Logo
Logo
×

আজকের পত্রিকা

বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী ‘খালুই’

Icon

সাকী মাহবুব

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী ‘খালুই’

একসময়ের গ্রামীণ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল ‘খালুই’। মাছচাষ, সংরক্ষণ ও খাবারের জন্য এ ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিটি আজ বিলুপ্তির পথে। আধুনিক জীবনের ছোঁয়ায় গ্রামবাংলার অনেক প্রাচীন উপকরণ কিংবা কৌশল যেমন বিলুপ্ত হচ্ছে, তেমনই গ্রামীণ এ মৎস্যচাষের অবিচ্ছেদ্য অংশ ‘খালুই’ও আজ স্মৃতি হয়ে যাচ্ছে। খালুই সাধারণত তৈরি হতো বাঁশ, তালগাছের কাণ্ড, কাঠ বা পাটখড়ি দিয়ে। এর গায়ে ছোট ছোট ছিদ্র বা ফাঁক থাকত, যাতে পানির প্রবাহ চলতে পারে; কিন্তু মাছ বেরিয়ে যেতে না পারে। মাছ ধরার পর, বিশেষ করে অতিরিক্ত মাছ, এই খালুইয়ে সংরক্ষণ করা হতো। খাল, বিল কিংবা পুকুরের পাশে এ খালুই ঝুলিয়ে বা স্থাপন করে জীবিত মাছ রাখা হতো পরবর্তী ব্যবহার বা বিক্রির জন্য।

খালুই শুধু মাছ রাখার একটি উপায়ই ছিল না, এটি ছিল গ্রামের ছোটখাটো একটি শিল্পও। স্থানীয় কারিগররা এটি তৈরি করে বিক্রি করতেন, অনেকের জীবিকার অংশ ছিল এটি। খালুইয়ে সংরক্ষিত মাছ পরিবারের প্রয়োজন মেটাত, আবার স্থানীয় হাটে বিক্রির সুযোগও করে দিত। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে খালুই হারিয়ে যেতে বসেছে। প্লাস্টিক, স্টিল কিংবা ফ্রিজ-এসব আধুনিক উপকরণ সহজলভ্য হওয়ায় মানুষ আর খালুই ব্যবহার করে না। বাঁশ ও কাঠের সংকট, খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়া, গ্রামীণ পেশাগুলোর প্রতি অবহেলা-সব মিলিয়ে খালুই এখন বিলুপ্তির পথে।

ঐতিহ্যবাহী এ খালুই সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া তাই জরুরি। গ্রামীণ মেলা, স্কুল-কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম কিংবা বিভিন্ন প্রদর্শনীতে খালুই-এর পরিচয় তুলে ধরতে হবে। স্থানীয় কারিগরদের পুনরায় উৎসাহ দিয়ে এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব। খালুই আমাদের চাষাবাদ, মাছধরা ও জীবিকার ইতিহাসের এক নীরব সাক্ষী, যাকে রক্ষা করা আমাদের সাংস্কৃতিক দায়িত্ব।

শিক্ষক, কশবামাজাইল, পাংশা, রাজবাড়ী

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম