পীরগঞ্জে সাংবাদিকদের নাহিদ ইসলাম
শুধু সরকার পতন নয় জুলাই আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল নতুন বন্দোবস্ত
শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে রংপুর থেকে এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ শুরু
রংপুর ব্যুরো ও পীরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জুলাই আন্দোলনটা শুধুমাত্র সরকার পতনের জন্য ছিল না, এটি ছিল নতুন বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। একটি দল পরিবর্তন বা ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য এই গণ-অভ্যুত্থান ঘটেনি। একটি গণতান্ত্রিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার জন্যই এই অভ্যুত্থান ঘটেছিল। তিনি মঙ্গলবার সকালে গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে রংপুরের পীরগঞ্জের বাবনপুর গ্রামে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। ঢাকা থেকে তার সঙ্গে যাওয়া এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম, ডা. তাসনিম জারাসহ দুই শতাধিক নেতাকর্মী এবং শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেনকে নিয়ে নাহিদ ইসলাম কবর জিয়ারত করেন। শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে রংপুর থেকে এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ শুরু হলো। নাহিদ ইসলাম বলেন, এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি মানে দেশ গঠনের জন্য যে উদ্যোগ দরকার তার জন্য এ কর্মসূচি। এর মাধ্যমে আমরা মানুষের সঙ্গে কথা বলব। আবু সাঈদের স্বপ্ন, জুলাইয়ের স্বপ্ন আমরা মানুষের কাছে তুলে ধরব। আবু সাঈদ লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা। তিনি বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদ আমরা আদায় করে ছাড়ব। আমরা বাংলার প্রতি প্রান্তরে যাব। সব মানুষকে আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে উদ্বুদ্ধ করব। আবু সাঈদরা যে কারণে শহীদ হয়েছিল আমরা সেই আকাঙ্ক্ষা মানুষের কাছে তুলে ধরব। আবু সাঈদ যেভাবে পুলিশের গুলির সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিল, সেটাই ছিল আমাদের অনুপ্রেরণা। আবু সাঈদের মতো অন্য শহীদরা ফ্যাসিবাদী বিলোপের বিরুদ্ধে আমাদের যে লড়াই, তার অনুপ্রেরণা। যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশের মানুষ আবু সাঈদ, ওয়াসীম, মুগ্ধসহ সব শহীদের এবং আহত যোদ্ধাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
নাহিদ বলেন, একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের অবশ্যই বিচার, সংস্কার এবং গণপরিষদের মাধ্যমে নতুন সংবিধানের দিকে যেতে হবে। আমরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলতে চাই, যারা মনে করছেন, হাজারো-লক্ষ মানুষ যারা রাজপথে নেমে এসেছিল তারা ঘরে ফিরে গেছেন, তাহলে আপনারা ভুল ভাবছেন। আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি পথে-প্রান্তরে যাব। ছাত্র-জনতা, তরুণ, শ্রমিকদের আবারও রাজপথে নেমে আসতে আহ্বান জানাব।
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, জুলাইয়ের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে আমরা রংপুর থেকে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি শুরু করছি। হাজারো মানুষের জীবন, রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে নতুন বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি। এই নতুন বাংলাদেশকে গড়তে অবশ্যই পুরোনো কাঠামো ভেঙে নতুন বন্দোবস্তের জন্য মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে। গণহত্যার বিচার শেষ করতে হবে। গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংবিধান রচনা করতে হবে।
এর আগে এনসিপি নেতারা আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন, মা মনোয়ারা বেগম, ভাই আবু হোসেনসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। আবু সাঈদের অশ্রুসজল ও আবেগাপ্লুত বাবা-মা তাদের সন্তান হত্যার দ্রুত বিচার চান। এনসিপির নেতারা তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। এ সময় আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম মাথায় হাত বুলিয়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক দফার ঘোষক নাহিদ ইসলামকে দোয়া করেন। এনসিপি নেতারা দেশব্যাপী জুলাই পদযাত্রার মাধ্যমে আবু সাঈদের স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়তে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তারা সড়কপথে গাড়িবহর নিয়ে গাইবান্ধার উদ্দেশে রওয়ানা হন।
তারা গাইবান্ধায় পথসভা ও পদযাত্রা করেন। বিকালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবু সাঈদ গেটের সামনে এসে যেখানে আবু সাঈদ আত্মদান করেছেন সে ঘটনাস্থলে, রংপুর পার্কের মোড়, লালবাগ, শাপলা চত্বর, জাহাজ কোম্পানির মোড়, টাউন হলসহ বিভিন্ন স্থানে পথসভা করেন।
গাইবান্ধায় সমাবেশ : গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, মঙ্গলবার বিকালে গাইবান্ধা পৌর পার্কের শহীদ মিনার চত্বরে সমাবেশে নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই আন্দোলনে নতুন দেশ হয়েছে, কিন্তু দেশ গঠন হয়নি। গাইবান্ধা থেকে সেই দেশ গঠনের যাত্রা শুরু হলো। আমরা নতুন দেশ গঠনের জন্য রাজপথে নেমেছি। নতুন দেশে মানুষ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নির্ভয়ে মতপ্রকাশ ও অধিকারের কথা বলবে। এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে পার্টির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাইফুল্লাহ হায়দার, আসাদুল্লাহ আল গালিব ও আবু সাঈদ লিয়ন, উত্তরাঞ্চলের সংগঠক নাজমুল হাসান সোহাগ, দক্ষিণাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ডা. মাহমুদা আলম মিতু ও মোহাম্মদ আতাউল্লাহ, সদস্য ফিহাদুর রহমান দিবস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। গাইবান্ধায় সমাবেশ শেষে তারা সড়কপথে পলাশবাড়ির উদ্দেশে যাত্রা করেন। পরে সাদুল্লাপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসংলগ্ন সড়কে এক পথসভা করেন।
