সাগরের ঢেউ কেড়ে নিল চবির তিন শিক্ষার্থীকে
একজনের লাশ উদ্ধার, দুজন নিখোঁজ
কক্সবাজার ও চবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
কক্সবাজারের হিমছড়ি সৈকতে সাগরে গোসল করতে নেমে প্রবল ঢেউয়ে ভেসে যান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) তিন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। দুজন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষে ভ্রমণের উদ্দেশে রোববার কক্সবাজার পৌঁছেন পাঁচ বন্ধু। সোমবার দিনভর ঘোরাঘুরির পর মঙ্গলবার সকালে কক্সবাজার শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে হিমছড়ি সৈকতে সাগরের পানিতে গোসলে নামেন। এরপর চোখের পলকে ঘটে যায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। পাঁচজনের মধ্যে তিনজন ভেসে যান উত্তাল স্রোতের টানে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বাকি দুই বন্ধু কোনো সাহায্য করতে পারেননি। আড়াই ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ভেসে ওঠে একজনের লাশ। তার নাম কেএম সাদমান রহমান (২২)। তিনি ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা ও কেএম আনিছুর রহমানের ছেলে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের এই শিক্ষার্থী থাকতেন শহীদ ফরহাদ হোসেন হলে। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন তার দুই বন্ধু অরিত্র হাসান ও আসিফ আহমেদ। তাদের বাড়ি বগুড়ায়।
উদ্ধার অভিযানে সংশ্লিষ্টরা জানান, দুর্ঘটনার পর নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে তল্লাশি শুরু করেন ফায়ার সার্ভিস, সি সেফ লাইফ গার্ড, পর্যটন পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের সদস্যরা। আড়াই ঘণ্টা পর একজনের লাশ পাওয়া যায়। এরপরও উদ্ধার অভিযান অব্যাহত আছে। বিকাল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত টানা সাড়ে ১০ ঘণ্টার চেষ্টায়ও আর কাউকে উদ্ধার করা যায়নি। প্রচণ্ড স্রোত ও আবহাওয়া বৈরী থাকায় উদ্ধার অভিযানও ব্যাহত হচ্ছে।
সি সেফ লাইফ গার্ডের আঞ্চলিক পরিচালক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, হিমছড়ি সৈকতে বর্তমানে একাধিক গুপ্তখাল (আন্ডারকারেন্ট চ্যানেল) সৃষ্টি হয়েছে, যা পর্যটকদের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। এই এলাকা জোয়ারের সময় ভয়াবহ রূপ নেয়। কিন্তু এখানে স্থায়ী কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থা নেই।
রামু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তৈয়বুর রহমান জানান, নিখোঁজ শিক্ষার্থীরা মেরিন ড্রাইভ সড়কের প্যাঁচার দ্বীপ এলাকায় একটি রিসোর্টে অবস্থান করছিলেন। ঘটনার কারণ অনুসন্ধান এবং বাকি নিখোঁজদের উদ্ধারে পুলিশের পক্ষ থেকেও তৎপরতা চলছে।
দুর্ঘটনার খবর শুনে মারা যাওয়া ও নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের সহপাঠী ও বন্ধুরা শোকে স্তব্ধ। ক্যাম্পাসেও শোকের আবহ বিরাজ করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের ছবি পোস্ট করে স্মৃতিচারণ করেছেন অনেকে।
এক বন্ধু পোস্টে লিখেছেন, ‘সাদমানকে আর কখনো হলে দেখব না, ভাবতেই পারছি না। ওর মতো প্রাণোচ্ছল একজন মানুষ এমনভাবে চলে যাবে। এটা মেনে নেওয়া কঠিন।’
ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক সাঈদ বিন কামাল চৌধুরী জানিয়েছেন, ১৩ জুলাই ওই ব্যাচের মৌখিক পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষা সম্ভবত পেছানো হতে পারে।
এদিকে হিমছড়ি, ইনানী ও লাবণী সৈকতে প্রতিবছরই পর্যটক হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। গুপ্তখাল, প্রবল স্রোত, পর্যাপ্ত উদ্ধার ব্যবস্থার অভাব-এসব ঘটনার জন্য দায়ী বলে মনে করছেন পর্যটন বিশ্লেষকরা।
কক্সবাজারের সচেতন মহলের প্রশ্ন-‘ট্যুরিজম নিয়ে সরকার প্রচুর বিনিয়োগ করছে, কিন্তু নিরাপত্তায় বিনিয়োগ কই?’
এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বর্তমানে সাগরে লঘুচাপের প্রভাবে স্রোত অস্বাভাবিকভাবে প্রবল। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগে থেকেই লাল পতাকা টানিয়ে সমুদ্রে নামার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অনেক পর্যটক নির্দেশনা উপেক্ষা করে সাগরে নামছেন। এমন অনভিপ্রেত দুর্ঘটনার জন্য আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’ পর্যটন পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (এডিশনাল ডিআইজি) আপেল মাহমুদ বলেন, ‘আমরা প্রতিদিনই পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নজরদারি বাড়াচ্ছি। কিন্তু সতর্কতা অবলম্বন না করলে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধ করা কঠিন হয়ে পড়ে।’
