Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

কথোপকথনের রেকর্ড ফাঁস

শেখ হাসিনার নির্দেশেই প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার

বিবিসির ভেরিফিকেশন বিচারে স্বচ্ছতা বাড়াবে -প্রসিকিউটর তামিম

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শেখ হাসিনার নির্দেশেই প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার

শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত বছর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার একটি কথোপকথনের অডিও রেকর্ডিং যাচাই করে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। বিবিসির অনুসন্ধানী শাখা ‘বিবিসি আই’ ও বিবিসি বাংলা এই অনুসন্ধান চালিয়েছে বলে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বিবিসির যাচাই করা ওই রেকর্ডিং অনুসারে, শেখ হাসিনা তার নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার’ করার অনুমতি দিয়েছেন এবং ‘তারা (এসব বাহিনীর সদস্যরা) যেখানেই তাদের (আন্দোলনকারী) পাবে, তারা গুলি করবে।’

অজ্ঞাত একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে শেখ হাসিনার কথোপকথনের ফাঁস হওয়া অডিওটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ যে তিনি সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের গুলি করার জন্য সরাসরি অনুমতি দিয়েছিলেন। ফাঁস হওয়া অডিওটি সম্পর্কে জানেন এমন একটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, ১৮ জুলাই নিজের সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে শেখ হাসিনা ওই ফোনালাপটি করেন। চলতি বছরের মার্চের শুরুতে ফোনালাপের অডিওটি কে ফাঁস করেছে তা স্পষ্ট নয়। বিক্ষোভের পর থেকে হাসিনার কলের অসংখ্য ক্লিপ অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে যার অনেকগুলোই যাচাই করা হয়নি।

১৮ জুলাইয়ের ফাঁস হওয়া রেকর্ডিংয়ের কণ্ঠের সঙ্গে শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বরের মিল শনাক্ত করেছে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ। বিবিসি আলাদাভাবে ইয়ারশটের অডিও ফরেনসিক এক্সপার্টদের দিয়ে এই রেকর্ডিংয়ের সত্যতা যাচাই করেছে এবং তারা এটিতে এডিট করার বা কোনো রকম পরিবর্তন করার কোনো প্রমাণ পায়নি। অডিওটি কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে এমন সম্ভাবনাও খুবই কম বলে জানিয়েছেন তারা।

মানবাধিকার বা পরিবেশ রক্ষার ইস্যুতে অডিওসংক্রান্ত তদন্তের কাজ করে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ইয়ারশট। তারা বলছে, ফাঁস হওয়া রেকর্ডিংটি সম্ভবত এমন একটি ঘরে ধারণ করা হয়েছিল যেখানে ফোনকলটি স্পিকারে বাজানো হয়েছিল। কারণ এতে স্বতন্ত্র টেলিফোনিক ফ্রিকোয়েন্সি এবং ব্যাকগ্রাউন্ডে কিছু শব্দ ছিল। ইয়ারশটের বিশেষজ্ঞরা রেকর্ডিংজুড়ে ইলেকট্রিক নেটওয়ার্ক ফ্রিকোয়েন্সি বা ইএনএফ শনাক্ত করেছে, যে ফ্রিকোয়েন্সি অন্য একটি ডিভাইস থেকে অডিও রেকর্ডিংয়ের ক্ষেত্রে প্রায়ই উপস্থিত থাকে।

এটি এমন এক সূচক যার মানে হলো অডিওটিতে হেরফের করা হয়নি। তারা শেখ হাসিনার বক্তব্যে ছন্দ, স্বর এবং শ্বাসের শব্দ বিশ্লেষণ করেছে এবং ধারাবাহিক নয়েজের স্তরও শনাক্ত করেছে। অডিওতে কৃত্রিম কোনো পরিবর্তন আনার প্রমাণও খুঁজে পায়নি।

ব্রিটিশ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান বিবিসিকে বলেছেন, রেকর্ডিংগুলো তার (শেখ হাসিনার) ভূমিকা প্রমাণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এগুলো স্পষ্ট এবং সঠিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে এবং অন্যান্য প্রমাণ দ্বারা সমর্থিত। তিনি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) পরামর্শক হিসাবে কাজ করছেন যেখানে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে।

আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘বিবিসির উল্লেখ করা টেপ রেকর্ডিংটি সত্য কিনা তা আমরা নিশ্চিত করতে পারছি না’ এবং এই টেপটিতে কোনো ‘বেআইনি উদ্দেশ্য’ বা ‘অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়া’ দিতেও দেখা যায়নি।

আইসিটি মোট ২০৩ জনকে অভিযুক্ত করেছে যার মধ্যে ৭৩ জন গ্রেফতার রয়েছে। আন্দোলনে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও বাংলাদেশের আদালতে বিচার চলছে।

ডকুমেন্ট আকারে ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হবে : এদিকে শেখ হাসিনার ফোনালাপের আন্তর্জাতিক ভেরিফিকেশন মামলার বিচারে স্বচ্ছতা বাড়াবে বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। একই সঙ্গে এটি ডকুমেন্ট আকারে ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হবে বলেও জানান তিনি। ফাঁস হওয়া অডিওতে শেখ হাসিনার মারণাস্ত্র ব্যবহার করে নির্বিচারে গুলি চালানোর ফোনালাপ নিয়ে বিবিসির ভেরিফিকেশনের বিষয়ে বুধবার গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা জানান।

গাজী তামিম বলেন, শেখ হাসিনার বেশ কয়েকটি অডিও বক্তব্য এর আগে পুলিশের ক্রাইমস ইনভেস্টিগেশন টিম পরীক্ষা করেছে। তারাও ফরেনসিক সত্যতা পেয়েছে, এসব ফোনালাপ হাসিনারই। তারপরও আন্তর্জাতিক সংস্থা নতুন করে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে যে রিপোর্ট দিয়েছে, তা মামলার অভিযোগ প্রমাণে গুরুত্বপূর্ণ দলিল হবে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা মামলার অভিযোগ গঠনের বিষয়ে বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) আদেশ দেবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। শেখ হাসিনা ছাড়াও এ মামলার অন্য দুই আসামি হলেন-সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম