Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

জাতীয় পার্টির তিন নেতাকে অব্যাহতি

নতুন মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী

Icon

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জাতীয় পার্টির তিন নেতাকে অব্যাহতি

দলের জ্যেষ্ঠ তিন নেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মো. মুজিবুল হক চুন্নুকে অব্যাহতি দিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। একই সঙ্গে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে দলের নতুন মহাসচিব পদে নিয়োগ দিয়েছেন তিনি। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সম্মেলন ঘিরে দলের দুই পক্ষের উত্তেজনার মধ্যে এই সিদ্ধান্ত জানালেন জিএম কাদের। সোমবার জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের প্রেসসচিব খন্দকার দেলোয়ার জালালী বার্তাটি পাঠিয়েছেন। সাবেক সংসদ-সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এতদিন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। 

মো. মুজিবুল হক চুন্নুকে মহাসচিবের পদ থেকে সোমবার অব্যাহতি দেওয়ার এক ঘণ্টার মাথায় তিন নেতা সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মো. মুজিবুল হক চুন্নুকে দলীয় সব পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দেন জিএম কাদের। একই সঙ্গে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত জানিয়ে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। 

দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘জাতীয় পার্টির গত ২৫ জুনের মতবিনিময় সভায় জেলা, মহানগর কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মো. মুজিবুল হক চুন্নুর বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনেন এবং তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। ২৮ জুন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সভায় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ওই তিন নেতাকে সব পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ অবস্থায় পার্টির চেয়ারম্যান গঠনতন্ত্রের ক্ষমতাবলে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মহাসচিব মো. মুজিবুল হককে অব্যাহতি দিয়েছেন।’ এ সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

এতদিন জাতীয় পার্টির মহাসচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন আরেক সাবেক সংসদ-সদস্য মো. মুজিবুল হক চুন্নু। ২০২১ সালের ২ অক্টোবর দলটির তৎকালীন মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু মারা যান। এরপর ৯ অক্টোবর সেই পদে মো. মুজিবুল হককে নিয়োগ দেন জিএম কাদের। এখন দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের দুই পক্ষে উত্তেজনার মধ্যে তার জায়গায় ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে মহাসচিব পদে আনলেন জিএম কাদের। গত মাসের ২৮ জুন বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। মিলনায়তন না পাওয়ার কথা উল্লেখ করে ১৬ জুন জিএম কাদের সম্মেলন স্থগিত করেন। কিন্তু দলের দুই কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের নেতৃত্বে জ্যেষ্ঠ নেতাদের একটি অংশ আগের ঘোষিত তারিখেই সম্মেলন করার ঘোষণা দেন। যদিও পরে তারা সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব পদে নিয়োগ পাওয়া ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী সুপ্রিমকোর্টের একজন আইনজীবী। ২০১৮ সালের মার্চে গাইবান্ধা-১ আসনের উপনির্বাচনে সংসদ-সদস্য হয়েছিলেন। এরপর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের বিতর্কিত নির্বাচনেও তিনি একই আসন থেকে সংসদ-সদস্য হন। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়নে নির্বাচন করে হেরে যান তিনি। ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী একসময় জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও দলের অতিরিক্ত মহাসচিব এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন।

মহাসচিব হিসাবে নিয়োগ দেওয়ায় দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী। যুগান্তরকে দেওয়া তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘দলের মহাসচিব নিযুক্ত করায় আমি চেয়ারম্যানের কাছে কৃতজ্ঞ। তৃণমূলকে সঙ্গে নিয়ে তাদের মতামতে দলকে সাজাতে চাই। একই সঙ্গে আমাদের হারানো নির্বাচনি আসন পুনরুদ্ধার করব। আমি জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে যাব। যে উপজেলা পদ্ধতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রবর্তন করেছিলেন, সেই উপজেলা পর্যায়ে জাতীয় পার্টিকে রিভাইব করব। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমরা একটা নতুন জাতীয় পার্টি গড়ে তুলে সুন্দর বাংলাদেশ গঠনে দৃঢ়প্রত্যয়ে এগিয়ে যাব। 

এদিকে জাতীয় পার্টির দুই জ্যেষ্ঠ নেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার মো. মুজিবুল হক চুন্নুকে বাদ দিয়ে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে মহাসচিব পদে নিয়োগের বিরোধিতা করে সোমবার গণমাধ্যমে যৌথ বিবৃতি দেন। তারা বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মুজিবুল হক চুন্নুই জাতীয় পার্টির বৈধ ও সম্মানিত মহাসচিব। ঘোষিত কাউন্সিলের আগে চেয়ারম্যানের একক সিদ্ধান্তে কোনো নিয়োগ বা বহিষ্কার কার্যকর নয়। মো. মুজিবুল হক চুন্নুকে কোনো কারণ ছাড়াই অব্যাহতি দিয়ে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে একক সিদ্ধান্তে মহাসচিব নিয়োগ চরম অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক ও গঠনতন্ত্রের সরাসরি লঙ্ঘন।

ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার আরও বলেন, ‘জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়ামের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ইতোমধ্যে জাতীয় কাউন্সিল ঘোষিত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোনো প্রকার নিয়োগ, অব্যাহতি বা বহিষ্কার সম্পূর্ণ বেআইনি ও অবৈধ। এই ধরনের সিদ্ধান্ত দলের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে ভেঙে ফেলছে। আমরা বিস্মিত যে, দায়িত্বশীল প্রেসিডিয়াম সদস্যদের নিয়মিত চাঁদা প্রদান সত্ত্বেও মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে যেভাবে অব্যাহতির চিঠি দেওয়া হয়েছে, তা শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নয়, বরং নীতিহীন ও সম্মানহানিকর আচরণ।’ দুই নেতা বলেন, ‘জাতীয় পার্টিকে ব্যক্তি নয়, গঠনতন্ত্র ও আদর্শে পরিচালিত হতে হবে। দলে গণতন্ত্র, শৃঙ্খলা ও সম্মিলিত নেতৃত্ব ফিরিয়ে আনাই এখন সময়ের দাবি।’ তারা জাতীয় পার্টির ত্যাগী ও আদর্শবান নেতাকর্মীদের প্রতি অন্যায় এবং একনায়কতান্ত্রিক আচরণের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

জাতীয় পার্টির সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন আহ্বান : আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় বাড়ি নং-১২১/ডি, রোড নং-৪৪, গুলশান-২ ঢাকা হাওলাদার টাওয়ারের চতুর্থ তলার কনফারেন্স হলে জাতীয় পার্টির চলমান পরিস্থিতি ও আগামী দিনের বৃহত্তর ঐক্য গড়ার লক্ষ্যে করণীয় বিষয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছে। সোমবার রাতে জাতীয় পার্টির প্যাডে দেওয়া মো. মুজিবুল হক চুন্নু স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। 

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারসহ পার্টির শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন।’


Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম