Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

অদৃশ্য শত্রু ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে: তারেক রহমান

অন্যায়কারী যেই হোক আমরা প্রশ্রয় দেব না

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৩ জুলাই ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

অদৃশ্য শত্রু ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে: তারেক রহমান

অদৃশ্য শত্রু ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, আমি আজ থেকে ৮-৯ মাস আগে বলেছিলাম যে, অদৃশ্য শত্রু আছে। সেই অদৃশ্য শত্রু ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে এ দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বসহ মানুষের অধিকারের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল, ভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করেছিল, জনগণের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছিল।

শনিবার বিকালে রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে এক মতবিনিময় সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্রদলের ১৪২ শহীদ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। শহীদ পরিবারের সদস্যরা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে ভার্চুয়ালি কথা বলেন। এ সময় নানা প্রশ্নের উত্তর দেন তারেক রহমান।

পাশাপাশি শহীদ পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেন তিনি। ‘মব’ কালচার প্রসঙ্গে এক শহীদের বাবার প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান বলেন, দেশের গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ছিল, আমরা স্বৈরাচারকে বিতাড়িত করেছি। কিন্তু আমরা বিজয় অর্জন করলেও ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়নি। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে বারবার বলেছি, অন্যায়কারী যেই হোক আমরা প্রশ্রয় দেব না। সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সরকার কেন ব্যর্থ হচ্ছে? এই সরকারের কাছে আমাদের সবার প্রশ্ন, তারা কেন প্রশ্রয় দিচ্ছে, আশ্রয় দিচ্ছে?

দেশে সাম্প্রতিক সময়ে হত্যা ও নৈরাজ্যকারীদের সরকার প্রশ্রয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। মিটফোর্ডের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে ঘটনাটি ঘটেছে, আমরা খুব আশ্চর্যের সঙ্গে লক্ষ করেছি। স্ক্রিনে যাকে হত্যা করতে দেখা গেছে, তাকে কেন সরকার এখনো গ্রেফতার করেনি? আমরা কি তাহলে ধরে নেব যে, যারা বিভিন্নভাবে মব সৃষ্টি করে একটি পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে, সেখানে সরকার ও প্রশাসনের প্রশ্রয় আছে?

তিনি আরও বলেন, পুরান ঢাকায় যে ছেলেটি মারা গেছে, তার সঙ্গে হয়তো যুবদলের সম্পর্ক আছে। কিন্তু যে হত্যা করছে তাকে তো অন্য জায়গা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। তাকে ধরা হচ্ছে না। অন্যদের অ্যারেস্ট করা হলো। তাকে (খুনি) ধরা হচ্ছে না। এখন পর্যন্ত আসামিও বোধহয় করা হয়নি। কেন হয়নি? কেন ধরা হচ্ছে না? আমাদের পক্ষ থেকে তো একবারও বলা হয়নি যে, তমুককে ধরা যাবে না, অমুককে ধরা যাবে। আমরা বরাবর বলেছি, অন্যায়কারীর আইনের দৃষ্টিতে বিচার হবে। দলের সঙ্গে তার কী সম্পর্ক, তাতে কিচ্ছু যায় আসে না। তাকে দল কোনোরকম প্রশ্রয় দেবে না। কেউ যদি কোনো অন্যায় করে থাকে তাহলে প্রশাসন ধরছে না কেন?

একটি রাজনৈতিক দলের দিকে ইঙ্গিত করে তারেক রহমান বলেন, কোনো কিছু যখন লুকানোর চেষ্টা করা হয়, তখনই কিছু নন-ইস্যু সামনে আনা হয়। দেশ কারও একার নয়, এটা ২০ কোটি মানুষের। দেশ রক্ষা করতে হবে, দেশ নিয়ে সবার ভাবতে হবে। স্বৈরাচার বিদায় হলেও ষড়যন্ত্র শেষ হয়ে যায়নি। দেশ নিয়ে কে কী ভাবছে, অতীতে কী করেছে। দয়া করে তার দিকে নজর রাখুন। ষড়যন্ত্র আরও শুরু হচ্ছে, জোরেশোরে শুরু হচ্ছে। ’৭১, ’৯০ ও ’২৪-এর মতো আবারও সোচ্চার হতে হবে। কারা কী বলছে, আগে কী বলছে, ক্ষণে ক্ষণে কী বলছে, এটায় নজর রাখুন।

