জাতীয় সংসদ নির্বাচন
‘শাপলা’ বাদ দিয়ে প্রতীকের তালিকা চূড়ান্ত
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
বহুল আলোচিত ‘শাপলা’ বাদ দিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতীকের তালিকা চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ তালিকায় স্থান পেয়েছে ১১৫টি প্রতীক। এর মধ্যে দলীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের প্রতীক ‘নৌকা’ বহাল আছে। আরও রয়েছে মোবাইল ফোন, কলম, লাউ, লিচু, বেগুন, কুমির, কলা, কলস, হুক্কা ও মোড়ার মতো প্রতীকও। বুধবার এ তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার সংশোধনীতে নতুন এ তালিকা যুক্ত করে গেজেট প্রকাশের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বর্তমানে ইসির তালিকায় ৬৯টি প্রতীক রয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। জাতীয় ফুল ‘শাপলা’ প্রতীক চেয়ে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) দল নিবন্ধনের আবেদন করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটি শাপলা প্রতীকের পর কলম ও মোবাইল ফোন বিকল্প প্রতীক হিসাবে চেয়েছিল। ২২ জুন এ আবেদন জমা দিয়ে দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘৫ তারিখে গণ-অভ্যুত্থানে যেভাবে বাংলাদেশের মানুষের জয় হয়েছিল, আগামীর পার্লামেন্ট ভোটে এনসিপির শাপলা প্রতীকে পুরো দেশের মানুষ জয়জয়কার করে দেবে, এনসিপির নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠন হবে।’ এছাড়া ‘শাপলা’ প্রতীক চেয়ে আবেদন করেছিল মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য। দলটির নেতারা দলীয় প্রতীক ‘কেটলি’র পরিবর্তে শাপলা প্রতীক চেয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে।
জানা যায়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের খসড়া তালিকায় ‘শাপলা’ প্রতীক রেখে প্রস্তাব তোলা হয়। গত কয়েকদিন কমিশন তালিকাটি চূলচেরা বিশ্লেষণ করে ওই প্রতীক বাদ দিয়েছে। ইসির কর্মকর্তারা জানান, এনসিপি নিবন্ধন পেলেও ‘শাপলা’ প্রতীক পাওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। তবে দলটি চাইলে মোবাইল ফোন বা কলম প্রতীক নিতে পারবে। একইভাবে নাগরিক ঐক্য শাপলা প্রতীক পাবে না। জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বুধবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, সংসদ নির্বাচনের প্রতীকের তালিকা চূড়ান্ত করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য সই করে দিয়েছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন যে তালিকা চূড়ান্ত করেছে, সেখানে ‘শাপলা’ প্রতীক নেই।
জানা যায়, বর্তমানে জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় ‘দলীয়’ ও ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীদের’ প্রতীক পৃথক তফশিলে রয়েছে। সংশোধনীতে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতীক একই তফশিলে রাখা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অনুচ্ছেদ ২০-এর দফা (১) অধীনে ১১৫টি প্রতীক থেকে যে কোনো একটি প্রতীক বরাদ্দ করা যাবে।
ইসির চূড়ান্ত তালিকায় যে ১১৫টি প্রতীক রয়েছে সেগুলো হচ্ছে : আপেল, আনারস, আম, আলমিরা, ইগল, উটপাখি, উদীয়মান সূর্য, একতারা, কাঁচি, কবুতর, কলম, কলস, কলার ছড়ি, কাঁঠাল, কাপ-পিরিচ, কাস্তে, কেটলি, কুমির, কম্পিউটার, কলা, কুড়াল, কুলা, কুঁড়ে ঘর, কোদাল, খাট, খেজুর গাছ, গরুর গাড়ি, গাভি, গামছা, গোলাপ ফুল, ঘণ্টা, ঘুড়ি, ঘোড়া, চাকা, চার্জার লাই, চাবি, চিংড়ি, চেয়ার, চশমা, ছড়ি, ছাতা, জগ, জাহাজ, টিউবওয়েল, টিফিন ক্যারিয়ার, টেবিল, টেবিল ঘড়ি, ট্রাক, টেলিফোন, টেলিভিশন, ডাব, ঢেঁকি, তবলা, তরমুজ, তারা, থালা, দাঁড়িপাল্লা, দালান, দেওয়াল ঘড়ি, দোয়াত-কলম, দোলনা, ধানের শীষ, নোঙর, নৌকা, প্রজাপতি, ফুটবল, ফুলকপি, ফুলের টব, ফুলের মালা, ফ্রিজ, বক, বাঘ, বই, বটগাছ, বাঁশি, বেঞ্চ, বেগুন, বাইসাইকেল, বালতি, বেলুন, বৈদ্যুতিক পাখা, মই, মগ, মাইক, মোটরগাড়ি, মশাল, ময়ূর, মাছ, মাথাল, মিনার, মোমবাতি, মোবাইল ফোন, মোড়া, মোরগ, রকেট, রিকশা, লাউ, লিচু, লাঙ্গল, শঙ্খ, সোনালি আঁশ, সেলাই মেশিন, সোফা, সিংহ, স্যুটকেস, হরিণ, হাত (পাঞ্জা), হাতঘড়ি, হাতপাখা, হাঁস, হাতি, হাতুড়ি, হারিকেন, হুক্কা ও হেলিকপ্টার। ইসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, জামায়াতে ইসলামীকে নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ায় দলটির প্রতীক দাঁড়িপাল্লা তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে ৫১টি নিবন্ধিত দল রয়েছে। ওই ৫১টি দলের জন্য ৫১টি প্রতীক সংরক্ষিত থাকবে। বাকি ৬৪টি প্রতীক নতুন নিবন্ধন পেতে যাওয়া দল এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য রাখা হচ্ছে। আর আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিল না হয়ে স্থগিত থাকায় নৌকা প্রতীক তালিকা বহাল রাখা হয়েছে।
শাপলা প্রতীক না হলে ধানের শীষও প্রতীক হতে পারবে না-সারজিস : শাপলা যদি রাজনৈতিক দলের প্রতীক না হতে পারে তাহলে ধানের শীষও প্রতীক হতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। বুধবার রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
সারজিস আলম লিখেছেন, ‘শাপলা জাতীয় প্রতীক নয়। জাতীয় প্রতীকের একটি অংশ। একইভাবে ধানের শীষ, পাটপাতা এবং তারকাও জাতীয় প্রতীকের অংশ।’ তিনি বলেন, ‘শাপলা যদি রাজনৈতিক দলের প্রতীক না হতে পারে তাহলে ধানের শীষও প্রতীক হতে পারবে না। আর যদি জাতীয় প্রতীকের যে কোনো একটি অংশ রাজনৈতিক দলের প্রতীক হতে পারে তাহলে শাপলাও হতে পারবে। জাতীয় ফুল হিসাবে শাপলার প্রতীক হতে আইনগত বাধা নেই। কারণ জাতীয় ফল কাঁঠাল অলরেডি মার্কা হিসাবে আছে। আর যদি মার্কা দেখেই ভয় পান তাহলে সেটা আগে থেকেই বলেন!’
