জনস্বার্থবিরোধী বিষয়ে ছাড় দেবে না বিএনপি: তারেক রহমান
যুগান্তর প্রতিবেদন, পটুয়াখালী
প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপি গত ১৬ বছরে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। দেশ ও জনগণের স্বার্থে আগামীতেও আরও ছাড় দিতে রাজি আছে। তবে জনগণের স্বার্থবিরোধী কোনো বিষয়ে বিএনপি কখনোই ছাড় দেবে না। পটুয়াখালী জিমনেশিয়ামে জেলা বিএনপির সম্মেলনে বুধবার প্রধান অতিথির ভার্চুয়াল বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
এর আগে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল আউয়াল মিন্টু। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল রশিদ চুন্নু মিয়ার সভাপতিত্বে সম্মেলন সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব স্নেহাশু সরকার কুট্টি। বক্তৃতা করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, মাহবুবুল হক নান্নু প্রমুখ।
তারেক রহমান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার যেসব সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে এসেছে, তা অনেক আগেই বিএনপি জনগণের সামনে উত্থাপন করেছে। কিছু বিষয়ে দ্বিমত থাকলেও বৃহত্তর স্বার্থে বিএনপি ছাড় দিয়েছে। কারণ বিএনপি চায় একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। তিনি বলেন, বিএনপির কারণে সংস্কার এগোচ্ছে না এ অভিযোগ বিভ্রান্তিকর। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের ভিত্তি রচনায় রাষ্ট্র সংস্কারে ছাড় দিয়েছে বিএনপি। তবে এর মানে এই নয় যে, সবকিছুতেই ছাড় দেওয়া হবে।
শিগগিরই দেশে ফিরবেন বলে জানান তারেক রহমান। ছোট ছোট রাজনৈতিক দলের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, শুধু বিএনপি নয়, স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে আরও অনেক শক্তির অবদান রয়েছে। তাই প্রয়োজনীয় ঐক্যের জন্য সব দলের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, পতিত স্বৈরাচারের আমলে ৭০০ নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন, অসংখ্য আহত ও পঙ্গু হয়েছেন। বিএনপির এমন কোনো নেতাকর্মী নেই যার নামে কম করে হলেও একটি মিথ্যা মামলা নেই। এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে বিএনপির কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়নি।
দলের ত্যাগী কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, একজন জাতীয়তাবাদী কর্মী হিসাবে দেশের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা সবচেয়ে বেশি। মানুষ আমাদের কাছে অনেক কিছু প্রত্যাশা করে। এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের আচরণ করতে হবে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, মানুষের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়ে যেসব ফ্যাসিস্ট সরকার জনগণের আস্থা হারিয়ে পালিয়েছে, আমাদের সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি করা যাবে না। এমন কোনো কাজ করা যাবে না যাতে মানুষ বিএনপির প্রতি বিরক্ত হয়। জনগণের সঙ্গে থেকেই তাদের আস্থা অর্জন করতে হবে।
তারেক রহমান আরও বলেন, দলের সুনাম যাতে কারও দ্বারা নষ্ট না হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। দলের দুর্নাম হয় এমন কাউকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। বিএনপির নেতা বা কর্মী হিসাবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশাসনকে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহায়তা করতে হবে। কোনোভাবেই আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে যেন কেউ ষড়যন্ত্র করতে না পারে সেজন্য প্রতিটি নেতাকর্মীকে সজাগ থাকতে হবে।
ব্যালট পেপারের মাধ্যমে কাউন্সিলররা তাদের নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন। এই (পটুয়াখালী জেলা কমিটি) নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের মানুষের কাছে আরেকটি মেসেজ পৌঁছে দিতে চাই যে, বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। আগামী দিনে সাড়ে ১২ কোটি মানুষ যেন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে।
আলোচনাপর্ব শেষে কাউন্সিল অধিবেশনে ভোটের মাধ্যমে জেলা কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। বরিশাল বিভাগে এটিই প্রথম জেলা বিএনপির সম্মেলন, যেখানে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্ধারিত হচ্ছে। দীর্ঘ ২৩ বছর পর অনুষ্ঠিত এ সম্মেলন ঘিরে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ করা গেছে। ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে যায় সম্মেলনস্থল ও আশপাশের এলাকা। সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সম্মেলনস্থলে আসতে শুরু করেন।
২০০২ সালে সম্মেলনের পর ২০১৩ সালের ১৪ মে মঙ্গলবার ১৭১ সদস্যের পটুয়াখালী জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। সভাপতি হন আলতাফ হোসেন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক করা হয় এমএ রব মিয়াকে এবং সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয় অ্যাড. মো. মজিবুর রহমান টোটনকে। এই কমিটি ২০২০ সালের ২ নভেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে। ওই বছরের ৩ নভেম্বর ৩১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি।
