের

ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধে ইরান জয় পেয়েছে বলে দাবি করেছিলেন সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। তার এ দাবির তীব্র সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হুমকি দিয়ে তিনি বলেছেন, পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করলে যুক্তরাষ্ট্র ইরানে আবার বোমাবর্ষণ করবে। আমি ইরানি নেতাকে হত্যার হাত থেকে রক্ষা করেছি। কিন্তু খামেনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে অবজ্ঞা দেখিয়েছেন। ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে এসব কথা বলেন। এদিকে ট্রাম্পের এ বক্তব্যকে ‘অসম্মানজনক ও অগ্রহণযোগ্য’ উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি শনিবার এক্সে এক পোস্টে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি মনেপ্রাণে চুক্তি করতে চান, তাহলে তাকে আয়াতুল্লাহ খামেনির প্রতি অসম্মানজনক ভাষা ব্যবহার করা বন্ধ করতে হবে। এদিকে শোক-সমবেদনার মাধ্যমে ইসরাইলি হামলায় নিহত ইরানের সামরিক বাহিনী ও বিজ্ঞানীদের জানাজায় অংশ নিয়েছেন হাজারো মানুষ। শনিবার তেহরানের ইঙ্গেলাব (ইনকিলাব বা বিপ্লব) স্কয়ারে সমবেত হয়েছিলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানসহ বাহরাইন, ইরাক ও আরও কয়েকটি আরব দেশের প্রতিনিধি। খবর এএফপি, রয়টার্স, আলজাজিরার।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পোস্টে দাবি করেন, তিনি খামেনিকে ‘এক সহিংস ও অপমানজনক’ মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছেন। ট্রাম্প আরও লিখেছেন, আগের দিন এক বক্তব্যে ইরানের ‘বিজয়’ দাবি করার সময় খামেনি ‘নির্লজ্জ ও বোকামিপূর্ণ’ মিথ্যা বলেছেন। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার জবাবে কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে পালটা হামলা চালিয়ে তেহরান মূলত ওয়াশিংটনের গালে ‘কষে চড়’ মেরেছে-খামেনির এমন বক্তব্যের জবাবে শুক্রবার দেওয়া ট্রুথ পোস্টে ট্রাম্প জানান, ‘চূড়ান্ত কিছু করা’ থেকে ইসরাইলকে তিনি সরে আসতে বলেছেন।

খামেনির উদ্দেশে ট্রাম্প লিখেছেন, ‘তার দেশ ধ্বংস হয়ে গেছে। তার তিনটি ক্ষতিকর পারমাণবিক স্থাপনাও ধ্বংস হয়ে গেছে। আমি ঠিক জানতাম সে কোথায় আশ্রয় নিয়েছে এবং আমি ইসরাইল বা মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীকে তা জানাইনি, তাকে হত্যা করতে দেইনি। আমি তাকে একটি ভয়ানক ও লজ্জাজনক মৃত্যু থেকে রক্ষা করেছি, যদিও তাকে বলতে হয়নি ‘ধন্যবাদ, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প! ’ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়ে কাজ করছিলেন, যা তেহরানের অন্যতম প্রধান দাবি। তিনি বলেন, ‘কিন্তু তা হলো না। এর বদলে আমার বিরুদ্ধে রাগ, ঘৃণা আর ক্ষোভ ঝাড়া হলো। সঙ্গে সঙ্গেই নিষেধাজ্ঞা শিথিলসহ অন্য সব কাজ বন্ধ করে দিই।’ ইরানকে তিনি আবার আলোচনার টেবিলে ফেরার আহ্বানও জানান।

এদিকে হোয়াইট হাউজে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তেহরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরির আকাঙ্ক্ষা যদি দমানো না যায়, তাহলে তিনি নতুন করে হামলার কথা বিবেচনা করবেন কি না? প্রেসিডেন্ট দ্রুত জবাব দেন, ‘অবশ্যই। এটি প্রশ্নাতীত।’ ট্রাম্প আরও আশা প্রকাশ করেন, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) বা অন্য কোনো স্বীকৃত সংস্থার পর্যবেক্ষকদের নিজেদের পারমাণবিক স্থাপনা পরিদর্শনের সুযোগ দেবে তেহরান।

এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি সত্যিই ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি করতে চান, তাহলে তাকে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির প্রতি ‘অসম্মানজনক ও অগ্রহণযোগ্য ভাষা’ ব্যবহার পরিহার করতে হবে। শনিবার ভোরে সামাজিক মাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এমন মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্পকে খামেনির কোটি কোটি হৃদয়স্পর্শী অনুসারীর অনুভূতিতে আঘাত করা বন্ধ করতে হবে।’ এক্সে আরাগচি আরও লিখেছেন, ‘মহান ও শক্তিশালী ইরানি জনগণ বিশ্বকে দেখিয়েছে যে, ইসরাইলি শাসকগোষ্ঠীর কোনো উপায় ছিল না। তারা বাধ্য হয়ে ‘বাবার’ (ট্রাম্প) কাছে দৌড়ে গেছে আমাদের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত থেকে বাঁচতে।’

ইরানে ট্রাম্পের হামলার ক্ষমতা খর্বের প্রস্তাব নাকচ : ইরানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সামরিক অভিযান চালানোর ক্ষমতা খর্বের জন্য ডেমোক্রেটিক পার্টির উত্থাপিত এক প্রস্তাব শুক্রবার নাকচ করে দিয়েছে রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত মার্কিন সিনেট। এ প্রস্তাবে ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে সামরিক পদক্ষেপ নিতে চাইলে প্রেসিডেন্টকে কংগ্রেসের অনুমোদন নেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু ৫৩-৪৭ ভোটে প্রস্তাবটি বাতিল হয়ে যায়।

ভোটে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্যদের দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হলেও ব্যতিক্রম ছিলেন দুজন। পেনসিলভানিয়ার ডেমোক্র্যাট সিনেটর জন ফেটারম্যান রিপাবলিকানদের সঙ্গে মিলে প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেন, আর কেনটাকির রিপাবলিকান সিনেটর র‌্যান্ড পল প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে মিলে।

এ প্রস্তাবের প্রধান উদ্যোক্তা সিনেটর টিম কেইন কয়েক বছর ধরেই রিপাবলিকান বা ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টদের যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা সীমিত করার পক্ষে কাজ করে আসছেন। যুক্তরাষ্ট্রের আইনে ‘যুদ্ধ-ক্ষমতাসংক্রান্ত’ প্রস্তাবগুলো বিশেষ মর্যাদার। ফলে সিনেটকে তাৎক্ষণিকভাবে এ ধরনের প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়ে ভোটের আয়োজন করতে হয়। চলতি মাসেই কেইন প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন। তবে প্রস্তাব কার্যকর করতে হলে তা শুধু সিনেটে পাশ করলেই হতো না, প্রতিনিধি পরিষদেও হতে হতো।

ইরান এখনো কোনো বোমা তৈরি করেনি : ইরানের কাছে বর্তমানে প্রায় ১২টি পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য যথেষ্ট পরিমাণে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়েছে। তবে তারা এখনো কোনো বোমা তৈরি করেনি বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি। বৃহস্পতিবার ফ্রান্স ইন্টার রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গ্রোসি বলেন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের বিমান হামলায় ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সেগুলো এখনো কার্যকর রয়েছে। তিনি বলেন, ‘ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস হয়ে গেছে-এমন দাবি সঠিক নয়।’ তিনি বলেছেন, ফোরদো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে থাকা সেন্ট্রিফিউজগুলো অকেজো হয়ে গেছে। তবে তিনি অন্যান্য স্থাপনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাতে রাজি হননি। গ্রোসি আরও বলেন, ইরানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সংস্থাটির সম্পর্কে টানাপোড়েন বেড়েছে। ইরান এখন এজেন্সির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। দুপক্ষের মধ্যে স্পষ্ট উত্তেজনা রয়েছে।

আইএইএ’র মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পরিদর্শনের অনুরোধ করেছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তেহরান যে কোনো অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারে। শুক্রবার সামাজিক মাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। পোস্টে তিনি বলেন, ‘(আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রোসি’র) তথাকথিত সুরক্ষা চুক্তির অজুহাতে বোমাবর্ষণের শিকার স্থাপনাগুলো পরিদর্শনের ওপর যে জোর তিনি দিচ্ছেন, তা অর্থহীন এবং সম্ভবত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

উল্লেখ্য, ২৫ জুন ইরানের পার্লামেন্ট একটি বিল পাশ করেছে। এতে আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করার পথ তৈরি করেছে। এ বিল গার্ডিয়ান কাউন্সিলের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এটি আইএইএর পরিদর্শনের জন্য সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করবে।

ইসরাইলি হামলায় নিহত ইরানিদের স্মরণ : ইসরাইলি হামলায় নিহত ইরানের সামরিক বাহিনী ও বিজ্ঞানীদের জানাজায় অংশ নিতে শনিবার তেহরানের ইঙ্গেলাব (ইনকিলাব বা বিপ্লব) স্কয়ারে সমবেত হয়েছিলেন হাজারো মানুষ। সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, শনিবার ভোর থেকেই হাজারো নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী রাস্তায় নেমে আসেন। তাদের মুখে স্লোগান ছিল, ‘আমেরিকার ধ্বংস চাই’, ‘ইসরাইলের ধ্বংস চাই’, ‘আমরা ভুলব না, ক্ষমাও করব না’, ‘খামেনি, আমরা তোমার সঙ্গে আছি।’ মিছিল থেকে তারা আইএইএ’র বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝাড়েন। অনেকে সংস্থার প্রধান রাফায়েল গ্রোসির বিচারও দাবি করেন। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেখা যায়, শোকাহত মানুষ কালো পোশাকে, জাতীয় পতাকা ও শহীদদের ছবি নিয়ে মিছিলে অংশ নিয়েছেন। ইসরাইলি হামলায় নিহত কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীদের বহনকারী কফিনগুলো ছিল ইরানের জাতীয় পতাকায় মোড়ানো। সামরিক প্রতীকে সাজানো কফিনগুলো ইঙ্গেলাব স্কয়ারে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়। এরপর সেখান থেকে আজাদি (স্বাধীনতা) স্কয়ারের দিকে যাত্রা শুরু হয়। ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) তেহরান শাখার কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান হাসানজাদে জানান, শহিদদের এই জানাজা ‘অপারেশন ট্র– প্রমিস-৩’-এরই অংশ। তিনি বলেন, ইঙ্গেলাব স্কয়ার থেকে আজাদি স্কয়ারের এই মিছিল ইরানের দৃঢ় অবস্থান এবং জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। তিনি আরও জানান, ইরানের সমাজের সব স্তরের মানুষ এই শোকযাত্রায় অংশ নিয়েছেন। তাদের ত্যাগ শুধু ক্ষতি নয়, বরং গোটা জাতির জন্য প্রেরণার উৎস। এ সময় শ্রদ্ধা জানানো হয় স্ত্রী ও মেয়েসহ ইসরাইলি হামলায় নিহত ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরির প্রতি। এছাড়া পরমাণু বিজ্ঞানী মোহাম্মদ মেহদি তেহরানচি ও তার স্ত্রী, যুদ্ধের প্রথম দিন নিহত আইআরজিসি প্রধান হোসেইন সালামিকেও স্মরণ করা হয়। এছাড়া শহীদদের তালিকায় রয়েছেন ৩০ জন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও চারটি শিশু।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম