সংবাদ সম্মেলনে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ
চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত বেআইনি আমরা বহাল
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
জাতীয় পার্টি থেকে অব্যাহতি পাওয়া সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, দলের চেয়ারম্যানের (জিএম কাদের) সিদ্ধান্ত বেআইনি। আমরা এখনো স্বপদে বহাল আছি। আমরা সবাই জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। চেয়ারম্যানের প্রতিটি সিদ্ধান্ত স্বৈরাচারী। তিনি আরও বলেন, জিএম কাদের রাতের অন্ধকারে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। রাতের অন্ধকারে জোর করে সিগনেচার নিয়েছিলেন। তখন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সাহেব খুব অসুস্থ ছিলেন। গণতান্ত্রিক কোনো দলের কেউ রাতের অন্ধকারে ক্ষমতা হস্তান্তর করে না। তিনি (এরশাদ) অসুস্থ ছিলেন, জোর করে তার কাছ থেকে ক্ষমতা নিয়েছিলেন।
মঙ্গলবার গুলশানে জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত নেতাদের উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এ সময় জিএম কাদেরকে উদ্দেশ করে বলেন, সম্মেলন করে সিদ্ধান্ত নিন, কাউন্সিলে আমরা যেতে চাই। আপনি কেন সম্মেলন করতে চান না? কাউন্সিলের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হোক। তিনি বলেন, আমরা এখনো স্বপদে বহাল রয়েছি, আমাদের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বহাল রয়েছেন। ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর নিয়োগ সম্পূর্ণ অবৈধ উল্লেখ করে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, জিএম কাদের সোমবার প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে প্রেসিডিয়ামের সভার যে রেফারেন্স দিয়েছেন সেই বৈঠকে প্রথমত কোরাম হয়নি। আর গঠনতন্ত্রের ২০/৩(খ) ধারায় বলা হয়েছে, মহাসচিব চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে প্রেসিডিয়ামের সভা আহ্বান করবেন। আলোচ্য সূচি নির্ধারণ করবেন মহাসচিব।
ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে আমরা গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজ করেছি। আমরা পার্টির বিরুদ্ধে কী কাজ করেছি। আমরা বিবৃতি দিয়ে বলেছি ২০(ক) ধারা বাতিল করতে হবে। হিসাবে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এবং বৃহত্তর ঐক্যের কথা বলেছি। আমাদের এগুলো কোনোভাবেই দলের গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজ হিসাবে গণ্য হতে পারে না। তিনি আরও বলেন, আমরা প্রায় সবাই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, প্রতিষ্ঠাকাল থেকে দলের সঙ্গে রয়েছি। আমিও এই পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলাম, আমাকে যখন ঘোষণা করা হয়, তখন পার্টির চেয়ারম্যান আমার পাশে বসে ঘোষণা দিয়েছিলেন। আর জিএম কাদের জোর করে স্বাক্ষর নিয়েছেন, একজন (হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ) মৃত্যুপথযাত্রী ছিলেন।
জাতীয় পার্টি থেকে অব্যাহতি পাওয়া কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, আমরা চেয়ারম্যানের চিঠি পেয়েছি। আপনার লাভ লেটার পেয়েছি। আমরা আপনাকে বহিষ্কার করিনি। আমরা আপনাকে ফেলে যেতে চাই না। আমরা দলকে শক্তিশালী করব। আবার বৃহত্তর ঐক্য করব। আপনাকে আবারও বলব, আসেন। আপনাকে আমরা সম্মান দেব। কিন্তু দল ভাঙবে, দল ছোট হবে, এই রাজনীতি আমরা করব না। তিনি এ সময় জিএম কাদেরের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেন, কাদের সাহেব কেন এই কাজটি করলেন? তার কী হয়েছিল? তার অসুস্থতা আছে না কি, এটা পরীক্ষা করার প্রয়োজন। কারণ মানুষকে ভালোবেসে আপন করা, সহযোগিতা নেওয়া, সহযোগিতা করা, এটা কঠিন কাজ। আর এখানে ইজি গো-ইন, আপনি আমাদের চিঠি দিলেন। আমরা চিঠি পেয়েছি। একজন সুস্থ রাজনীতিবিদ এই ধরনের কাজ করতে পারে না।
এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার আরও বলেন, আমাদের ঘামে, আমাদের পরিশ্রমে, আমাদের টাকায়, আমাদের সারা দেশের মানুষের কাছে যাওয়া, আমাদের আবেদনে মানুষ সাড়া দিয়েছে। আর আজকে আমাদের দল থেকে অব্যাহতি দিলেন। সারা দেশের মানুষ আজ অবাক। প্রাথমিক সদস্য পর্যন্ত আপনি রাখেননি। আপনি কোন সাল থেকে রাজনীতি করেছেন আমার জিজ্ঞাসা। এটা কী রাজনৈতিক আচরণ।
সংবাদ সম্মেলনে অব্যাহতি পাওয়া মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমি এমন কী অপরাধ করলাম, যার জন্য পার্টির প্রাথমিক সদস্যপদ পর্যন্ত অব্যাহতি দিলেন। তিনি বলেন, আমাকে পার্টির মহাসচিব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, কোনো আপত্তি নেই। আমার একটাই দুঃখ, ৮৬ সালে প্রথম সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হই। ১৯৮৭ সালে উপমন্ত্রী হয়েছি, তখন থেকে পার্টির সঙ্গে আছি। আমি যখন মন্ত্রী তখন জিএম কাদের একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের ডেপুটি ম্যানেজার। তিনি ১৯৯৬ সালে পার্টির সদস্যপদ গ্রহণ করেন। তার কোনো যোগ্যতা নেই, তার একমাত্র যোগ্যতা তিনি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাই। তারপরও তাকে নেতা মেনে রাজনীতি করেছি। জিএম কাদের ২৮ জন নেতাকে প্রমোশন দিয়েছেন, আমি জানি না।
সংবাদ সম্মেলনে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, জাতীয় পার্টি ছোট হতে হতে আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। একদম ধ্বংসের কিনারায়। সেখান থেকে জাতীয় পার্টিকে কীভাবে উদ্ধার করা যায়, কীভাবে জাতীয় পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারি, রাজনীতিতে আবার আমাদের অবস্থান ফিরে পেতে পারি, সেজন্য আজ এই সম্মেলন আহ্বান করা হয়েছে। তিনি বলেন, আনিস ভাই দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান, কী দেখছি, চট চট করে সবাইকে বাহির করে উনি (জিএম কাদের) একা থাকবেন। একা একটা কোম্পানি করা যায়, বউয়ের সঙ্গে সংসার করা যায়, রাজনীতি করা যায় না। সব চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক, উনি (জিএম কাদের) আমাদের দলের চেয়ারম্যান। একটা মাথা খারাপ লোক, অসুস্থ লোক, মেন্টালি সিক। তার সঙ্গে রাজনীতি করা যায় না।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন-প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সাইদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, এটিইউ তাজ রহমান, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, নাসরিন জাহান রতনা, নাজমা আক্তার, জহিরুল ইসলাম জহির, মোস্তফা আল মাহমুদ, মাসরুর মওলা, জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, মো. আরিফুর রহমান খান। চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা সরদার শাহজাহান, মো. হারুন আর রশিদ, ভাইস-চেয়াররম্যান আমানত হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, যুগ্ম মহাসচিব মো. বেলাল হোসেন, ফখরুল আহসান শাহজাদা, দপ্তর সম্পাদক এমএ রাজ্জাক খান, যুগ্ম সম্পাদক- শারমিন পারভীন লিজা, ডা. সেলিমা খান প্রমুখ।
