Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

এনসিপির সমাবেশে নাহিদ ইসলাম

জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে টালবাহানা করা হচ্ছে

Icon

দিনাজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে টালবাহানা করা হচ্ছে

ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ নিয়ে টালবাহানা করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে-জুলাই ঘোষণাপত্রের নাকি সাংবিধানিক ভিত্তি থাকবে না। কিন্তু জুলাই ঘোষণাপত্র অবশ্যই সংবিধানে যুক্ত করতে হবে। শুক্রবার বিকালে দিনাজপুর ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে এনসিপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যারা অংশ নিয়েছেন, যারা শহীদ হয়েছেন- তাদের মর্যাদা, স্বীকৃতি ও রাজনৈতিক নিরাপত্তা জুলাই ঘোষণাপত্রে এবং বাংলাদেশের নতুন সংবিধানে থাকতে হবে। তিনি বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র সংবিধানে যুক্ত করার দাবিতে ৩ আগস্ট ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করা হবে। এ সমাবেশের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে আমরা আমাদের প্রাপ্য বুঝে নেব।

দিনাজপুরকে উত্তরবঙ্গের অর্থনীতি এবং সাংস্কৃতিক রাজধানী উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, খাদ্যশস্যের জন্য দিনাজপুর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা দেখি যে কৃষক ধান উৎপাদন করেন সেই কৃষক ধানের ন্যায্যমূল্য পান না। সিন্ডিকেট ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দুর্নীতির কারণে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন। যে দিনাজপুর সারা দেশের মানুষকে খাওয়াতে সক্ষমতা রাখে, সেই দিনাজপুরের কৃষকরা তাদের নিজেদের ছাওয়ালকে (সন্তানকে) খাওয়াতে পারেন না। এ বৈষম্যের দেশ আমরা আর চাই না। অর্থনৈতিক ও আঞ্চলিক বৈষম্য আমরা বাংলাদেশ থেকে চিরতরে বিতাড়িত করতে চাই।

সমাবেশে এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি বিভাগে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন করতে হবে। উত্তরবঙ্গের মানুষকে বিচার পেতে আর ঢাকার হাইকোর্টে যেতে হবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে নতুন বন্দোবস্তের ধারণা নিয়ে, নতুন বন্দোবস্তের লড়াই নিয়ে এনসিপির আত্মপ্রকাশ হয়েছে। মৌলিক সংস্কার বাস্তবায়ন করে, বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের পথে আরেক ধাপ এগিয়ে নিতে এনসিপির যাত্রাকে কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। এনসিপির যাত্রাপথে সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি। সমাবেশে বক্তব্য দেন উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, ডা. আব্দুল আহাদ, রফিকুল ইসলাম কনক, আব্দুল মুনীম, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আসাদুল্লাহ গালিব, শ্রমিক নেতা আকিব উদ্দিন ও যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাদিয়া ফারজানা দিনা প্রমুখ।

কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন-দলটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনীম জারা, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ, দিনাজপুরের সমন্বয়ক একরামুল হক আবির প্রমুখ। এর আগে দিনাজপুরের ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ ময়দান থেকে পদযাত্রা শুরু করেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। দিনাজপুর শহরের কাচারি মোড়, রেলওয়ে স্টেশন চত্বর, বাহাদুরবাজার, লিলি মোড়, জেলরোড সড়কে মিছিল ও গণসংযোগ করে দিনাজপুর ইনস্টিটিউটের সমাবেশে তারা উপস্থিত হন।

হিন্দুদের সঙ্গে ইনসাফ করেনি আ.লীগ : নাহিদ ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ বারবার বলেছে তারা অসাম্প্রদায়িক দল। কিন্তু তারা কখনই সনাতন (হিন্দু) ধর্মের মানুষের সঙ্গে ইনসাফ করেনি। বিগত সময়ে সনাতন ধর্মের ভাইয়েরা অনেক নির্যাতিত হয়েছেন, তাদের জমি দখল করে নেওয়া হয়েছে। তারা কোনো বিচার পাননি। আমরা চাই-নতুন বাংলাদেশে ইনসাফ ও সম্প্রীতির ভিত্তিত্তে সবাই সব সুযোগ-সুবিধা পাবে। শুক্রবার সকালে পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলা শহরের ফকিরগঞ্জ বাজারে এনসিপির উপজেলা কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসাবে বৃহস্পতিবার এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা পঞ্চগড়ে আসেন।

নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, বাংলাদেশে গুটিকয়েক মানুষ স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদ তৈরি করে বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। একটা মাত্র পরিবার দেশের জমিদারি নিয়েছিল। সেই জমিদারি আমরা গণ-অভ্যুত্থানে ভেঙে দিয়েছি। নতুন করে কোনো জমিদার, স্বৈরাচার, ফ্যাসিস্ট, চাঁদাবাজ তৈরি হলে তার বিরুদ্ধেও আমাদের লড়াই করতে হবে। তার বিরুদ্ধেও কথা বলতে হবে। কোনো অন্যায় জুলুম দেখলে সেটার প্রতিবাদ করতে হবে। বাংলাদেশে নতুন করে কোনো ভয়ের সংস্কৃতি আমরা তৈরি হতে দেব না। তিনি বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর আমাদের প্রত্যাশা ছিল-দেশটাকে আমরা বৈষম্যহীন, ইনসাফ ও সম্প্রীতির ভিত্তিত্বে নতুন করে গড়ব। এ দেশ হবে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসমুক্ত দেশ। সভায় এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ ও উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বক্তব্য রাখেন। পরে তারা ঠাকুরগাঁওয়ের উদ্দেশে রওয়ানা দেন।

যে কোনো মূল্যে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করা হবে : শুক্রবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও জেলা শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড গোলচত্বরে ‘জুলাই পদযাত্রা’র অনুষ্ঠানে নাহিদ ইসলাম বলেন, দেশে মৌলিক সংস্কার ও নতুন সংবিধানের জন্য আমরা লড়াই করছি। এ আকাঙ্ক্ষার মধ্যদিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। তিনি আরও বলেন, এটা হাসিনার বাংলাদেশ নয়, এটা ছাত্র-জনতার বাংলাদেশ। বিভিন্ন সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশিদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। অবৈধভাবে একের পর এক পুশইন করা হচ্ছে। আমরা এর জবাব দেব ও যে কোনো মূল্যে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করব। সীমান্তে হত্যা বন্ধে যে কোনো পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত এনসিপি।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ঠাকুরগাঁওসহ সব জেলার সার্বিক উন্নয়ন হলে আমরা সেটাকে উন্নয়ন বলব। শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক উন্নয়ন করলে চলবে না। প্রত্যন্ত অঞ্চলেও উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনীম জারা, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী প্রমুখ। এদিকে, সাংবাদিকদের সঙ্গে এনসিপি নেতাদের মতবিনিময়কালে একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে। এরপর সেখান থেকে এনসিপি নেতারা সরে পড়েন। এরপর তারা ঠাকুরগাঁয়ের পীরগঞ্জের উদ্দেশে রওয়ানা দেন। পীরগঞ্জ চৌরাস্তায় পথসভায় নাহিদ ইসলাম বক্তব্য দেন। এরপর ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’য় অংশ নিতে তারা দিনাজপুর অভিমুখে রওয়ানা দেন।

ঠাকুরগাঁওয়ে এনসিপির গাড়িবহরে হামলা : ঠাকুরগাঁওয়ে এনসিপির গাড়িবহরের একটি মাইক্রোবাসে ভাঙচুর ও মারামারির ঘটনার জেরে এক হোটেল কর্মচারীকে আটক করে পুলিশ। পরে জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। শুক্রবার দুপুরে শহরের টাঙ্গন ব্রিজ এলাকা অতিক্রমের সময় মাইক্রোবাসটিকে পেছন দিক থেকে একটি আন্তঃজেলা বাস ধাক্কা দেয়। এতে গাড়ির জানালার কাচ ভেঙে যায় এবং এক কর্মী ও চালক সামান্য আহত হন। এ ঘটনার পর এনসিপি নেতাকর্মীরা গাড়ি থামিয়ে বাসচালক ও হেলপারের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা শুরু করেন। এ সময় গাউছিয়া হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের কর্মচারী ইরফান উত্তেজিত হয়ে মাইক্রোবাসের চাবি নেন এবং কিছু সময় পর তা আবার ফেরত দেন। তাকে আটক করে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং এনসিপির এক নেতার জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেয়। এনসিপির ঠাকুরগাঁও জেলা মুখপাত্র মোহাম্মদ রায়হান অপু বলেন, ঘটনাটি অনাকাক্সিক্ষত ছিল। ইরফান মূলত ভুল বোঝাবুঝিতে জড়িয়ে পড়ে। পরে নিজেই চাবি ফিরিয়ে দেন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম