হাসিনার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন বিষয়ে আদেশ আজ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
জুলাই অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন বিষয়ে আজ আদেশ দেবেন ট্রাইব্যুনাল-১। বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলাটি আদেশের জন্য রয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম কোনো মামলা, যা চার্জ গঠন বিষয়ে আদেশ হচ্ছে। মামলায় অন্য দুই আসামি হচ্ছেন-সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং অভ্যুত্থান সময়ের আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় শেখ হাসিনাকে নির্দেশদাতা হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগ গঠন হলে এর মধ্যে দিয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম কোনো মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হবে। এই মামলায় গ্রেফতার একমাত্র আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আজ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে বলে প্রসিকিউশন জানিয়েছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম মামলার বিচারে জুলাই অভ্যুত্থানে ভুক্তভোগী পরিবারসহ সারা দেশের মানুষের দৃষ্টি এখন ট্রাইব্যুনালের দিকে।
প্রসিকিউটর বিএম সুলতান মাহমুদ যুগান্তরকে বলেন, শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশের জন্য আজ দিন ধার্য আছে। আশা করছি শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হবে। এর মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হবে। বৃহস্পতিবার এ মামলার চার্জ গঠন হলে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হতে পারে। তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হবে কিনা, এ নিয়ে কেউ কেউ নানা সমালোচনা করেছিলেন। সব সমালোচনাকে পেছনে ফেলে ট্রাইব্যুনাল, প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থা স্বচ্ছতার সঙ্গে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আশা করছি এখানে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। শহীদ পরিবারগুলো ন্যায়বিচার পাবে।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে গত বছরের জুলাইয়ে আন্দোলন শুরু হয়। সারা দেশে তীব্র গতিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। টানা ৩৬ দিনের সেই গণ-অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এর ধারাবাহিকতায় ওইদিন পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণ-অভ্যুত্থানে প্রায় দেড় হাজার মানুষ মারা যান এবং আহত হন ২৫ হাজারেরও বেশি।
অভিযোগে বলা হয়, ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা ও সহায়তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে হামলা চালায়। এর মাধ্যমে হত্যা, হত্যার চেষ্টা, নির্যাতন এবং অন্যান্য অমানবিক আচরণ করা হয়। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি আন্দোলনকারীদের দমনে হেলিকপ্টার, ড্রোন এবং লেথাল উইপন (মারাত্মক মারণাস্ত্র) ব্যবহারের নির্দেশ দেন। আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন এই নির্দেশ বাস্তবায়নে তাদের অধীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেন। এর মাধ্যমে আসামিরা অপরাধ সংঘটনের নির্দেশ প্রদান, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেছে।
অভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন শাহরিয়ার খান আনাস। তার বাবা শাহরিয়ার খান পলাশ যুগান্তরকে বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাছে প্রত্যাশা শেখ হাসিনাসহ সব খুনির বিচার নিশ্চিত করতে হবে। ট্রাইব্যুনালের প্রতি আমাদের আস্থা এবং বিশ্বাস আছে। আশা করি ন্যায়বিচার পাব।
গত বছরের ১৮ জুলাই উত্তরার আজমপুরে সংঘর্ষের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনলাসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। ১৬ জানুয়ারি পরিবারের পক্ষ থেকে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেন মুগ্ধর ভাই স্নিগ্ধ। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেছি। আসামি হিসাবে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। বিচারের দিকে তাকিয়ে আছি আমরা।
ট্রাইব্যুনালের তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে, যে কোনো ভুক্তভোগী তদন্ত সংস্থা কিংবা চিফ প্রসিকিউটর বরাবর অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন। চিফ প্রসিকিউটরের কাছে দাখিলকৃত অভিযোগ পরবর্তীতে তদন্ত সংস্থায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে। প্রাপ্ত অভিযোগ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা প্রাথমিকভাবে যাচাই-বাছাই করে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করবে। তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তের প্রেক্ষিতে আসামি গ্রেফতারের জন্য ওয়ারেন্ট চাইতে পারেন। গ্রেফতারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ, সাক্ষ্যপ্রমাণ সংরক্ষণ বা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য অনুমতি চাইতে পারেন। এই ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালে একটি ‘মিস কেস’ চালু হয়। তদন্ত সম্পন্নের পরে তদন্ত কর্মকর্তা চিফ প্রসিকিউটর বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পরে চিফ প্রসিকিউটর ফরমাল চার্জ প্রস্তুত করে তা ট্রাইব্যুনালে দাখিল করবেন। ট্রাইব্যুনাল ফরমাল চার্জ গ্রহণের পরে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচারিক কার্যক্রম শুরু করবেন। যেসব আসামি গ্রেফতার আছেন, তাদের আইনজীবীদের প্রস্তুতির জন্য নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হবে। প্রসিকিউশনের ওপেনিং স্টেটমেন্টের মাধ্যমে মূল কার্যক্রম শুরু হবে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই মামলা ছাড়াও ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগ শাসনামল সাড়ে ১৫ বছরে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অপর মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়। অভিযোগ দাখিলের পর প্রসিকিউশনের আবেদনে ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
