ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে ড. আলী রীয়াজ
তত্ত্বাবধায়ক সরকারে একমত সব দল
সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণে স্বচ্ছতার জন্য একটি বিশেষায়িত কমিটি হবে * তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন, কাঠামো এবং এখতিয়ার নিয়ে সব দল কাছাকাছি * অন্য ইস্যুতে জুলাইয়ের মাঝামাঝি একটা অবস্থানে পৌঁছানো যাবে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে দেশের সব রাজনৈতিক দল অভিন্ন মত দিয়েছে। এর গঠন, কাঠামো এবং এখতিয়ার নিয়েও কাছাকাছি তারা। এছাড়া সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণে স্বচ্ছতার জন্য একটি বিশেষায়িত কমিটি হবে। অন্যান্য বিষয় চলতি জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে একটা অবস্থানে পৌঁছানো যাবে। বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের অষ্টম দিনের আলোচনা শেষে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার প্রস্তাব দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, দুটি বিষয়ে প্রায়ই ঐকমত্য হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণে স্বচ্ছতার জন্য একটি বিশেষায়িত কমিটি হবে। দ্বিতীয়ত, সংবিধানে একটা বিশেষজ্ঞ কমিটির বিষয়ে উল্লেখ থাকবে। সীমানা পুননির্ধারণে আলাদা কমিশন করার প্রস্তাব নিয়ে বিপরীতমুখী অবস্থানে দেখা যায় বিভিন্ন দলকে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন-দেশের সব রাজনৈতিক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অভিন্ন মত পোষণ করেছে। এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট ঐকমত্য আছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন ও কাঠামো এবং এর এখতিয়ার নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এসব বিষয়ে খোলামেলা আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলো অনেক কাছাকাছি এসেছে। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়াও নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়েও আলোচনায় উল্লেখযোগ্য ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচন এলাকার সীমানা নির্ধারণ বিষয়ে আশু এবং দীর্ঘমেয়াদে ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে ঐকমত্য হয়েছে। আশু ব্যবস্থা হিসাবে আগামী ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের সহায়তায় যথাযথ দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে একটি বিশেষায়িত কমিটি গঠন করতে হবে। তবে ইতোমধ্যে তা গঠিত হয়ে থাকলে (গঠিত হয়েছে) প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করতে হবে। এরপর সংসদীয় এলাকা নির্ধারণ করতে হবে সেই কমিটির পরামর্শ অনুসারে। আলী রীয়াজ আরও বলেন, দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা গ্রহণ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রতি আদমশুমারি বা অনধিক ১০ বছর পরে সংসদীয় নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৯ অনুসারে ব্যবস্থা নিতে হবে। সেক্ষেত্রে ওই অনুচ্ছেদের দফা ১-এর (গ)’র শেষে উল্লেখিত ‘এবং’ শব্দটির পর ‘আইনের দ্বারা নির্ধারিত একটি বিশেষায়িত কমিটি গঠনের বিধান’ যুক্ত করা হবে। সংশ্লিষ্ট জাতীয় সংসদের সীমানা নির্ধারণ আইন ২০২১, যা ২০২৫ সালে সংশোধিত হয়েছে, তার ৮(৩) সঙ্গে যুক্ত করে ওই কমিটির গঠন ও কার্যপরিধি নির্ধারণ করা হবে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘আমি আশাবাদী, আমরা একটা জায়গায় পৌঁছাতে পারব। জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে একটা জায়গায় পৌঁছানো যাবে। জুলাই আন্দোলনের কথা তুলে ধরে আলী রীয়াজ বলেন, ‘এক বছর আগে আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নেমেছিলাম। আজ এক বছর পর রাষ্ট্রকাঠামো পরিবর্তনের জন্য একতাবদ্ধ হয়ে আলোচনা করছি। যেন রাষ্ট্রকাঠামো পরিবর্তনের মাধ্যমে একটি জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র আমরা তৈরি করতে পারি। যেন নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষিত হয়। গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে না হয় আমাদের। এটা আপনাদের অবদান, আপনাদের কর্মীদের অবদান, নাগরিকদের অবদান।’ তিনি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার সরকারের পতন জনগণের সাফল্য। জনগণের এ সাফল্য, একপর্যায়ে থেমে গেলে হবে না। এটাকে সুরক্ষিত করতে হবে। সে সুরক্ষার উপায় হচ্ছে সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া। সবার সহযোগিতায় একটা অবস্থানে পৌঁছানো যাবে। আলী রীয়াজ আরও বলেন, ‘কখনো কখনো আলোচনায় অগ্রসর হই, আবার কখনো কখনো যতটা হওয়ার, তা না হতে পেরে হতাশ হই। তবু সবাই চেষ্টা করলে সবার সহযোগিতায় আশা করি আমরা একটা অবস্থানে পৌঁছাতে পারব।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সংস্কারের বিষয়ে সর্বোচ্চ সহায়তা করছে বিএনপি। নির্বাচন যাতে বিলম্বিত না হয়, সেজন্য আলাদা কমিশনের পরিবর্তে আইন সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার প্রস্তাব দেন তিনি।
জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, একটা বিষয়ে আমরা প্রায়ই ঐকমত্যে পৌঁছেছি। সেটা হচ্ছে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণে স্বচ্ছতার জন্য একটি বিশেষায়িত কমিটি হবে। এই কমিটি নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করবে, সুপারিশ করবে। তিনি বলেন, ‘এই কমিটিকে দুই ভাগে ভাগ করা হবে। প্রথম হচ্ছে, আসন্ন নির্বাচনের জন্য একটা বিশেষজ্ঞ কমিটি হবে নির্বাচন কমিশনের আওতায়। যেহেতু সময় কম। এর ভেতরে ভিন্ন কোনো চিন্তা করার সুযোগ নেই। সেজন্য ত্রয়োদশ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন নিজেই একটা বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করবে। তাদের সুপারিশক্রমেই তারা সীমানা পুনর্নির্ধারণ করবে। তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন, গত ১৫ বছরে বহু নির্বাচনি এলাকাকে তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। আরও স্থায়ীভাবে আরেকটা বিষয়ে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছি। সংবিধানে একটা বিশেষজ্ঞ কমিটির বিষয়ে উল্লেখ থাকবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বুধবারের বৈঠকে ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে। সেখানে বিএনপি, জামায়াত ছাড়াও রয়েছে- জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, গণসংহতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি এবং আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি অন্যতম। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান এবং মো. আইয়ুব মিয়া। আলোচনার শুরুতে জুলাই শহীদদের স্মরণে সবাই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। কমিশন থেকে আরও জানানো হয়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে কয়েকটি বিষয় আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ এবং উচ্চকক্ষের নির্বাচন প্রক্রিয়া, দায়িত্ব ও ভূমিকা। আজ বৃহস্পতিবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবারও বৈঠকে বসবে কমিশন।
