Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

জাতীয় সংসদ নির্বাচন

আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা চায় ইসি

Icon

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা চায় ইসি

নির্বাচনে অনিয়ম হলে পুরো আসনের ভোট বাতিলের ক্ষমতা নিজেদের হাতে ফেরত চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের অষ্টম বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবসহ গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনী তোলা হয়। যদিও বিষয়টি নিয়ে সভায় খুব একটা আলোচনা হয়নি। আগামী সভায় বিষয়টি আলোচনা হওয়ার কথা জানিয়েছে ইসি। বর্তমানে অনিয়মের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র বন্ধ ও ভোট বাতিল করতে পারে ইসি।

তবে এ সভায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আইটিভিত্তিক পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন তারা। এজন্য ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্প নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সংসদ নির্বাচনের পর এবার স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।

ইসির হাতে থাকা দেড় লাখের বেশি ইভিএমের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে একটি কারিগরি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া বৈঠকে বিদ্যমান আইনেই ভোটার তালিকা আগামী সপ্তাহে প্রকাশের সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদিও ভোটার তালিকা আইন এখনো সংশোধন হয়নি। বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

তিনি বলেন, হলফনামায় তথ্য প্রদানে কড়াকড়ি করা হচ্ছে। প্রার্থীর ফৌজদারি মামলার বিবরণ শুধু ২০ বছর নয়, আজীবনের তথ্য হলফনামায় যুক্ত করতে হবে। এজেন্ডায় না থাকলেও সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সীমানা পুনর্নির্ধারণের খসড়া তালিকা কারিগরি কমিটি যাচাই-বাছাই করার পর তা শিগগিরই প্রকাশ করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, শাপলা প্রতীক চেয়ে দুটি দল- নাগরিক ঐক্য গত ১৭ জুন ও জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি গত ২২ জুন আবেদন করেছে। ইসি সবদিক বিবেচনা করে শাপলা প্রতীক তালিকাভুক্ত করেনি।

বৈঠকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় কর্মকর্তাদের প্রশাসনিক ও আর্থিক ক্ষমতা পুনঃঅর্পণ নিয়ে আলোচনা হয়। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার বলেন, এটা রিভাইজ করা হয়েছে। কিছু জিনিস ফাইন টিউন করা হয়েছে। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ওপরের কর্মকর্তাদের পদায়ন ও বদলি অনুমোদন করবে নির্বাচন কমিশন।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ডিপার্টমেন্টাল হেড, তার বদলিও কমিশন করবে। পাশাপাশি টেকনিক্যাল যে বা যারা আছেন তাদের ব্যাপারে আমরা একটা নীতিমালা করতে যাচ্ছি। ইসির কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে কর্মকর্তাদের পদায়ন ও বদলির ক্ষমতা প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিবের। তাদের ওই ক্ষমতায় লাগাম টানা হয়েছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে নির্বাচন ভবনে কমিশনের এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় চার কমিশনার, ইসির সিনিয়র সচিব, অতিরিক্ত সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা অংশ নেন। বেলা ১১টায় শুরু হয়ে বিকাল ৫টার পর সভা শেষ হয়। সূত্র জানায়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও), নির্বাচন কর্মকর্তা বিশেষ আইন, হলফনামা, ইসি সচিবালয় আইন, পোস্টাল ব্যালট, ইভিএম, দল নিবন্ধন অগ্রগতি, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, সীমানা নির্ধারণসহ সার্বিক ?বিষয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ আমলে নিয়ে তা বাস্তবায়নের পথে এগোচ্ছে ইসি।

পুরোনো ক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে চায় ইসি : নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, কোনো নির্দিষ্ট আসনের নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার জন্য আমরা আবেদন করেছি। পুরো আসনের নির্বাচন বন্ধের ক্ষমতা আমাদের আগে ছিল। সেটা বাদ দেওয়া হয়েছিল। এখন আমাদের কেন্দ্রের ভোট বাতিলের ক্ষমতা আছে। সবশেষ গাইবান্ধা-৫ আসনে উপনির্বাচনে ভোট বন্ধ করে দেয় তৎকালীন ইসি।

তিনি বলেন, কেন্দ্র বাতিলের ক্ষমতা ইসির ছিল; যেটা ছিল না সেটা হচ্ছে পুরা নির্বাচনি আসনের ভোট বন্ধ করার ক্ষমতা। যেটা এক সময় সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এটাও আমরা ফেরত পাওয়ার জন্য প্রস্তাব করেছি এবং আশা করি আমরা এটা ফেরত পাব।