তিনি বলেন, প্রশাসনের মধ্যে এখনো স্বৈরাচারের ভূত লুকিয়ে আছে। এখন নতুন ভূত জন্ম হচ্ছে। সবাইকে বলব-সচেতন হোন, না হয় দেশকে টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে। ন্যায়কারী যেই হোক, কোনো প্রশ্রয় দেবে না বিএনপি। আগামী দিনে রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে মানুষের অধিকার রক্ষায় যারা প্রাণ দিয়েছেন, তাদের সর্বোচ্চ বিচার নিশ্চিত করার তাগিদ থাকবে বিএনপির।

শহীদদের বিচারের ব্যাপারে তিনি বলেন, গত ১৫-১৬ বছরে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের বহু নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। বিএনপি ছাড়াও অনেক দলের নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। এমনকি নিরপেক্ষ অনেক মানুষও শহীদ হয়েছেন দেশের মানুষের অধিকার রক্ষা করতে গিয়ে। আগামীতে বিএনপি দেশের মানুষের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করতে সক্ষম হলে অবশ্যই এসব হত্যার বিচার সুষ্ঠুভাবে হবে।

জুলাই সনদ প্রসঙ্গে বিএনপির অবস্থান জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, তিন মাস আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে লিখিত আকারে দিয়েছি। সেখানে আমাদের কথাগুলো আমরা জানিয়েছি। অনেকে বিচারের কথা বলছেন। বিচারের কথা শুধু আপনাদের কথা নয়। বিচারের কথা সমগ্র বাংলাদেশের প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক মানুষের দাবি। প্রত্যেকটি গণতান্ত্রিক মানুষের কথা। বিএনপি যখনই সুযোগ পাবে অবশ্যই প্রত্যেকটি হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করার চেষ্টা করবে। কারণ এটি আমাদের কমিটমেন্ট। জুলাই সনদ নিয়ে বাইরে কথা বলছে। কিন্তু সরকার থেকে কেন বলছে না যে, জুলাই সনদের ব্যাপারে বিএনপি তিন মাস আগেই জানিয়ে দিয়েছে। কেন বলছে না? কেন কিছু কিছু দল পুরো বিষয়টিকে ভ্রান্তভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করছে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, একটা কথা পরিষ্কার করে বলতে চাই, যে ঘটনাগুলো ঘটছে সরকারকে আহ্বান জানাব, অতিদ্রুত তদন্ত করে প্রকৃত যারা অপরাধী তাদের বের করে শাস্তির ব্যবস্থা করুন। অন্যথায় জাতি আপনাদের ক্ষমা করবে না। তিনি বলেন, বিএনপি কোনোদিন কোনো অন্যায়কে সমর্থন করেনি। কখনো করবেও না। বিএনপি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা অতীতেও করেছে এবং এবারও করবে। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল বক্তব্য দেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে কক্সবাজারে শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর বাবা বাদশা মিয়া, বরিশালে শহীদ তাহিদুল ইসলামের বোন ইশরাত জাহান, ঢাকা কাফরুলে শহীদ আকরাম খান রাব্বীর বাবা মো. ফারুক খান, ভোলায় শহীদ মো. মহির হোসেনের ভাই হাসনাইন, টাঙ্গাইলে শহীদ ইমন মিয়ার ভাই মো. সুজন, মাগুরায় শহীদ মেহেদী হাসান রাব্বীর স্ত্রী রুমি খাতুন, নোয়াখালীতে শহীদ শাহাদাত হোসেন শাওনের ভাই মো. হানিফ, নরসিংদীতে শহীদ তাহমিদ ভূঁইয়ার মামা জোবায়ের মান্নান, দিনাজপুরে শহীদ সুমন পাটোয়ারীর বাবা ওমর ফারুক, কক্সবাজারে শহীদ ওয়াসিম আকরামের বাবা মো. শফি আলম, নোয়াখালীতে শহীদ ইমতিয়াজ হোসেন রিয়াজের বাবা মো. হাবিবুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন। এদিকে শহীদ পরিবারের সদস্যদের স্মৃতিচারণকালে আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। কথা বলার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েছে শহীদ পরিবারের সদস্যরা। এতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবসহ উপস্থিত জনতার চোখেও পানি আসে।

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম