Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় কর্মসূচি প্রত্যাহার

হার্ডলাইনে মিলল সমাধান

সংকট নিরসনে ৫ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি গঠন * আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ৬ কর্মকর্তার দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

হার্ডলাইনে মিলল সমাধান

অবশেষে ব্যবসায়ীদের মধ্যস্থতায় ‘শাটডাউন’ ও ‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছে আন্দোলনরত এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। সরকার হার্ডলাইনে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত তারা পিছু হটতে বাধ্য হলেন। রোববার সন্ধ্যায় ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে এ ঘোষণা দেন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাসান মুহাম্মদ তারেক রিকাবদার। এর আগে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এনবিআরের আওতাধীন সব শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস ঘোষণার প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। যা অত্যাবশ্যক পরিষেবা আইন ২০২৩-এর অধীনে কার্যকর হবে। এই আইনের বিধান অনুযায়ী, সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করে চাকরিরত কোনো ব্যক্তি ধর্মঘট শুরু করতে বা চলমান রাখতে পারবেন না। এটি অমান্য করলে দায়ী ব্যক্তি ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। 

এদিকে সৃষ্ট সংকট নিরসনের উপায় খুঁজে বের করতে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) অফিসে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের নেতাদের সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করেন ব্যবসায়ী নেতারা। ব্যবসায়ীদের পক্ষে বৈঠকে অংশ নেন বিসিআই সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী, মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি কামরান টি রহমান ও সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ, সাবেক এফবিসিসিআই সভাপতি মীর নাসির, বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী প্রমুখ। অন্যদিকে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাসান মুহাম্মদ তারেক রিকাবদারের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের প্রতিনিধিদল এ বৈঠকে অংশ নেয়। 

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিসিআই সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী বলেন, এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলন নিয়ে ব্যবসায়ী নেতারা অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করেছেন। প্রকৃতপক্ষে এই শাটডাউন কর্মসূচির যৌক্তিক কোনো কারণ ছিল না। কিছু ভুল বোঝাবুঝির জন্য হয়তো এ রকম একটা বিপর্যয় সবাইকে দেখতে হয়েছে। আন্দোলনকারীরা তাদের যৌক্তিক এবং আইনসংগত বিষয়গুলো নিয়ে আবার সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। দরকার হলে ব্যবায়ীরা মিলে মধ্যস্থতা করব। তিনি বলেন, এনবিআর কর্মকর্তারা এনবিআর সংস্কার চান। কিন্তু এটা সব অংশীজনকে নিয়ে যথাযথ আলোচনার ভিত্তিতে সুন্দর একটা পদ্ধতিতে সংস্কার করতে হবে। যাতে দেশের স্বার্থ সুরক্ষাসহ সব পক্ষের যৌক্তিক বক্তব্যের প্রতিফলন ঘটে। 

তিনি আরও বলেন, সরকার আমাদের যেভাবে আশ্বস্ত করেছে, আমরাও সেভাবে তাদের আশ্বস্ত করেছি। এখানে কিছু হয়রানিমূলক ঘটনা ঘটতে পারে। সেটা নিয়েও আমরা আলোচনা করেছি। সরকার আমাদের আশ্বস্ত করেছে, এ জিনিসগুলো ওনারা বিবেচনার মধ্যে নিচ্ছে যাতে আগামী দিনে কোনো ধরনের জটিলতার সৃষ্টি না হয়। 

এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাসান তারেক রিকাবদার বলেন, দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতাদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে এবং দেশের আমদানি-রপ্তানি ও সাপ্লাই চেইন সচল রাখা তথা অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে এবং জনগণের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ কমপ্লিট শাটডাউন প্রত্যাহার করেছে। তবে একটি পূর্ণাঙ্গ এবং টেকসই রাজস্বব্যবস্থা সংস্কারে আমাদের উদ্যোগ ও কার্যক্রম যথারীতি অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও বলেন, সরকার রাজস্বব্যবস্থা সংস্কারে যে ৫ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেছে, একে ঐক্য পরিষদ স্বাগত জানায়। আমরা এ কমিটির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করে রাজস্ব সংস্কার করতে অবদান রাখতে পারব বলে আশা করি। 

আন্দোলন পরিকল্পিত ও দুরভিসন্ধিমূলক : চলমান আন্দোলনকে পরিকল্পিত ও দুরভিসন্ধিমূলক আখ্যা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। রোববার বিকালে এক বিবৃতিতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার সব অংশীজনের পরামর্শ অনুযায়ী এনবিআর পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে যে, রাজস্ব সংস্কারের কাজকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী নজিরবিহীনভাবে দুই মাস ধরে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি এবং রাজস্ব আদায় কার্যক্রম অন্যায় ও অনৈতিকভাবে ব্যাহত করে আন্দোলনের নামে চরম দুর্ভোগ তৈরি করেছে, যা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য। সংস্কারের বিরোধিতা ছাড়াও অর্থবছরের শেষ দুই মাসে তারা রাজস্ব আদায় কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত করেছে। এই তথাকথিত আন্দোলন পরিকল্পিত ও দুরভিসন্ধিমূলক, যা জাতীয় স্বার্থ এবং নাগরিক অধিকারের চরম পরিপন্থি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অবিলম্বে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মস্থলে ফিরে যাবেন এবং আইনবিরোধী ও জাতীয় স্বার্থবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসবেন। অন্যথায় দেশের জনগণ ও অর্থনীতির সুরক্ষায় সরকার কঠোর হতে বাধ্য হবে।

উপদেষ্টা কমিটি গঠন : এনবিআরের উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সভাপতিত্বে পাঁচ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেছে সরকার। রোববার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন-গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। তবে এ কমিটির বিস্তারিত টার্মস অব রেফারেন্স সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়নি। 

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, জনস্বার্থ রক্ষায় এনবিআরের আওতাধীন সব কাস্টম হাউজ, আইসিডি, বন্ড কমিশনারেট ও শুল্ক স্টেশনগুলোর সব শ্রেণির চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় সার্ভিস ঘোষণার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। অত্যাবশ্যক পরিষেবা আইন ২০২৩-এ বলা আছে, সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করে চাকরিরত কোনো ব্যক্তি ধর্মঘট শুরু করতে বা চলমান রাখতে পারবেন না। এ আদেশ অমান্য করলে অথবা অমান্য করার জন্য কোনো ব্যক্তিকে প্ররোচিত করলে অথবা কাজ করতে বা কাজ চলমান রাখতে অস্বীকার করলে অথবা যৌক্তিক কারণ ছাড়া কাজে অনুপস্থিত থাকলে বা চাকরি থেকে পরিত্যাগ করলে সেটি অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে। অপরাধের ধরন অনুযায়ী ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডেরও বিধান আছে। এছাড়া বিভাগীয় ব্যবস্থারও সুযোগ আছে আইনে।

৬ কর্মকর্তার দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু : সংস্কার ও চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবিতে আন্দোলনে থাকা ছয়জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুস ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রোববার বিকালে কমিশনের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন।

যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তারা হলেন-সদস্য (আয়কর নীতি) একেএম বদিউল আলম, কর অঞ্চল-৮ ঢাকার অতিরিক্ত কর কমিশনার মির্জা আশিক রানা, বিসিএস কর একাডেমির যুগ্ম কর কমিশনার মোহাম্মদ মোরশেদ উদ্দীন খান, কর অঞ্চল-১৬ ঢাকার যুগ্ম-কর কমিশনার মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা, নিরীক্ষা-গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর মূল্য সংযোজন কর ঢাকার অতিরিক্ত কমিশনার হাছান তারেক রিকাবদার এবং কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, ঢাকার (দক্ষিণ) অতিরিক্ত কমিশনার সাধন কুমার কুণ্ডু।

দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। বিগত বছরগুলোয় তারা বিভিন্ন শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের কর ফাঁকির সুযোগ করে দিয়েছেন। এর ফলে রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। একই সঙ্গে কর ফাঁকির মাধ্যমে নিজেরা লাভবান হয়েছেন।


Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম