Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

দিনভর দুর্ভোগ লাখো মানুষের

অবরোধ থানা ঘেরাও, পটিয়ার ওসি প্রত্যাহার

Icon

পটিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অবরোধ থানা ঘেরাও, পটিয়ার ওসি প্রত্যাহার

ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের পটিয়ায় ছাত্রদের লাঠিপেটার অভিযোগে থানা ঘেরাও ও মহাসড়ক অবরোধ করেছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। বুধবার সকাল থেকে তারা পটিয়া থানার গেটে অবস্থান নেন। বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে প্রায় ৩০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। আটকা পড়ে শত শত যানবাহন। সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হন পরীক্ষার্থী, শিক্ষার্থী, সাধারণ যাত্রী, রোগী ও পরিবহণ শ্রমিকরা।

আন্দোলনকারীরা থানার ওসিকে বরখাস্তের দাবি জানান। বিকাল সোয়া ৬টার দিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য ও চট্টগ্রামের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি ঘোষণা দেন, দাবি পূরণ না হলে আজ সকাল ১০টা থেকে পুরো চট্টগ্রাম ব্লকেড দেওয়া হবে। ৮ ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ৭টায় তারা সড়ক থেকে সরে গেলে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়। 

পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে পটিয়া থানার ওসি জায়েদ নূরকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাকে চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। তার স্থানে চন্দনাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) যুযুৎসু চাকমাকে পদায়ন করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুল ইসলাম। এর আগে বিকালে পটিয়া থানার ওসি জায়েদ নূর বলেছিলেন, ‘মব’ সৃষ্টি করে ছাত্ররা থানায় প্রবেশ করে ভাঙচুর করেছিল। আমরা তাদের নিবৃত্ত করেছিলাম। পটিয়ার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি তালহা রহমান জানান, মঙ্গলবার রাতে রাঙামাটি জেলা ছাত্রলীগ নেতা দীপংকর দে’কে আটক করে থানায় হস্তান্তর করতে গেলে নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের বাগ্বিতণ্ডা হয়। পুলিশ ওই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে বৈষম্যবিরোধীদের লাঠিপেটা করে। 

ছাত্ররা জানান, মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে পটিয়া থানা কম্পাউন্ডে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের পুলিশ লাঠিপেটা করেছে। ওই ঘটনায় অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন। তারা হলেন-বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক আশরাফুল ইসলাম তৌকির, মো. নাদিম, আয়াস, আকিল, ইরফান উদ্দিন, তাসরিয়ান হাসান, রায়হান উদ্দিন, সাইফুল ইসলাম, জাহেদুল করিম শাহী, মুনতাসির আহমদ ও সাইফুল ইসলাম। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। 

ছাত্রদের দাবি, রাত দেড়টায় দ্বিতীয় দফা পুলিশ তাদের ওপর হামলা করে। এর প্রতিবাদে বুধবার সকাল থেকে থানার গেটে অবস্থান নিলে সেখানেও মারধর করা হলে এক নারী আন্দোলনকারী আহত হন। পরে তারা সড়ক অবরোধ করেন। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার সকাল ৯টার দিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা পটিয়া থানার গেটে অবস্থান নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। আন্দোলনে যোগ দেন চট্টগ্রাম ও জেলা এনসিপি এবং ছাত্রনেতারা। তাদের মধ্যে রয়েছেন দক্ষিণাঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক জুবায়রুল হাসান আরফি, চট্টগ্রাম মহানগর মুখ্য সংগঠক তৌসিফ ইমরোজ, মহানগর সংগঠক মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, মহানগর সদস্য নিজাম উদ্দিন, বৈষম্যবেিরাধী আন্দোলনের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক জুবায়ের হোসেন প্রমুখ। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা বেলা ১১টায় ইন্দ্রপুলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অবরোধ করেন। তিনশ থেকে চারশ আন্দোলনকারী সড়ক আটকে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এতে ইন্দ্রপুলের উভয়দিকে ৩০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। একজন শিক্ষার্থী জানান, তিনি পটিয়া সদর থেকে মনসাবাদামতলে বাড়িতে যাচ্ছিলেন। দেড় ঘণ্টা অপেক্ষার পর তিনি হেঁটে বাড়ি ফিরেন। এছাড়া কক্সবাজার ও চট্টগ্রামমুখী একাধিক যাত্রী জানান, তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতে বসে ছিলেন। অনেকে হেঁটে বা বিকল্প সড়ক দিয়ে গন্তব্যে গেছেন। এ বিষয়ে পটিয়া থানার ওসি জায়েদ নূর বলেন, ছাত্ররা মব সৃষ্টি করে থানায় প্রবেশ করে ভাঙচুর করেছিল। প্রহরীকে ফেলে দিয়েছিল। যে ছেলেটাকে নিয়ে এসেছিল, তাকে মারতে মারতে থানায় নিয়ে আসা হয়। আমরা আইনের মধ্যে থেকে ছাত্রদের নিবৃত্ত করেছি। যুবলীগের যে ছেলেটাকে নিয়ে এসেছিল তাকে পুলিশের হেফাজতে নিয়েছিলাম। ছাত্ররা সিস্টেম ব্রেক করেছিল। থানায় ভাঙচুর ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছিল। পুলিশ শুধু নিবৃত্ত করেছে। 

চট্টগ্রামে ডিআইজির সাক্ষাৎ না পেয়ে সড়ক অবরোধ : চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, পটিয়া থানার ওসি আবু জায়েদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে দুপুরে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজির কার্যালয়ে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপির নেতাকর্মীরা। তারা ডিআইজিকে কার্যালয়ের বাইরে এসে তাদের সঙ্গে কথা বলার দাবি জানান। কিন্তু এতে সাড়া না পেয়ে তারা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। দুপুর ২টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত তারা খুলশী এলাকার জাকির হোসেন রোড অবরোধ করে রাখেন। এ সময় তারা পটিয়া থানার ওসি ও সেকেন্ড অফিসারের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন।


Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম