থুতনি দিয়ে লিখে বাজিমাত হাত-পা বিহীন লিতুনের
মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি : যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
মুখ আর থুতনি দিয়ে লিখেই এসএসসি পরীক্ষায় বাজিমাত করেছে হাত-পা ছাড়াই জন্ম নেওয়া লিতুন জিরা। জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সে। লিতুনের এই ফলাফল নিশ্চিত করেছেন তার বাবা হাবিবুর রহমান। যশোরের মনিরামপুর উপজেলার সাতনল খানপুর গ্রামের প্রভাষক হাবিবুর রহমান ও জাহানারা বেগম দম্পতির মেয়ে লিতুন।
সমাজের ৮-১০ জন স্বাভাবিক শিশুর মতো বেড়ে উঠেনি সে। তার এই সাফল্যের পথ মোটেই মসৃণ ছিল না। একাগ্রতা, প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর শত প্রতিকূলতাকে জয় করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে সাফল্যের অগ্রযাত্রায় শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বাধা হতে পারেনি। অদম্য মেধাবী লিতুন পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-৫ ও বৃত্তি লাভসহ গান, কবিতা আবৃত্তি, রচনা প্রতিযোগিতায় উপজেলা, জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার পেয়েছে।
এ অভাবনীয় সাফল্যে তার বাবা-মা, শিক্ষকমণ্ডলীসহ প্রতিবেশীরা উচ্ছ্বসিত। আগামীর জন্য দোয়া চেয়েছে লিতুনসহ তার বাবা-মা। ভবিষ্যতে চিকিৎসক হয়ে সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও অসহায়দের সেবা করার ব্রত নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার অভিপ্রায় লিতুনের। সেই শিশুশ্রেণি থেকে আজ পর্যন্ত হুইল চেয়ারে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে হয় লিতুনকে। এজন্য কখনো বাবা আবার কখনো মা হুইল চেয়ার ঠেলে মেয়েকে বিদ্যালয়ে আনা-নেওয়া করতেন।
জানা যায়, উপজেলার নেহালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় লিতুন। ২০১৯ সালে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় মেধার স্বাক্ষর রেখে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয় নেহালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে। বিদ্যালয়ের প্রতিটি পরীক্ষায় সাফল্য ধরে রেখে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এই কৃতির স্বাক্ষর রাখলো লিতুন।
মেয়ের ভালো ফলাফলে মা জাহানারা জানান, ভূমিষ্ঠের পর দেখতে পান হাত-পা ছাড়াই কন্যাসন্তান জন্ম নিয়েছে। স্বজনসহ ও প্রতিবেশীদের অনেকেই মেয়েকে নিয়ে নানা কথা বলত। সব নীরবে হজম করেছেন আর শাড়ির আঁচলে চোখের পানি মুচেছেন। একটা সময় লিতুনের ভবিষ্যৎ নিয়ে চোখের পানি ফেলে সারারাত পার করেছেন তিনি। তারপরও দমেননি তিনি। একটু বড় হলে মেয়ের মেধা ও লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ তাকে আশান্বিত করে। আর এখন তো মেয়েকে নিয়ে গর্ব করেন তিনি।
লিতুন জানায়, ভবিষ্যতে সে চিকিৎসক হয়ে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীসহ আর্তমানবতার সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিতে চায়। এজন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছে লিতুন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলাম জানান, লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ, একাগ্রতা ও কঠোর পরিশ্রমই লিতুনের এই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। লিতুনের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করেন তিনি।
