Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন

নির্দোষ হলে প্রাথমিক তদন্তেই আসামির রেহাই

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ঢাকায় প্রাথমিকভাবে তিন বছরের জন্য চালু হচ্ছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কার্যালয়। রোববার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এর সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) অনুমোদন দেওয়া হয়। এছাড়াও বৈঠকে ফৌজদারি কার্যবিধির একটি সংশোধন অনুমোদন করা হয়েছে। মামলার প্রাথমিক তদন্তের পরেই সংশ্লিষ্টতা না থাকলে আসামিরা রেহাই পাবেন। অর্থাৎ ভুয়া মামলা বা মামলা বাণিজ্য কমবে। বৈঠক শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এসব তথ্য জানান। এ সময় তিনি আরও জানান, মুরাদনগরে আলোচিত ধর্ষণের ঘটনায় সরকার মর্মাহত। বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিচার করবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমও এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

আইন উপদেষ্টা বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ফৌজদারি কার্যবিধির একটি সংশোধন অনুমোদন করা হয়েছে। নতুন এই সংশোধন অনুযায়ী, ভুয়া মামলা বা মামলার ভুয়া আসামিরা এখন থেকে প্রাথমিক তদন্তের পরেই সংশ্লিষ্টতা না থাকা সাপেক্ষে রেহাই পাবেন। তিনি বলেন, নতুন বিধানে বলা হয়েছে, কমিশনার, এসপি বা এসপি পদমর্যাদার কোনো পুলিশ কর্মকর্তা তার নিয়ন্ত্রণাধীন কোনো মামলার বিষয়ে যদি মনে করেন, তদন্ত কর্মকর্তার কাছে প্রাথমিক প্রতিবেদন চাওয়া যৌক্তিক, তাহলে তিনি তা চাইতে পারবেন। প্রতিবেদন প্রস্তুত হলে তখন তা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেবেন। ম্যাজিস্ট্রেট যদি দেখেন, মামলায় কোনো আসামিকে বিনা অপরাধে জড়ানো হয়েছে, যার বিরুদ্ধে যথাযথ কোনো প্রমাণ নেই, তখন তিনি (ম্যাজিস্ট্রেট) সঙ্গে সঙ্গে তাকে (বিনা অপরাধে জড়ানো ব্যক্তি) মুক্তি দিতে পারবেন।

আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা আশা করছি, আমাদের পুলিশ প্রশাসন ও আদালত প্রশাসন একসঙ্গে কাজ করবে। যেসব মামলায় গ্রেফতার বা মামলা বাণিজ্য হচ্ছে, তাদের আদালত প্রি ট্রায়াল স্টেজে (প্রাথমিকভাবে) মামলা থেকে মুক্তি দিতে পারবেন।’ আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে অনেক নিরপরাধ মানুষ হয়রানি থেকে বেঁচে যাবেন। তখন মামলা বাণিজ্য থেকে অনেকে রেহাই পাবেন। কিন্তু এর মানে এ নয় যে মামলার তদন্ত থেমে থাকবে। তদন্ত চলতে থাকবে। আবার পুলিশ যদি পরবর্তী সময়ে দেখে, আগে যাদের মামলা থেকে রেহাই দেওয়া হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে পরে প্রমাণ পাওয়া গেছে, তখন তাদের নাম আবার মামলায় যুক্ত করতে পারবে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, মুরাদনগরে যে জঘন্য ঘটনা ঘটেছে, এ ঘটনায় দেশের যে কোনো নাগরিকের মতো আমরা সবাই মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ। এ ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রধান আসামিসহ ধর্ষণের শিকার নারীর ছবিগুলো যারা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটা করেছে, তাদের সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

আসিফ নজরুল বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। ওনাদের সঙ্গে আমাদের সরকারের অনেকদিন ধরে আলোচনা চলছিল। মানবাধিকার মিশনের একটা শাখা ওনারা বাংলাদেশে খুলতে চাচ্ছিলেন। ওই সময়ে আলোচনাও করেছিলেন। এই আলোচনার একটা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। আইন উপদেষ্টা জানান, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে রোববার বিষয়টি নীতিগতভাবে অনুমোদন হয়েছে। কয়েকজন উপদেষ্টা মিলে এটা পরীক্ষা করব। তা চূড়ান্ত করে ভলকার তুর্কের কাছে তা পাঠানো হবে।

আসিফ নজরুল আশা প্রকাশ করেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে। আর সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক একটা অফিস হবে। প্রাথমিকভাবে এটা হবে তিন বছরের জন্য। তিন বছর পর দুই পক্ষই যদি মনে করে, এটা নবায়ন করা দরকার, তাহলে তারা বিষয়টা বিবেচনা করে দেখতে পারবে। আসিফ নজরুল আরও বলেন, ‘আমাদের আশা, ভবিষ্যতে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর পাশাপাশি ওএইচসিএইচআর-এর এই স্থানীয় অফিস গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে।’

প্রসঙ্গত, সুইজারল্যান্ডের জেনেভাভিত্তিক ওএইচসিএইচআর বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সুরক্ষা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে কাজ করে। এ সংস্থা জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থান ও এর পরবর্তী সময়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ নিয়ে ১১৪ পৃষ্ঠার বিশদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনায় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্বিচার গ্রেফতার, নির্যাতন এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগ তুলে ধরা হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, ওই সময়ে প্রায় ১ হাজার ৪শ মানুষ নিহত এবং ১২ হাজার মানুষ আহত হওয়ার প্রমাণ মিলেছে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম