বিএফইউজে ও ডিইউজের সভা
নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতার পরিবর্তন করতে হবে: মির্জা ফখরুল
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশনা দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একই সঙ্গে দ্রুত নির্বাচন প্রস্তুতির কাজ শেষ করে ‘নির্বাচনি পরিবেশ’ তৈরি করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেনে তিনি। মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতার পরিবর্তন হবে। নির্বাচিত সরকারই দেশ চালাবে এবং সমস্যাগুলোর সমাধান করবে।’
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ‘জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সাংবাদিকের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও শহীদ সাংবাদিক পরিবারের সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচন তো এ দেশের মানুষ চায়, নির্বাচনের জন্য তো দেশের মানুষ প্রাণ দিয়েছে। কারণ সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে মানুষ একটা নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব চায়। যত দ্রুত সম্ভব সংস্কারের কাজগুলো করে আমরা নির্বাচিত সরকারের দিকে যেতে যাই, গণতন্ত্র উত্তরণের পথে যেতে যাই। নির্বাচন কমিশন দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব কাজ শেষ করে নির্বাচনি পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে পারবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ঐকমত্য কমিশন সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতিটি বিষয়ে মতামত দেওয়া হয়েছে। বেশির ভাগ বিষয়ের সঙ্গে বিএনপি একমত হয়েছে। তবে কতগুলো মৌলিক বিষয়ে বিএনপি একমত হতে পারেনি। ভবিষ্যতে সংসদে আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা শব্দের মারপ্যাঁচ করে কোথায়, কোনদিকে নিয়ে যেতে চান, সেটা বোঝার মতো ক্ষমতা আমাদের আছে। আমরা তিনবার সরকার চালিয়েছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ নিয়ে বিএনপির এ শীর্ষ নেতা বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে যোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে আলোচনা করার দরকার ছিল। তবে সময় এখনো পার হয়ে যায়নি। সীমান্তে হত্যা ও পুশইনের বিষয়ে তিনি বলেন, এসব বিষয় হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। জনমত সৃষ্টি করা দরকার। সরকার যেন ভারতের সঙ্গে দরকষাকষিতে চূড়ান্ত পর্যায়ে যায়। এছাড়া পানির হিস্যার বিষয়টি জোরালোভাবে দেখতে হবে। পানিবণ্টনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন বলেও জানান তিনি। অনুষ্ঠানে ফ্যাসিবাদবিরোধীসহ জুলাই আন্দোলনে শহীদ ৬৪ জন সাংবাদিকের ওপর শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন ডিইউজের সহসভাপতি রাশেদুল হক। অনুষ্ঠানে বিএফইউজের প্রয়াত সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর পরিবার এবং জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ছয় সাংবাদিকের পরিবারের হাতে সম্মাননা তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব। অনুষ্ঠানে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আমরা সংসদ নির্বাচন চাই। কারণ এ নির্বাচন না হলে দেশে একটা অন্ধকার শক্তি আবার ক্ষমতায় আসবে। অতএব আমাদের সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করতে হবে যাতে নির্বাচন হয়। মনে করি কোনো দলেরই আগামী নির্বাচনে টু-থার্ড সিট (আসন) পাওয়া উচিত নয়।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রক্রিয়ার দিকে আমরা এগিয়ে যেতে চাচ্ছি। কিন্তু বারবার একটি অপশক্তি সেই পথে বাধার সৃষ্টি করছে। এ ব্যাপারে আমাদের সচেতন হওয়ার সময় হয়েছে। আমাদের সামনে এখনো ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো বিরাজমান। রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বত্র ফ্যাসিবাদের প্রেত্মাতারা রয়েছে। নির্বাচন এলে পরাশক্তির যে খেলা হয় সেই খেলা আমরা দেখতে পাচ্ছি। তিনি বলেন, তিনটি শক্তি দেশ গঠনে ভূমিকা পালন করতে পারে। রাজনৈতিক দল, জনগণ ও গণমাধ্যম-এ তিনটির মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। জাতীয় রাজনীতিতে বিতর্ক হোক, মিডিয়ায় বিতর্ক হোক, কলামিস্টরা বিতর্ক করুক সমস্যা নেই। কিন্তু দলে দলে, ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে বিভেদ, আক্রোশ যেন না হয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। এ বিজয় ধরে রাখতে প্রয়োজন ধৈর্য ও সহনশীলতা। জনগণ সব দেখছে-তাদের বোকা ভাবা ঠিক হবে না। অতীতে যারা এ ধরনের দম্ভোক্তি করেছেন, তারা আজ ইতিহাসে নেই। বাংলার মানুষ এসব কখনো মেনে নেয়নি, ভবিষ্যতেও নেবে না।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার তার বক্তব্যের শুরুতেই জুলাই বিপ্লবে যারা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পাশাপাশি যারা গত ১৫ বছরে ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামে নানা পর্যায়ে নির্যাতিত হয়েছেন, গুম-খুনের শিকার হয়েছেন, মামলার ভারে ভারাক্রান্ত হয়েছেন তাদের সবার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ সময় জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে তার লেখা কবিতা ‘জুলাই বাংলাদেশ’ পাঠ করেন তিনি।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি মো. শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, দৈনিক আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বিএফইউজের সহসভাপতি একেএম মহসিন, কোষাধ্যক্ষ শহীদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক এরফানুল হক নাহিদ, ডিইউজের সহসভাপতি রাশেদুল হক, যুগ্ম-সম্পাদক দিদারুল আলম দিদার, সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খান, কোষাধ্যক্ষ খন্দকার আলমগীর হোসেন, প্রবাসী সাংবাদিক ইমরান আনসারী প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন ও জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