প্রবাসীরা ভোট দেবেন পোস্টাল ব্যালটে : প্রবাসীদের ভোটাধিকার দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা এবার ভোট দেবে। ভোট পদ্ধতি পোস্টাল ব্যালট। সীমাবদ্ধতা কাটাতে আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ব্যালট। নিজ নিজ অবস্থান থেকে অনলাইন আবেদন করবে। সময় বাঁচাতে এবার ব্যালট পেপার বিশেষ ব্যবস্থায় ব্যালট প্রিন্ট হওয়ার পর ভোটারের কাছে পাঠানো হবে। এজন্য একটি প্রকল্প নেওয়া হবে। এর সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৮ কোটি টাকা।

হলফনামায় তথ্য সংযুক্তি : এ নির্বাচন কমিশনার জানান, প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমার সময় হলফনামায় কিছু নতুন সংযুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এক্ষেত্রে ফৌজদারি মামলার বিবরণ শুধু ২০ বছর নয়, বরং আজীবনের তথ্য হলফনামায় যুক্ত করতে হবে।

সম্পূরক ভোটার তালিকা প্রকাশ আগামী সপ্তাহে : এবার ২০ জানুয়ারি বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ ভোটার তালিকার তথ্য সংগ্রহ করে ইসি। এ হালনাগাদে বাদ পড়া প্রায় ৪৪ লাখ ভোটার নিবন্ধিত হয়েছে। সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শিগগির সম্পূরক ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ করা হবে বলে জানান নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।

এরপর দাবি, আপত্তি নিষ্পত্তি শেষে আগস্টের মধ্যে হালনাগাদ চূড়ান্ত প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেন, এবার প্রায় ৪৪ লাখ ৬ হাজার ৬০২ জন বাদ পড়া ভোটার আমরা পেয়েছি, যারা নতুন করে নিবন্ধন করেছে। মৃত ভোটার পেয়েছি ২১ লাখ ৩২ হাজার ৫৯০ জন। সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। আশা করি, সম্পূরক খসড়া তালিকা আগামী সপ্তাহে প্রকাশ হবে। বর্তমানে নারী ও পুরুষ ভোটারের ব্যবধান কমে এসেছে। এটা প্রায় ১৮ লাখ।

কারিগরি কমিটির মতামতের পর সীমানা পুনর্নির্ধারণ : নির্বাচন কমিশনার জানান, বৈঠকে এজেন্ডার বাইরে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, ২২১টা আসনের সীমানা পরিবর্তনের বিষয়ে কোনো আবেদন জমা হয়নি। আশা করি, আগামী সপ্তাহে পুরো বিষয়টি প্রকাশ হবে।

ঢাকায় আসন সংখ্যা খুব বেশি কমবে না বলে জানান। জনসংখ্যার ভারসাম্য আনার পাশাপাশি ভোটার সংখ্যার সমতা এনে আসন বিন্যাসের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ভোটার তালিকা, যেটা জনসংখ্যার বাই প্রডাক্ট। টেকনিক্যাল কমিটির কাছে রেফার করেছি। আগামী সপ্তাহে আপডেট জানাব। ইতোমধ্যে ঐকমত্য কমিশনে বিশেষায়িত কমিটির মাধ্যমে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের পরামর্শ এসেছে। বাস্তবতার নিরিখে কতটুকু করা যাবে, তা বিবেচনায় নিয়ে কাজ হচ্ছে।

নতুন দল নিবন্ধন : নতুন দলগুলোর নিবন্ধন আবেদন যাচাইয়ের প্রতিবেদন বৈঠকে জানানো হয়েছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যেসব দলের প্রাথমিক কাগজপত্র সঠিক রয়েছে, সেগুলোর মাঠ পর্যায়ের অফিস যাচাই করা হবে। আর যেসব দলের প্রাথমিক কাগজপত্র সঠিক নেই, সেগুলোকে সম্পূরক কাগজপত্র জমা দিতে ১৫ দিন সময় দেওয়া হবে।

অন্যান্য আলোচনা : বৈঠকে ইসি সচিবালয় আইন সংশোধন অধ্যাদেশ নিয়ে আলোচনা হয়। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের জন্য পৃথক সার্ভিস কমিশন গঠন হবে। সংস্কার কমিশনও এ ধরনের প্রস্তাব করেছে। এছাড়া নির্বাচন কর্মকর্তা বিশেষ আইনের সংশোধনী নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে নির্বাচনি অপরাধে যুক্ত কর্মকর্তাদের সাজা বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে। এছাড়া ইসির আইনজীবী প্যানেল ‘রিভাইজ’ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ নিয়েও আগামীতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

তরুণদের জন্য আলাদা ভোটকেন্দ্র করার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় ইসি বিব্রত কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, আমরা বিব্রত নই। ইয়াং জনগোষ্ঠীকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য এ ধরনের কোনো প্রস্তাব যদি থাকে আমরা অবশ্যই বিবেচনা করে দেখব।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম